আলোচিত আয়োজন

র্ণিল ফ্যাশন শো ও বিভিন্ন প্রদর্শনীর আয়োজন ছিল বছরজুড়েই। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু ইভেন্ট নিয়ে সাজানো হয়েছে এ প্রতিবেদন। লিখেছেন নওরিন আক্তার ব্র্যান্ডেড চট্টগ্রাম : বছরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট ছিল ব্র্যান্ডেড চট্টগ্রাম। গত ১২ জানুয়ারি চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়ামে অনুষ্ঠিত 'ব্র্যান্ডিং চিটাগাং' অনুষ্ঠানের মঞ্চ হয়ে ওঠে চট্টগ্রামের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি প্রদর্শনের তীর্থ। চট্টগ্রাম ডিজাইনারস ফোরামের পক্ষ থেকে আয়োজন


করা এ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী বাণিজ্যমন্ত্রী, জিএম কাদের, তত্তাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল ও বিউটিশিয়ান কানিজ আলমাস খান। উপস্থাপনায় ছিলেন আফজাল হোসেন ও সোমা। চার পর্বে বিভক্ত অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল চট্টগ্রামের ইতিহাস ও গোটা সংস্কৃতিভিত্তিক ফ্যাশন শো। আরও ছিল বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রধান ১০টি আদিবাসী সম্প্রদায়ের জীবনযাপন ও সংস্কৃতি নিয়ে ফ্যাশন শো। সঙ্গে ছিল চাটগাইয়া ভাষার ঐতিহ্যবাহী লোকসঙ্গীত। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী বিয়ের অনুষ্ঠান ও উৎসব-পার্বণের মোটিফসমৃদ্ধ অসাধারণ উপস্থাপনাও মুগ্ধ করেছে দর্শকদের। হাতে বোনা তাঁতের কাপড় পরিহিত মার্মা তরুণীর অংশগ্রহণে মার্মা সম্প্রদায়ের জীবন ও সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়। ঐতিহ্যবাহী বাঁশনৃত্য, হাতপাখা হাতে লাজুক তরুণী, তলোয়ার হাতে শান্ত্রী, জুমচাষ, বাঁশের তৈরি হুঁকার ব্যবহার ফুটিয়ে তোলা হয় চাকমা সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রায়। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী ছয়টি নৃগোষ্ঠীর জীবন ফুটিয়ে তোলা হয়। ব্র্যান্ডিং চিটাগাং অনুষ্ঠানের মূল পরিকল্পক ছিলেন ফ্যাশন ডিজাইনার এমদাদ হক।
স্মৃতি উপহার : দেশে প্রথমবারের মতো স্মৃতি উপহার সামগ্রী নিয়ে একটি ব্যতিক্রমধর্মী প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয় চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি। ধানমণ্ডির দৃক গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হওয়া ১০ দিনব্যাপী এ প্রদর্শনীতে অংশ নেয় দেশের শীর্ষস্থানীয় ৯টি প্রতিষ্ঠান। বিশ্বকাপ ক্রিকেট উপলক্ষে বাংলাদেশে আসা পর্যটকদের সামনে রেখে বিশেষ এ আয়োজনটি করা হয়। প্রতিটি পর্যটক যেন বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে স্মৃতি উপহারের মধ্য দিয়ে বহন করে নিয়ে যেতে পারে_ এটাই ছিল আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য। প্রদর্শনীতে স্যুভেনির পণ্যগুলোর মধ্যে ছিল সাদাকালোর বাঘ থিমের টি-শার্ট, চাবির রিং, মগ, ল্যাপটপ ব্যাগ। দেশীয় সংস্কৃতির ধারক ঐতিহ্যবাহী গোলাপবালা নিয়ে আসে অঞ্জনস। শাপলা থিমের রঙ-বেরঙের ঝোলা নিয়ে প্রদর্শনীতে অংশ নেয় বিবিয়ানা। সোনালি আঁশ পাট ও গ্রামীণ জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় সামগ্রী 