সুন্দরবন সুরক্ষায় নতুন নীতিমালা জরুরি-সাক্ষাৎকার by ড. এম মনিরুল এইচ খান

সাক্ষাৎকার গ্রহণ : ইমদাদ হক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এম মনিরুল এইচ খান ওই বিভাগ থেকেই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। কিছুদিন কাজ করেছেন আইইউসিএন-এ। পরে ইংল্যান্ডের কেমব্র্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ওপর পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। গবেষণার কাজে প্রায় দু'বছরেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন সুন্দরবনে। বাঘ নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি অন্যান্য


আন্তর্জাতিক প্রাণী সুরক্ষা সংগঠনেও কাজ করেছেন। কাজ করেছেন জুওলজিক্যাল সোসাইটি অব লন্ডন, মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটি প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের অধীনে। বর্তমানে তিনি বাঘ ও মানুষের সংঘাত নিরসনে কাজ করছেন। ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফি তার পছন্দের বিষয়

সমকাল : সাম্প্রতিক সময়ের সুন্দরবন অনেকের মনোযোগের মধ্যে রয়েছে। এর পর্যটন সম্ভাবনা যেমন রয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বনটির অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার আশঙ্কাও করছেন অনেকে। সেখানকার বন্যপ্রাণীদের অবস্থা কী?
মনিরুল খান : বাংলাদেশের অবস্থানকে ভৌগোলিকভাবে বলা হয় উষ্ণ-নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল। প্রকৃতির কল্যাণে আমরা সৌভাগ্যবান। এত ছোট দেশ হয়েও আমাদের দেশে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন। এছাড়া এ বনেই শুধু রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, যা বিস্ময়কর। প্রতিনিয়ত জলবায়ু ও আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে প্রকৃতির পরিবর্তন হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। এখন অনেক প্রজাতিই বিলুপ্তির পথে। এরপরও অনেক প্রজাতি এখনও রয়ে গেছে। এটা আমাদের জন্য প্রকৃতির আশীর্বাদ বলা যেতে পারে। তবে আগামী কয়েক বছরে পরিবর্তনের এ ধারায় অনেক প্রজাতি আশঙ্কাজনক হারে হারিয়ে যাবে।
সুন্দরবন প্রাকৃতিকভাবেই মানুষের জন্য দুর্ভেদ্য। এখানে বাঘের ভয় আছে। সুন্দরবনের অর্থনৈতিক গুরুত্ব ব্যাপক হলেও এখানে অর্থনৈতিক বৃক্ষের সংখ্যা হাতেগোনা। সুন্দরী গাছ কাটা হচ্ছে দেদার। প্রতিনিয়ত চোরা শিকারের কবলে পড়ছে হরিণ। এর সংখ্যা বছরে ৫ হাজারেরও বেশি। সমাজের বিত্তবানদের বিলাসিতায় হরিণের মাংসের চাহিদা বাড়ছে। এ কারণে হরিণের চোরা শিকারের বিষয়টি এখন অ্যালার্মিং পর্যায়ে উপনীত। এমনকি রয়েল বেঙ্গল টাইগারও চোরা আক্রমণের শিকার হচ্ছে। এছাড়া গ্রামবাসীর হাতে প্রতিবছর কিছুসংখ্যক বাঘ মারা যায়।
সমকাল : ৫০ বছর আগেও ভাওয়াল, মধুপুর, বৃহত্তর সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে কমবেশি বাঘ দেখা যেত। এখন সুন্দরবন ছাড়া আর কোথাও বাঘ খুঁজে পাওয়া যায় না। কেন এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো?
