লাল-হলুদ ক্যান্ডিকর্ন by ফারুখ আহমেদ

নির্মেঘ নীল আকাশ। সকালবেলা মোটরসাইকেল চালিয়ে রমনা উদ্যানে চলে যাই। শিমুল-শ্যাডের সামনে একদল উদ্যান-পরিচর্যাকারী ঝরাপাতা একত্র করছেন। উদ্যান তখন সরগরম প্রাতর্ভ্রমণকারীদের পদচারণে। শীতে এ উদ্যানে ফুলের দেখা ঠিক তেমন একটা পাওয়া যায় না। রমনা ছেড়ে পুরান ঢাকার বলধা গার্ডেনে যাই। এখানে সাইকি ভাগ হয়ে সিবিলিতে গিয়ে ফুলের দেখা পাই। ফুলটি গত শীতেই প্রথম বলধা গার্ডেনে দেখি। এক বছরে আর কোথাও দেখিনি।


বলধার জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী দেশ-বিদেশ থেকে দুষ্প্র্রাপ্য সব ফুল এনে আদি ঢাকার এই বলধা গার্ডেন সাজিয়েছিলেন। এই ফুলটিও সেভাবেই এসেছে এ দেশে। গন্ধবিহীন ফুল। হলুদ-লালের চমৎকার মিশ্রণ। এমন আগুন ঝরানো ফুল সাধারণত শীতে চোখে পড়ে না।
শক্ত কাঁটাযুক্ত লতানো গাছ। এত বেশি কাঁটা যে ডাল ধরলেই ঘাই খেতে হয়। সে গাছের পাতা দেখতে অনেকটা শিটকিগাছের পাতার মতো গাঢ় সবুজ।
বলধার ক্যামেলিয়া হাউসে লাল, সাদা, গোলাপি রঙের ক্যামেলিয়া ফুটেছে। ছবি তুলতে তুলতে ক্যামেলিয়া হাউসে ঢুকে পড়ি। ক্যামেলিয়া হাউসের গ্রিলের ফাঁক গলে বের হওয়া আলোর দিকে চোখ মেলে তাকাতেই ফুলটির সঙ্গে চোখাচোখি। তাৎক্ষণিক ক্যামেলিয়া ছায়াতরুর ছাদে উঠে ফুলটি ভালো করে দেখি। ছবি তুলি।
বাসায় ফিরে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হকের শরণাপন্ন হই। তাঁকে ফুলটির অবস্থান ও বিবরণ জানাতে তিনি গাছটি চিনতে পারেন। ফুলটির নাম বলেন মিজোরিমাম। ইংরেজি নাম ক্যান্ডিকর্ন। ভারতের মিজোরামে খুব বেশি দেখা যায় বলেই সম্ভবত এর নাম মিজোরিমাম, জানালেন হক সাহেব। ফুলটির কোনো বাংলা নাম তিনি বলতে পারেননি।
লম্বায় ২০ থেকে ৩০ মিটার ক্যান্ডিকর্নগাছের ৩০ সেন্টিমিটার পাতার উভয় দিক শাখাযুক্ত। অর্থাৎ এর পাতা জোড়ায় জোড়ায় বের হয়। একেকটা পত্রমঞ্জরির সংখ্যা পাঁচ থেকে সাত জোড়া। ফুলের বৃত্তির রং টকটকে লাল আর পাপড়ির রং হলুদ। কখনোই ফুলটি পুরোপুরি প্রস্ফুটিত হয় না। এর পুংকেশরের সংখ্যা ১০। ক্যান্ডিকর্নের অনেক নাম। ভাগাতি বা ভাকেরি বলে মারাঠি ভাষায়। তামিল নাম ওক্কাদিক্কোরি। উদ্ভিদবিজ্ঞানের ভাষায় Moullava spicata . Caesalpiniaceae পরিবারের সদস্য।
মূলত, ভারত উপমহাদেশের গাছ। ভারতের মহারাষ্ট্র , কর্ণাটক, কেরালা ও মিজোরামে খুব বেশি দেখা গেলেও আমাদের দেশে বলধা গার্ডেনেই চোখে পড়ল। ফুল ফোটার সময় ডিসেম্বর মাস। ফুলের সৌন্দর্যে মন রাঙাতে চাইলে আপনাকে শীত থাকতে থাকতেই পুরান ঢাকার বলধা গার্ডেনে যেতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.