কোরিওগ্রাফারদের বয়ানে

ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে র‌্যাম্প, মডেল আর পোশাকের সমন্বয়ে ফ্যাশন শোর পেছনে কোরিওগ্রাফারদের ভূমিকাই বেশি। ফ্যাশন শোগুলোতে অনেক পরিশ্রম করলেও বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তাদের। সারাবছরের র‌্যাম্প শো নিয়ে কয়েক কোরিওগ্রাফারের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি প্রসঙ্গে লিখেছেন জান্নাতুল এ্যানি শাহরুখ আমিনফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে আমি ১৫ বছর ধরে আছি। ফ্যাশন শো কথাটির মানেই আমরা অনেকে বুঝি না। যদি বুঝতাম


তাহলে র‌্যাম্পে উঠে মেয়েরা নাচত না। র‌্যাম্প শোতে একজন ডিজাইনার তার ডিজাইনকৃত পোশাকের প্রদর্শন করেন। মডেলরা সেই পোশাক এমনভাবে প্রদর্শন করবেন যেন ওই ডিজাইনারের কাজের গভীরতাটুকু সবাই বোঝে। যদি র‌্যাম্পে উঠে নাচতেই হয় তাহলে তাকে ফ্যাশন শো কেন বলব? নাচের অনুষ্ঠান করলেই তো হয়। আমাদের দেশে ফ্যাশন শো এন্টারটেইনমেন্ট হিসেবে ধরা হয়। এখনও মডেলদের মধ্যে প্রফেশনালিজম তৈরি হয়নি। দেশের বাইরে যেসব ফ্যাশন শো হয় তা দেখেও আমাদের মডেলদের মধ্যে পরিবর্তন আসে না। সবচেয়ে খারাপ লাগার প্রধান কারণ হলো, ইদানীং মডেল গ্রুপিং চলছে। এ মডেল থাকলে শোতে কাজ করব না, ওই ডিজাইনারের শোতে কাজ করব_ এভাবে গ্রুপিং হচ্ছে। যে কোনো কাজে আগ্রহ না থাকলে, কাজের প্রতি ভালোবাসা না থাকলে তা সঠিকভাবে করা কখনোই সম্ভব নয়। নতুন কোনো ভালো মডেল আমরা পাচ্ছি না। মডেল হিসেবে মেয়েরা যে এ ইন্ডাস্ট্রিতে আসবেন তাও সম্ভব হচ্ছে না। কারণ দু'এক মডেলের ভুল কাজের জন্য সব মডেলই সমস্যায় পড়ছেন। ফ্যাশন কোরিওগ্রাফারদের বড় অভাব আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে। তাই বাধ্য হয়ে মডেলরাই কোরিওগ্রাফার হচ্ছেন। চর্চার কোনো সুযোগ তারা পাচ্ছেন না। এভাবে তো কোনো ইন্ডাস্ট্রি এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। আগে একেকটা শোর রিহার্সেল হতো এক মাস ধরে। ইদানীং সময়মতো কাউকে খুঁজেই পাওয়া যায় না। শোর এক ঘণ্টা, আধা ঘণ্টা আগে এসে সবাই হাজির হন। প্রফেশনালিজম ব্যাপারটা কারও মধ্যেই কাজ করে না। সবাইকে আগে এ ব্যাপারে দায়িত্ববান হতে হবে। সারা বছরের ডিজাইনকৃত পোশাকের কথায় যদি আসি তাহলে বলব, আমাদের দেশে-দেশীয় পোশাক নিয়ে অনেক ভালো কাজ হচ্ছে। মানুষের রুচি বদলাচ্ছে। আগে মানুষ মনে করত, কোনো ডিজাইনারের পোশাক অনেক এক্সপেনসিভ হবে। এ ধারণায় পরিবর্তন এসেছে। সবাই এখন দেশি কাপড়েই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন।
বুলবুল টুম্পা
