চারদিক-বর্ষপূর্তি আর সমাবর্তন: এক যুগল আয়োজন

জ ২৮ ডিসেম্বর ২০১১। আজকের সকালটি আর সব দিন থেকে একটু ভিন্ন ব্যঞ্জনা নিয়ে হাজির হয়েছে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস ক্যাম্পাসে। কারণ, আজ এ প্রতিষ্ঠান উদ্যাপন করছে ৪০ বছর পূর্তি উৎসব এবং সেই সঙ্গে আয়োজন করেছে ১১তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানের। এ উপলক্ষে মহাখালীতে অবস্থিত ক্যাম্পাসটি সেজেছে বর্ণিল সাজে। আজ থেকে ৪০ বছর আগে আন্তর্জাতিক মানের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরির প্রত্যয় নিয়ে জন্ম হয়


বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের (বিসিপিএস)। তখন অবশ্য এ প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল পাকিস্তান কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (সিপিএসপি)। এরপর স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯৭২ সালের জুনে এক প্রেসিডেনশিয়াল অর্ডারে প্রতিষ্ঠিত হয় বর্তমানের বিসিপিএস এবং ওই বছরের জুলাইয়ে বাংলাদেশে প্রথম এফসিপিএস পরীক্ষার অয়োজন করে প্রতিষ্ঠানটি। আর কলেজটি প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ১৯৮০ সালে।
কলেজের একাডেমিক শিক্ষা ও ট্রেনিং-সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয় বিভিন্ন ফ্যাকাল্টির মাধ্যমে। বর্তমানে কলেজের ১৫টি ফ্যাকাল্টি কাজ করছে এবং আরও কয়েকটি ফ্যাকাল্টি গঠনের কাজ প্রক্রিয়াধীন। এর মধ্যে মেডিসিন, ফ্যামিলি মেডিসিন, সার্জারি ও ডেন্টাল সার্জারি, বেসিক সায়েন্স, অবস অ্যান্ড গাইনি, পেডিয়াট্রিকস, সাইকিয়াট্রি, রেডিওলজি ও রেডিওথেরাপি, অপথালমোলজি, ডার্মাটোলজি, অ্যানেসথেসিওলজি, হেমাটোলজি, অটোলেরিংগোলজি ও ফিজিক্যাল মেডিসিন ফ্যাকাল্টি। এ ছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে এফসিপিএস প্রথম পর্ব পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সপ্তাহে বৃহস্পতি ও শুক্রবার বেসিক মেডিকেল সায়েন্স কোর্স চালু আছে। আরও আছে ক্লিনিক্যাল সায়েন্স বিষয়ে অপথালমোলজি, রেডিওলজি ও রেডিওথেরাপি এবং ডেন্টাল সার্জারির বিভিন্ন বিষয়ে স্বল্পমেয়াদি কোর্স। এ ছাড়া সব বিষয়ে ডিজারটেশন করার জন্য রিসার্স মেথোডোলজির ওপর ওরিয়েন্টেশন কোর্স, আইটি ল্যাব, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও বেসিক সার্জিকেল স্কিল ল্যাব ট্রেনিং বাধ্যতামূলকভাবে চালু আছে।
বলে রাখা ভালো, কলেজের এ বিশাল কর্মযজ্ঞ পরিচালিত হয় এ কলেজেরই সম্মানিত ফেলোদের আন্তরিক স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে। আর কলেজটির সার্বিক কার্যক্রম পরিচালিত হয় ২০ সদস্যবিশিষ্ট একটি শক্তিশালী কাউন্সিল দ্বারা, যার মধ্যে ১৬ জন সদস্য নির্বাচিত হন নির্বাচন-প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এবং চারজন সদস্য নির্বাচিত হন বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক।
কলেজটি জন্মলগ্ন থেকেই প্রতিবছর ১ জানুয়ারি ও ১ জুলাইয়ে ফেলোশিপ পরীক্ষা গ্রহণ করে আসছে। বিশেষ কোনো পরিস্থিতি ছাড়া এ তারিখের ব্যত্যয় ঘটে না এবং পরীক্ষা শেষ হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করে থাকে। এ পরীক্ষা গ্রহণের জন্য যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, পাকিস্তান, সৌদি আরব, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশ থেকে বিশেষজ্ঞ পরীক্ষক এ দেশে আসেন। শুধু তা-ই নয়, এ কলেজ থেকে পাস করা সম্মানিত অনেক ফেলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরীক্ষা গ্রহণের পরীক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। এফসিপিএস চূড়ান্ত পরীক্ষা গ্রহণের জন্য প্রতিবছর ২৫-৩০ জন বিদেশি পরীক্ষক বিসিপিএস কলেজে আসেন। যুক্তরাজ্যের রয়েল কলেজ, সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি মেডিকেল বোর্ড, পাকিস্তান কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস থেকে নিয়মিত পরীক্ষকেরা এসে থাকেন। অন্যদিকে বিসিপিএস থেকে যুক্তরাজ্যের রয়েল কলেজগুলোয় অবজারভার পরীক্ষক এবং পাকিস্তান ও সৌদি আরবে আমাদের দেশের ফেলোরা পরীক্ষা নেওয়ার জন্য যান। বর্তমানে এই বিসিপিএস মেডিকেল সায়েন্সের ৪৩টি ও ডেন্টাল সায়েন্সের চারটিসহ মোট ৪৭টি বিষয়ে ফেলোশিপ দিয়ে থাকে। এ ছাড়া মেডিকেল সায়েন্সের ১৪টি বিষয়ে মেম্বরশিপ পরীক্ষা (এমসিপিএস) ও ডেন্টাল সার্জারিতে এমসিপিএস ডিগ্রি প্রদান করে। উল্লেখ্য, এ পর্যন্ত কলেজটি তিন হাজার ৫১১ জন এফসিপিএস, এক হাজার ৯২১ জন এমসিপিএস ডিগ্রিধারী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং ১৫৬ জনকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করেছে, যার মধ্যে ৮৮ জন চিকিৎসক বিদেশি নাগরিক। সময়ের চাহিদার সঙ্গে এসব ডিগ্রির মান বিশ্বমানে উত্তীর্ণ করার প্রত্যয়ে প্রতিষ্ঠানটি রয়েল কলেজ অব সার্জনস অব ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, গ্লাসগো, এডিনবার্গ ইত্যাদি কলেজের সঙ্গে মিল রেখে নিয়মকানুন ও পরীক্ষাপদ্ধতি পরিবর্তন করেছে। আর এসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের চিকিৎসাসেবায় অপরিসীম অবদান রেখে চলেছে প্রতিষ্ঠানটি, যার প্রমাণ এ প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রাপ্ত এফসিপিএস ও এমসিপিএস ডিগ্রিধারী চিকিৎসকদের মধ্যে বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতাল ও চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন ৮৫ শতাংশ চিকিৎসক ও শিক্ষক।
মারুফ ইসলাম

No comments

Powered by Blogger.