'কলস' থিমে নজরকাড়া পণ্য নিয়ে এসেছিল কোর দ্যা জুট ওয়ার্কস। ঝুমকার নান্দনিকতাকে ব্যবহার করে 'ঝুমকা লতা' থিমে নিপুণ অংশগ্রহণ করে বাহারি গৃহসজ্জার উপকরণ নিয়ে। প্রদর্শনীতে প্রবর্তনা নিয়ে এসেছিল ঝোলার মতো দেখতে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের অন্যতম অনুষঙ্গ বোটুয়ার আধুনিক সংস্করণ। এ ছাড়া ছিল শোল্ডার ব্যাগ, জুয়েলারি, পাট ও বাঁশের নজরকাড়া পণ্যদ্রব্য। গ্রামবাংলার বাহারি খিড়কি ও দরজার নকশা পণ্য নিয়ে আসে অর্বাচীন। রেশম ও প্রাকৃতিক রঙের উজ্জ্বলতা নিয়ে কুমুদিনী ক্রাফটস অংশ নেয় এ প্রদর্শনীতে। পণ্যগুলোর মধ্যে পাঞ্জাবি, ফতুয়া, শাড়ি, কুশন কভার, বেড কভার, জুট ব্যাগ, লেদার ব্যাগ, শার্ট, জুয়েলারি বক্স, শাল, স্কার্ট, টপস উল্লেখযোগ্য। সাম্পান, নদীসহ বাংলার লোকজ মোটিফ উঠে এসেছিল নিত্য উপহারের টি-শার্টে। এ ছাড়া দেশের বেশকিছু প্রান্তিক উদ্যোক্তা অংশ নেন এ প্রদর্শনীতে।
নানা রূপে রবীন্দ্রনাথ : কবিগুরুর সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথের নানা সৃষ্টি নিয়ে নয়জনের একটি দল ব্যতিক্রমী আয়োজন করেছিল। পোশাকের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন রূপ ফুটিয়ে তোলার এ উদ্যোগটি ছিল ব্রিটিশ কাউন্সিলের। এ উৎসবে রবীন্দ্রনাথের চিত্রকলা নিয়ে কাজ করেছেন সব্যসাচী হাজরা। প্রকৃতিপ্রেমী রবীন্দ্রনাথের চোখে ষড়ঋতুকে তুলে ধরেছেন এমদাদ হক। রবীন্দ্র নৃত্যনাট্য ও গীতিনাট্য নিয়ে কাজ করেছেন তাহসিনা শাহিন। রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত তিন যুগল নিয়ে 'যুগলবন্দী' থিমে কাজ করেছেন বিজলী হক। কয়েক দশকের রবীন্দ্র ফ্যাশন নিয়ে ফ্যাশন ডিজাইনার চন্দ্রশেখর সাহা কাজ করেন। রবি ঠাকুরের জীবন ও কর্মে নারীদের অবদান নিয়ে কাজ করেছেন লিপি খন্দকার। রবীন্দ্রনাথের গানে প্রেম ও পূজার রূপ ফুটিয়ে তোলেন শৈবাল সাহা। ভালোবাসার কবিতা ক্যামেলিয়ার থিমে কাজ করেন কুহু পল্গ্যামন্ডন। রবীন্দ্রনাথের কর্মে পাশ্চাত্যের প্রভাব ফুটিয়ে তোলেন ফারাহ আনজুম বারী।
ঢাকা ফ্যাশন উইক ২০১১ : 'অ্যা সেলিব্রেশন অব সাইট' স্লোগান নিয়ে ১৫ জুন চার দিনব্যাপী ঢাকা ফ্যাশন উইকের চতুর্থ আসর অনুষ্ঠিত হয়। গুলশানের ইজুমি সেন্টারে একটি ফ্যাশন ফটোগ্রাফি এক্সিবিশনের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া শহরের সবচেয়ে আড়ম্বরপূর্ণ এ ইভেন্টে সর্বমোট ৩২টি আলোকচিত্রের মাধ্যমে এখানে সর্বশেষ ট্রেন্ডের ফ্যাশন তুলে ধরা হয়। এ ছাড়া জমকালো ফ্যাশন শো তো ছিলই। ঢাকা ওয়েস্টিন হোটেলে শীর্ষস্থানীয় ফ্যাশন ডিজাইনারদের অংশগ্রহণে চারটি আলাদা সেশনে সর্বমোট ৫০টি ফ্যাশন শো অনুষ্ঠিত হয়। চোখ ধাঁধানো সেশনগুলোতে দেশি-বিদেশি ফ্যাশনের ধারা উঠে আসে। ফ্যাশন শোগুলো পরিচালনা ও কোরিওগ্রাফি করেন ঢাকা ফ্যাশন উইকের প্রেসিডেন্ট কৌশিকি নাসের। বিশেষ অতিথি ছিলেন মিস ইন্ডিয়া ২০১০ উষশি সেনগুপ্ত।