আমি মনে করি, যতদিন যায় তত কাজ ভালো হয়। ইদানীং ইন্ডাস্ট্রির অনেক প্রসার হচ্ছে। বিভিন্ন পত্রিকা, ম্যাগাজিন, বুটিক হাউসের প্রসারের কারণে মানুষের মধ্যে ফ্যাশন সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগে শুধু ঈদেই ফ্যাশন শোর আয়োজন করতাম আমরা। এখন প্রতিটি উৎসব যেমন_ বৈশাখ, ফাল্গুন, বিজয় দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারিতে বিভিন্ন শোর আয়োজন করা হয়। আমাদের ইন্ডাস্ট্রি প্রসারের জন্য একটি এজেন্সি থাকা খুবই জরুরি। এজেন্সির মাধ্যমে কোরিওগ্রাফাররা শোর জন্য মডেল নেবেন। এখন মডেলকে বলতে হয়, আমি মডেল। যেই র‌্যাম্পে হাঁটেন সেই মডেল। অথচ মডেল হওয়া এত সহজ নয়। অনেক দিন কাজ করার পর কোনো ভালো ব্র্যান্ডের মডেল হলে তখন তাকে মডেল বলা হয়। কিন্তু এ রকম কোনো সিস্টেম আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে নেই। এজেন্সির অভাবে যে যে রকম পাচ্ছেন তিনি সেভাবে শো করছেন। এতে শোর পরিমাণ তো বাড়ছে। তবে প্রশিক্ষিত মডেল পাওয়া যাচ্ছে না_ যাদের দ্বারা ইন্ডাস্ট্রির প্রসার হবে। আমাদের দেশে সব কিছুরই এজেন্সি আছে। নাচের ইনস্টিটিউট, গানের ইনস্টিটিউট, অভিনয়ের জন্য মঞ্চ রয়েছে_ র‌্যাম্পের জন্য কোনো ইনস্টিটিউট নেই। শেখার সুযোগ করে না দিলে ভালো মডেল কী করে পাব?
সানজিদা হক আরেফিন লুনা
২০১১ সালটি আমার জন্য অনেক ভালোই ছিল। অনেক শো আমি করেছি। সবচেয়ে ভালো লেগেছে, আমরা সব ট্রাডিশনাল পোশাক নিয়ে এ বছর কাজ করেছি। মোগল আমলের পোশাক, জামদানি, ষাট, সত্তর, আশির দশকের কালেকশন ছিল আমাদের শোতে। লং কামিজের প্রদর্শনী এবার বেশি ছিল। আগেরকার ডিজাইনগুলোই মোডিফাই হয়ে এ বছর এসেছে। সাধারণত মডেলদের পেমেন্ট নিয়ে শোগুলোতে অনেক সমস্যা হয়। এ বছর সে রকম কোনো সমস্যায় আমাকে পড়তে হয়নি। তবে এ ইন্ডাস্ট্রিতে মডেলদের বাছাই নিয়ে আমার আপত্তি রয়েছে। যিনিই পারছেন তিনিই র‌্যাম্পে উঠছেন। মডেলদের মিনিমাম একটা হাইটের প্রয়োজন। যে কোনো হাইটের মেয়েরাই আমাদের দেশে এখন মডেল। যদিও বাংলাদেশের মেয়েদের হাইট ততটা বেশি নয় তবুও যেহেতু এ প্রফেশনের ক্ষেত্রে হাইটের প্রয়োজন রয়েছে সেহেতু হাইটটা এড়িয়ে চললে তো হবে না। মডেলদের মিনিমাম ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি হওয়া উচিত। এ বাছাইয়ের কাজ তো কোরিওগ্রাফারের নয়। এ জন্য প্রয়োজন একটি এজেন্সির। সেখানে প্রধান শর্ত থাকবে মিনিমাম ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি হাইট না হলে কেউ মডেল হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন না।

No comments

Powered by Blogger.