গীত শেখানোর উৎসব

গীতের আসর বসেছে বাড়ির আঙিনায়। সঙ্গে পিঠা-পুলি বানানোরও ধুম পড়েছে। কেউ বানাচ্ছেন তিলের পিঠা, কেউবা তেলের। ভাপা পিঠার ঘ্রাণে জিহ্বায় পানি আসে। আইখা পিঠা ও পায়েস বানাচ্ছেন কজন মিলে। ছোট ছোট মেয়েরা এসেছে হলুদ শাড়ি পরে। তারাও বড়দের সঙ্গে হাত লাগিয়েছে। আনন্দঘন নবান্ন উৎসবের চিত্রটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার পুনর্ভবা নদীর তীরে একটি বর্ধিষ্ণু গ্রাম বাবুরঘোনার।


পুনর্ভবা নদীটি ইংরেজি অক্ষর ‘ইউ’ আকৃতি নিয়ে ঘিরে আছে গ্রামটিকে। পুরোনো হলেও গ্রামটিতে গত শনিবারই প্রথমবারের মতো হয়ে গেল নবান্ন উৎসব। এর আয়োজক ছিলেন গ্রামের দুই বোন মমতাজ খাতুন ও শামিমা খাতুন। দুজনই পেশায় শিক্ষক।
এই দুই বোন গ্রামের ২৫-৩০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে গড়ে তুলেছেন গীতের দল। তাঁরা জানান, বিয়ের গীতগুলো মেয়ে শিক্ষার্থীদের শিখিয়ে দল গঠন করেন তাঁরা। এ খবর আশপাশে ছড়িয়ে পড়লে বিয়ের আসরে এখন ডাক পড়ে গীত গাওয়ার জন্য। তাঁরা বয়স্ক নারীদের কাছে জানতে পারেন, একসময় নতুন ধান ওঠার পর গ্রামের নারীরা ঢেঁকিতে ধান ভানা, জাঁতায় আটা পেষার সময়ও দল বেঁধে গীত গাইত। পিঠা-পুলি তৈরির সময়ও গাইত ভিন্ন ভিন্ন গীত। কিন্তু এখন আর ঢেঁকিতে ধান ভানাও হয় না, জাঁতায় পেষা হয় না আটাও। দুই বোনের মাথায় ভাবনা আসে, এসব আয়োজনের মাধ্যমে অভিজ্ঞ নারীদের দিয়ে গীত গাওয়ানো আর তাঁর দলের মেয়েদের তা শেখানো। যেই ভাবা সেই কাজ।
শনিবার সকালে মমতাজ ও শামিমাদের বাড়ির আঙিনায় গিয়ে দেখা যায়, পিঠা-পুলি বানানো শেষে এক জায়গায় জড়ো করে রাখা হয়েছে। একেক পাত্রের দায়িত্বে একজন নারী। শ্রেণীকক্ষে নাম ডাকার মতো করে মমতাজ খাতুন একেকজনের নাম ডাকা শুরু করেন। আর শিশুরা পাত্র নিয়ে হাজির হয়।
নদীর তীরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে। উৎসবে আসা রহনপুর পৌরসভার কাউন্সিলর মোসলেহ উদ্দীন, নারী কাউন্সিলর শেফালী বেগমসহ আরও কয়েকজন বলেন, এই প্রথমবারের মতো এমন উৎসব। এমন আয়োজন যেন প্রতিবছর হয়।

No comments

Powered by Blogger.