মনিরুল খান : রয়েল বেঙ্গল টাইগার অবশ্য সুন্দরবনেই পাওয়া যায়। আর পরিবেশের ওপর প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট নেতিবাচক কারণেই বাঘের সংখ্যা কমছে। অবশ্য পার্বত্য বনাঞ্চলে এখনও কিছু গেছো বিড়াল, মেছো বিড়াল ও চিতাবাঘ দেখতে পাওয়া যায়। তবে পরিবেশ সংরক্ষণের অভাবে এগুলোর অস্তিত্বও হুমকির সম্মুখীন।
সমকাল : সুন্দরবনসহ বাংলাদেশে সরকারের মালিকানাধীন বেশ কিছু সংরক্ষিত বনাঞ্চল রয়েছে। এগুলোর অবস্থা সম্পর্কে যদি বলেন।
মনিরুল খান : বাংলাদেশে বর্তমানে ২৮টি সংরক্ষিত অঞ্চল রয়েছে। তবে এগুলো শুধু সরকারি পর্যায়ের বললেই কথা শেষ হয় না। এগুলোর পরিবেশ সম্পর্কে ভাবতে হবে। আর সুন্দরবনের দক্ষিণ পাশে শুধু একটি সংরক্ষিত অঞ্চল রয়েছে। উত্তর পাশেও এ রকম একটি সেঞ্চুয়ারি নির্মাণ করা দরকার। সংরক্ষিত অঞ্চলের ব্যাপারে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার। এটা হচ্ছে ব্যাংকের মতো। নির্দিষ্ট অনুপাতে জমা থাকবে।
সমকাল : সুন্দরবনের বৈচিত্র্য অন্যান্য বনাঞ্চলের চেয়ে ভিন্ন। কেন?
মনিরুল খান : জোয়ার-ভাটার কারণে এ বনের বৃক্ষরাজি লোনাজলে প্লাবিত। সুন্দরবনের পরিবেশ বৈচিত্র্যময়। অনন্য এর বৈশিষ্ট্য। অন্যান্য বনের বৈশিষ্ট্য থেকে পুরোপুরি ভিন্ন। এখানে গাছপালা কাদা-মাটিতে জন্মায়। এককভাবে পৃথিবীর মোট ম্যানগ্রোভ বনের ৬ শতাংশ। ব্যতিক্রমী গাছপালা শুধু এ বনেই জন্মায়। সুন্দরী, গরান, গেওয়া, গোলপাতা সুন্দরবনের প্রধান উদ্ভিদ। তবে এখানে কাষ্ঠল গাছের সংখ্যা বেশি। রয়েছে প্রাণী বৈচিত্রতাও। 'ম্যানগ্রোভ হুইসলার, ম্যা-পিট্টা, মাসকট ফিনফুট পাখিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছরাঙা, মদনটাক, সাগর ঈগল প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। জীববৈচিত্র্যের দিক দিয়ে সুন্দরবন একটি আদর্শ বন।
সমকাল : গত ৯ বছরে সুন্দরবনে ৩০টিরও বেশি বাঘকে হত্যা করা হয়েছে। দিন দিন এ সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাঘ সংরক্ষণে কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?
মনিরুল খান : বাঘ ও মানুষের দ্বন্দ্ব কথাটি শুধু বাংলাদেশের জন্যই প্রযোজ্য। অন্যান্য দেশের খুব কম বাঘই মানুষ খায়। যেসব বাঘ অসুস্থ, আহত বা বয়সের ভারে ন্যুব্জ, শুধু তারাই শিকার করে। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি একটু ব্যতিক্রম। সুন্দরবনের পশ্চিমাঞ্চলে কিছু বাঘ রয়েছে, যারা মানুষের গন্ধ পেলেই মাংসের জন্য উতলা হয়ে পড়ে। তারা মানুষকে তাদের স্বাভাবিক খাবার মনে করে। এ রকম বাঘের পরিমাণ অন্তত ১০ শতাংশ। এ কারণে সুন্দরবনের পশ্চিমাংশের মানুষের সঙ্গে বাঘের একটি বৈরী সম্পর্ক বিদ্যমান। সুযোগ পেলেই একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। অন্যদিকে সুন্দরবনের পূর্ব দিকের মানুষ অপেক্ষাকৃত বাঘের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন। সাধারণত বাঘ নিজের জীবনের হুমকি মনে না করলে মানুষকে আক্রমণ করে না। তবে ব্যতিক্রমও আছে। নিরাপত্তার জন্য মানুষের সঙ্গে পোষা কুকুর রাখলে