দীপু মনি-হিলারি বৈঠক-সম্পর্ক উন্নয়নে ইতিবাচক উদ্যোগ

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির বুধবারের বৈঠক নানা কারণেই তাৎপর্যপূর্ণ। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধুর খুনি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশের কাছে প্রত্যর্পণ, বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্তদের বিচারসহ নানা বিষয়ে তারা আলোচনা করেছেন। আলোচনা হয়েছে খোলামেলা পরিবেশে এবং বিভিন্ন ইস্যুতে


পরস্পরের অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুরুত্ব বিচারে দুটি দেশের হয়তো তুলনা চলে না, কিন্তু দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নিরিখে দেখা যায় বন্ধন যথেষ্ট দৃঢ় এবং ভিতও মজবুত। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাকের একক বৃহত্তম বাজার। গত কয়েক বছর ধরে অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও ওই বাজারে বাংলাদেশের রফতানি প্রভাবিত হয়নি। বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে নিয়মিত আর্থিক ও কারিগরি সহায়তার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য। বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ বিভিন্ন বহুপক্ষীয় আর্থিক সংস্থার কাছ থেকে বাংলাদেশ যে স্বল্প হার সুদ ও দীর্ঘমেয়াদে ঋণ পায় তার পেছনেও বিশ্বের প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে স্বীকৃত যুক্তরাষ্ট্রের পরোক্ষ ভূমিকা সম্পর্কে আমরা অবগত। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশের উজ্জ্বল উপস্থিতির জন্যও তাদের সমর্থন অপরিহার্য হিসেবে বিবেচিত হয়। এটাও জানা যে, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ধারায় বাংলাদেশের যে পথচলা তার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে এবং প্রধান প্রধান সব রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তিও তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিশ্বের একক পরাশক্তিধর দেশটির অগ্রাধিকার এবং পছন্দ-অপছন্দ নিশ্চয়ই উপলব্ধি করতে পেরেছেন। বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের অভিমত কিংবা পরামর্শ-সুপারিশ বাংলাদেশকে হুবহু অনুসরণ করতে হবে, এমন কথা নেই। কোনো সার্বভৌম দেশ সেটা করেও না। কিন্তু পররাষ্ট্রনীতি সংক্রান্ত নীতি ও কৌশল নির্ধারণে বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতা বাংলাদেশের নেতৃত্বের উপলব্ধিতে অবশ্যই রয়েছে বলে আমরা ধরে নিতে পারি। গ্রামীণ ব্যাংক এবং তার প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে তাদের উদ্বেগকে উপেক্ষার উপায় নেই। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্তদের বিচারে আন্তর্জাতিক মান ও স্বচ্ছতা বজায় রাখার যে প্রত্যাশা ব্যক্ত হয়েছে তার প্রতিও যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। আমাদের জাতীয় জীবনের গৌরবময় অধ্যায়ে যারা পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী হিসেবে হত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাটে অংশ নিয়েছে তাদের বিচার বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এতে অবশ্যই জয়ী হতে হবে এবং এ জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহায়তা আমরা প্রত্যাশা করি। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলাতেও চাই তাদের সহায়তা। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিশ্চিতভাবেই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের কাছ থেকে তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা আদায়ের ইস্যুটি কয়েক বছর ধরেই আলোচনার টেবিলে। এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হলে আমাদের আর্থ-সামাজিক চিত্র আমূল বদলে যেতে পারে। আমরা আশা করব যে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য রফতানি বাড়ানোর পথের বাধাগুলো দূর করায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। তবে তারা কী করবে সে অপেক্ষায় না থেকে বাংলাদেশকে কিন্তু তার নিজের করণীয় সম্পাদন করে যেতে হবে। বিশ্বের একক পরাশক্তির সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং ক্রমে তা উন্নত করে চলতে হলে কূটনৈতিক
দক্ষতাও থাকা চাই।
 

No comments

Powered by Blogger.