নগরদোলা মডেল হান্ট ২০১১ : ফ্যাশন হাউস নগরদোলা আয়োজন করেছিল মডেল হান্ট প্রতিযোগিতা। দেশে এ ধরনের প্রতিযোগিতা এবারই প্রথম। চার মাস ধরে চলতে থাকা এ প্রতিযোগিতার ফল ঘোষণা করা হয় ১৫ জুলাই। প্রাথমিকভাবে এক হাজার ৮০০ ছেলেমেয়ে অংশগ্রহণ করে এতে। এরপর নানা প্রতিযোগিতা ও যোগ্যতা বিচারের লড়াই শেষে সেরা ১২ জনকে বাছাই করা হয় গ্রুমিংয়ের জন্য। এ ১২ জন থেকেই গ্র্যান্ড ফিনালেতে বেছে নেওয়া হয় সেরা ৪ জনকে। বিজয়ীর মুকুট পরেন মৌনি ইসলাম। প্রথম রানারআপ হয়েছেন ফরহাদ হোসেন ইফাজ, দ্বিতীয় রানারআপ হয়েছেন সাইফা শিকদার রিমু ও মাহমুদুল হাসান শাকিল।
নেপাল ফ্যাশন উইক-২০১১ : হিমালয় টাইমস নেপাল ফ্যাশন-২০১১ অনুষ্ঠিত হয় গত ২১-২৪ সেপ্টেম্বর নেপালের কাঠমাণ্ডুর হায়াৎ রিজেন্সি হোটেলে। নেপালের সবচেয়ে জনপ্রিয় এ ফ্যাশন উৎসবে বাংলাদেশ থেকে ফ্যাশন ডিজাইনার এমদাদ হক অংশগ্রহণ করেন। তার ডিজাইনকৃত পোশাকগুলো উপস্থাপন করেন দীপ্তি হক।
এ বছর স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ৭৯ ফ্যাশন ডিজাইনার তাদের সৃষ্টি তুলে ধরেন। ডিজাইনারদের প্রতিষ্ঠিত ও শিক্ষানবিস এ দুই শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠিত ডিজাইনারদের মধ্যে ছিলেন প্রাণিধি তুলাধার, সাবাহ, এমদাদ হক, ওদনি বুটিক এবং প্রতিজ্ঞা থাপা। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন শাইলজা অধিকারী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আইইসি। ৪ দিনব্যাপী এ ফ্যাশন শোর প্রতিদিন নয়টি থিমের ওপর পোশাক প্রদর্শিত হয়। ১৪ নেপালি এবং ৬ ভারতীয় মডেল এসব পোশাক উপস্থাপন করেন। ফ্যাশন উইকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে ডিজাইনার এমদাদ হক এ দেশের খাদি ও হাতের, তাঁতে বোনা কাপড়ে তৈরি পোশাকের সংগ্রহ নিয়ে হাজির হন।
ওয়েডিং ডায়েরি : বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, স্মৃতি ধরে রাখার জন্য ছবি বা ভিডিও অথবা বিয়ের অনুষ্ঠানকে আকর্ষণীয় করে তোলার বিভিন্ন উপাদান নিয়ে গত ১১-১৯ নভেম্বর ধানমণ্ডির দৃক গ্যালারিতে হয়ে গেল ওয়েডিং ডায়েরির জাঁকজমকপূর্ণ প্রদর্শনী। ওয়েডিং ডায়েরির পাঁচ বছরপূর্তি উপলক্ষে এ আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া ছিল র‌্যাফেল ড্রয়ের আয়োজন, যেখানে ফর্ম পূরণ করে ড্রতে বিজয়ী হলে 'ওয়েডিং ডায়েরি' নেবে আপনার বিয়ের যাবতীয় দায়িত্ব, আপনি শুধু নিজের বর বা কনে বাছাই করবেন।
স্বাধীনতা ও ফ্যাশনের ৪০ বছর : ১০ ডিসেম্বর ঢাকা ক্লাবের ১০০ বছর উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা ক্লাবের টেনিস কোর্টে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল 'স্বাধীনতা ও ফ্যাশনের ৪০ বছর' শীর্ষক এক জমকালো ফ্যাশন শো। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ। বর্ণিল এ ফ্যাশন শোর মধ্য দিয়ে উপস্থাপন করা হয় 'স্বাধীনতা ও ফ্যাশনের ৪০ বছর'। রিলাস ফ্যাশন বুটিকের সৌজন্যে এবং মানতাশা মুহিতের নেতৃত্বে লুনার কোরিওগ্রাফিতে র‌্যাম্পে অংশগ্রহণ করেন দেশের জনপ্রিয় মডেলরা। তিনটি কিউতে ভাগ করা ফ্যাশন শোটির প্রথম কিউতে মডেলরা প্রদর্শন করেন সত্তর দশকের পোশাক। দ্বিতীয় কিউতে মডেলরা হাজির হন আশির দশকের আকর্ষণীয় সব পোশাক নিয়ে। শোর শেষ কিউটির নাম ছিল মিলেনিয়াম সেগমেন্ট। এতে প্রদর্শিত হয় ঢাকার মসলিন, মিরপুরের বেনারসি, রাজশাহী সিল্ক এবং টাঙ্গাইলের তাঁতের ঐতিহ্যবাহী পোশাক।

No comments

Powered by Blogger.