ঝুঁকি কমে যায়। কুকুরের শ্রবণশক্তি বেশি। ঘ্রাণশক্তি প্রখর। কুকুর নিজেও বাঘকে ভয় পায়। এ কারণে কুকুরকে সঙ্গে রাখলে কুকুর অনেক দূর থেকেই বাঘের অস্তিত্বের ব্যাপারে জানান দিতে পারে। বাঘ ও মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে মানুষকে প্রশিক্ষিত করতে হবে। ধর্মীয় বিশ্বাসের পাশাপাশি নিরাপত্তার জন্য লাঠি, দলভিত্তিক চলাফেরার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। বাঘ কমে যাওয়ার প্রধানতম কারণ হচ্ছে খাদ্য প্রাণী (যেমন হরিণ) কমে যাওয়া, চোরা শিকার হওয়া। এ শিকার বাঘ ও এর খাদ্য হরিণ উভয়ই হতে পারে। বর্তমানে বাঘ কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে এটি অন্যতম প্রধানতম কারণ। এছাড়া ছোটখাটো কিছু কারণও অবশ্য আছে। বাঘ সংরক্ষণে মানুষকে প্রশিক্ষিত হতে হবে। বাঘের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করতে হবে। বাঘ সাধারণত নিজের রাজ্য বিস্তারের জন্য এলাকায় ঘোরার সময় ভুলক্রমে লোকালয়ে চলে আসে। তখন সম্মিলিতভাবে লাঠি, কোদাল, শাবলের পরিবর্তে প্রশিক্ষিত আচরণ করে বাঘকে বনে ফেরত পাঠাতে হবে। প্রশিক্ষিত কুকুর বাহিনী গড়ে তুলতে হবে। বাঘ একটি বুদ্ধিমান প্রাণী। এ ধরনের আচরণে বাঘ সহজেই নিজের নিরাপত্তার ব্যাপারটি বুঝতে পারবে। পরবর্তীকালে চলার সময় বাঘ সচেতন হবে। পরীক্ষণে বিষয়টি প্রমাণিত। যে কোনো উপায়ে হরিণের চোরা শিকার বন্ধ করতে হবে। কারণ প্রতি সপ্তাহে বাঘের জন্য গড়ে একটি করে হরিণ দরকার। প্রয়োজনমতো খাদ্য না পেলে খাদ্য হুমকিতে পড়বে বাঘ। হারাবে নিজেদের অস্তিত্ব। বনজঙ্গল কমে যাওয়াও একটি কারণ। বাঘ সংরক্ষণের মাধ্যমে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য সংরক্ষণ ও জীববৈচিত্র্যের জৌলুস বৃদ্ধি সম্ভব।
সমকাল : সুন্দরবনের উদ্ভিদরাজির বর্তমান অবস্থা কী? বৃক্ষরোপণের বিকল্প ব্যবস্থা করা যায় কি-না।
মনিরুল খান : আগেই বলেছি সুন্দরবন প্রাকৃতিক বন। দেশের অন্যান্য স্থানে ব্যাপক হারে বৃক্ষরোপণ করা যেতে পারে। অবশ্য বৃক্ষরোপণ আর বনায়নের ক্ষেত্রে শব্দ প্রয়োগের পার্থক্য রয়েছে। বৃক্ষরোপণ হচ্ছে ব্যাপক হারে গাছ লাগানো। বনায়ন শব্দটি বৃক্ষরোপণের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা ঠিক নয়। বনায়ন বলতে সে এলাকার পরিবেশ, জীববৈচিত্র্যময় পরিবেশ, প্রাণীবৈচিত্রতার সমন্বয় বোঝায়, যা সাধারণত প্রাকৃতিকভাবেই গড়ে ওঠে। সে এলাকার জলবায়ু, আবহাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বনায়নে। কৃত্রিমভাবে শুধু বৃক্ষরোপণ করার মাধ্যমে এ সমন্বয় সাধন অসম্ভব। সুন্দরবনের বৈশিষ্ট্যের কারণে এখানে বৃক্ষরোপণ করা সম্ভব হবে না। সুন্দরবনের নোনাজল, জলবায়ু, আবহাওয়া, জোয়ার-ভাটার সঙ্গে বৃক্ষরোপণ অনুপযোগী। বিকল্প হিসেবে এ বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে হবে।
সমকাল : সুন্দরবনের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন। সম্প্রতি দূষণের উপকরণ হিসেবে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন অনুষঙ্গ। কেন এমনটি ঘটছে?
