সহিংসতা বদলে দিয়েছে গানের ধারা


তাঁর গানে থাকে শান্তি ও আশার বাণী। কিন্তু নিজে সব সময় সন্ত্রাসী হামলার ভয়ে ভীত থাকেন। এই বুঝি থামিয়ে দেওয়া হলো তাঁর গানের গলা। এ পর্যন্ত তিন-তিনবার উগ্রপন্থীদের হত্যাপ্রচেষ্টা থেকে বেঁচে গেছেন তিনি। পাকিস্তানি এই কণ্ঠশিল্পীর নাম গুলজার আলম। বাড়ি খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের রাজধানী পেশোয়ারে। প্রেম-ভালোবাসাসহ হূদয়ঘটিত বিষয়ের রোমাঞ্চকর গান একসময় খুব গাইতেন গুলজার। তবে এখন আর ভালোবাসার


গান তিনি গান না। পাকিস্তানের অন্যান্য শিল্পীর মতো গুলজারও তাঁর গানের ধরন বদলে ফেলেছেন। এখন তাঁর গানে ফুটে ওঠে আত্মঘাতী বোমা হামলার বেদনার্ত সুর।
আফগান সীমান্তবর্তী এই পেশোয়ার শহরটি বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক শহরগুলোর একটি। সেখানে সংগীতকে ধর্মবিরোধী হিসেবে দেখে থাকে তালেবানপন্থী মোল্লারা। হরহামেশায় সেখানে গানের সামগ্রীর দোকানগুলোতে বোমা পড়ছে, নৃত্যশিল্পীকে হত্যা করা হচ্ছে ও কণ্ঠশিল্পীদের হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
নিজের জীবন নিয়ে গুলজার এতটাই শঙ্কিত যে, ২০০৪ সালে তিনি পেশোয়ার ছেড়ে অপেক্ষাকৃত শান্তিপূর্ণ বেলুচিস্তানের রাজধানী কোয়েটায় চলে যান। তবে কোয়েটা পৌঁছানোর আগেই পথিমধ্যে তাঁর জীবনের ওপর প্রথম আঘাত আসে। একটি দ্রুতগামী গাড়ির ধাক্কায় তিনি গুরুতর আহত হন। পরে সুস্থ হলেও তাঁকে ডান পায়ের ভেতরে একটি রড বহন করে চলতে হচ্ছে। গুলজারের দাবি, উগ্রপন্থীরাই তাঁকে হত্যার উদ্দেশে এটা করেছে। পরে ২০০৮ সালে তিনি পেশোয়ারে ফিরে আসেন। যে বছর ফিরলেন সে বছরের অক্টোবরেই তাঁর জীবনের ওপর এল দ্বিতীয় আঘাত। জঙ্গিরা তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে উপর্যুপরি গুলি চালাল। তবে এ যাত্রাও প্রাণে রক্ষা পেলেন তিনি।
বর্তমানে পেশোয়ারের একটি এলাকায় ছয় সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করা গুলজার বললেন, ‘আমি মানুষের চোখের কোণে জমে থাকা কান্না দেখতে পাই। যখন আমি গাই, তখন আমার কণ্ঠ দিয়ে সচেতনতা বাড়াতে চাই। তবে গানের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছি। এ পর্যন্ত অগণিতবার ফোনকল ও খুদে বার্তা পেয়েছি, যাতে আমার গানের গলা চিরতরে থামিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে।’
গত ১৯ সেপ্টেম্বরে একটি সিডি মার্কেটে মোটরসাইকেল বোমা হামলায় পাঁচজন নিহত ও ২৮ জন আহত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বন্ধ হয়ে গেছে শত শত গানের সামগ্রী বিক্রির দোকান। অনেক শিল্পী গান গাওয়া থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন।
তবে পশতু সিনেমার লেখক ও প্রযোজক আমজাদ নাভিদের মতে, এসব সহিংস ঘটনার মধ্যে অন্তত লাভ হয়েছে একটি। এর মধ্য দিয়ে শান্তি ও ধৈর্যের বাণী প্রচারে গানের নতুন একটি ধারা তৈরি হয়েছে। প্রখ্যাত কবি ও পশতু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবাসিন ইউসাজালেরও একই রকম মন্তব্য।
অনেক গায়কের বিশ্বাস, যত দিন না পাকিস্তানিরা নিজেদের ভাগ্য নিজেরাই বিনির্মাণের যুদ্ধে না নামছে, তত দিন কিছুই বদলাবে না। এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.