মনিরুল খান : সুন্দরবন অস্তিত্ব নিয়ে হুমকির সম্মুখীন। প্রায় প্রতি বছরই বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সিডর ও আইলার ক্ষত এখনও পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। এরপর মানবসৃষ্ট কারণ তো রয়েছেই। দিন দিন মানুষ বাড়ছে। জনসংখ্যার বাড়তি চাপের জন্য সুন্দরবনের গাছ কেটে বসতি স্থাপন করা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত বন দখলের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। চোরাইভাবে হরিণ শিকার করা হচ্ছে। চোরাকারবারির হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না সুন্দরবনের বাঘও। এছাড়া গাছ কাটার ব্যাপার তো রয়েছেই। প্রতিদিন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কাষ্ঠল বৃক্ষ কাটা হচ্ছে। যে হারে গাছ কাটা হচ্ছে, সে হারে গাছ বৃদ্ধি পাচ্ছে না। প্রাকৃতিকভাবে গাছের সংখ্যা বৃদ্ধিতে সময়ের প্রয়োজন। আর সুন্দরবনে তো বৃক্ষরোপণের সুযোগ নেই।
সম্প্রতি সুন্দরবন দূষণের আরেকটি অনুষঙ্গ যোগ হয়েছে। বনের ভেতর দিয়ে মাস পাঁচেক আগে উত্তর-পূর্ব সুন্দরবনের অংশের ভেতর দিয়ে একটি নৌ-রুট চালু করা হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৬০ কিলোমিটার। প্রতিদিন প্রায় অর্ধশতাধিক তেলবাহী ট্যাঙ্কার ও মালবাহী কার্গো এ রুট দিয়ে চলাচল করছে। ফলে এ অংশের কয়েকটি এলাকায় বাঘ, হরিণ এবং সংশ্লিষ্ট নদীতে ডলফিনের বিচরণ ক্ষেত্র নষ্ট হওয়ার উপক্রম। এসব নৌযান থেকে নিঃসৃত তেল ও বর্জ্য সুন্দরবনের ভেতরে ছড়িয়ে পড়ছে। এতে বিশ্ব ঐতিহ্যের গৌরব বহনকারী এ বনটির মাটি ও পানি দূষিত হয়ে পড়ছে। দ্রুতগতির এই ভারী যানবাহনগুলো চলাচলের ফলে ঢেউ আছড়ে পড়ে নদীর পাড়ে। ফলে ভাঙছে নদীর পাড়ও। জাহাজের শব্দ আতঙ্কিত করে তুলছে অভয়ারণ্যের বন্য প্রাণীগুলোকে। এতে বিপুল সংখ্যক প্রাণী ও উদ্ভিদ বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বড় বড় নৌযান চলাচল করায় সুন্দরবন এলাকার জেলেরা নদীতে জাল ফেলতে পারছে না। সামগ্রিকভাবেই পরিবেশ হুমকির সম্মুখীন।
সমকাল : সুন্দরবন রক্ষার জন্য তো আইন রয়েছে। এর প্রয়োগের মাধ্যমেও তো বন সংরক্ষণ সম্ভব?
মনিরুল খান : এখানে একটা কথা থেকে যায়। সুন্দরবন পৃথিবীর বৃহত্তম শ্বাসনালীয় বনভূমি। এ সত্ত্বেও এর জন্য আলাদা কোনো আইন নেই। বাংলাদেশ বন আইন ১৯২৭, বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) অধ্যাদেশ ১৯৭৩ এবং বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ দ্বারা সুন্দরবন নিয়ন্ত্রিত হয়। সময়ের প্রয়োজনে বনের সুরক্ষায় নতুন সুন্দরবন নীতিমালা তৈরি করা জরুরি। সফলভাবে সংরক্ষিত এলাকার নেটওয়ার্ক তৈরির মাধ্যমে প্রাণিবৈচিত্র্য সংরক্ষণ সম্ভব। এদিকে নজর দিতে হবে। কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশে বর্তমানে ২৮টি সংরক্ষিত এলাকা আছে। এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। শিকারের প্রবণতা রোধের জন্য ব্যাপকহারে গণসচেতনতা তৈরি করতে হবে। মানুষকে এ কাজে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। গবেষণালব্ধ তথ্য, জ্ঞান যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। কাজে লাগাতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।
সমকাল : সরকার তো 'বন্য প্রাণী সংরক্ষণে'র জন্য বন বিভাগের ওপর দায়িত্ব দিয়েছে...
মনিরুল খান : এখানে একটি কথা বলা খুবই জরুরি। আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে সৎ হতে হবে। পেশাদারিত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। আর এ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যথাযথ প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করতে হবে। প্রায়ই তো সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের ব্যাপারে নেতিবাচক কথা শোনা যায়। এগুলো পরিহার না করতে পারলে উন্নতির ফলাফলটা শূন্যের কোটায় চলে আসবে।
সমকাল : সুন্দরবনে ইকো-ট্যুরিজম শিল্প গড়ার ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?
মনিরুল খান : প্রথমত, সুন্দরবনের প্রতি মানুষের আগ্রাসন ঠেকাতে হবে। জনসংখ্যার বাড়তি চাপ যেন সুন্দরবনের ওপর প্রভাব না ফেলে সেদিকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। কোনোমতেই বনের গাছ কেটে মানুষের আবাসন তৈরি করা যাবে না। এ এলাকার মানুষদের কর্মমুখী করতে হবে। বেকারত্ব আর কর্মহীনতায় এরা হরিণ ও বাঘ শিকারের মতো কাজে জড়িয়ে পড়ে। এটা রোধ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ইকো-ট্যুরিজম তৈরির ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। এর মাধ্যমে ট্যুরিজম ও গবেষণা দুটি কাজই গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে করা যাবে। সুন্দরবনের প্রাণী রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে হবে। হরিণ, শূকর, বানর, সাপ, পাখি, সরীসৃপ, কাঁকড়াসহ সব প্রাণীর আবাসন নিশ্চিত করতে হবে। জঙ্গলের ভেতরে পরিকল্পিত বেষ্টনীসহ মিষ্টি পানির পুকুর, ওয়াচটাওয়ার, রোপওয়ে, বার্ডস নেস্ট তৈরি করলে পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি ট্যুরিজম সেক্টরটিও উন্নত হবে। এছাড়া বনে সবার প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করা হোক। বন বিভাগ ও পর্যটন অফিসের সমন্বয়ের মাধ্যমে পর্যটকদের জন্য টিকিটের ব্যবস্থা করা হোক। এতে পর্যটন বিভাগের আয়ের পাশাপাশি চোরা শিকারির সংখ্যা কমবে। যথাযথ পদক্ষেপ নিলে সুন্দরবন হয়ে উঠবে মেরিন বায়োলজি, বোটানি, জুওলজি, ফরেস্টি গবেষণার উজ্জ্বল ক্ষেত্র। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গবেষণার জন্য সুন্দরবনের সঙ্গে সংযুক্ত করা যেতে পারে। এছাড়া স্থানীয় বাসিন্দা, জেলে সম্প্রদায়, বনমালী সম্প্রদায়কে কাজে লাগাতে হবে। তাদের সুন্দরবন বান্ধব করে তৈরি করতে হবে।
সমকাল : ধন্যবাদ।
মনিরুল খান : সমকালের জন্য শুভেচ্ছা।

No comments

Powered by Blogger.