যেমন ছিল সাজ

সৌন্দর্যচর্চার ধরন ও অনুষঙ্গে পরিবর্তন আসে প্রতিনিয়তই। কেমন ছিল চলতি বছরের রূপচর্চার ধরন? সাজে কোন ট্রেন্ডটাই বা চলেছে বেশি? রূপ বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে লিখেছেন ইসরাত জাহান বছরজুড়ে ছিল ইকো ফ্রেন্ডলি কসমেটিসের প্রাধান্য। এ বছর মেকআপের আবরণ অনেকটাই হালকা হয়ে আসে। ন্যাচারাল লুকের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয় সত্যিকার সৌন্দর্য। এতে যে ঔজ্জ্বল্য ও চাকচিক্যের ঘাটতি ছিল তা কিন্তু নয়। মিহি মেকআপের


প্রলেপ ছিল এ বছরের বিউটির মূল বৈশিষ্ট্য_ জানান রূপ বিশেষজ্ঞরা। গ্গ্নসি লিপস্টিককে বিদায় দিয়ে সে জায়গায় চলে এসেছে ন্যাচারাল লিপস্টিকের শেডগুলো। বছরের বিউটি ট্রেন্ড নিয়ে বিউটি এক্সপার্ট ও পারসোনার ম্যানেজিং ডিরেক্টর কানিজ আলমাস খান জানান, 'মেকআপের ক্ষেত্রে বেইজ ছিল খুব ন্যাচারাল। লিপ ছিল লাল কিংবা মেরুনের মতো ডার্ক কালারের, যেটি অনেক দিন পর ফিরে আসে। পাশাপাশি হালকা রঙগুলোও ছিল। চোখের সাজে ছিল স্মোকি ও লাইট কালারের সমন্বয়। কাজলের ব্যবহার থাকলেও আইলাইনারের ব্যবহার কম ছিল। আইশ্যাডো ছিল স্মোকি। এতে কালোর সঙ্গে অন্যান্য রঙের ব্যবহার হয়েছে। বছরের কিছু সময় চোখের পাতাজুড়ে গোলাপি, সবুজ ও নীলের মতো একক রঙগুলোর দাপটও দেখা গেছে। এ বছর গ্গি্নটারের ব্যবহার কম হয়েছে। তবে ঠোঁটে গ্গ্নস ছিল বেশ জনপ্রিয়। বেইজ একদম ন্যাচারাল থাকলেও তাতে উজ্জ্বলতা ছিল। হেয়ার স্টাইলেও ন্যাচারাল লুক ছিল বেশি। চুল বাঁধার চেয়ে খোলা রাখার প্রবণতা ছিল চোখে পড়ার মতো। স্ট্রেইট চুলের পাশাপাশি কার্ল বা কোঁকড়া চুলের জনপ্রিয়তাও ছিল লক্ষ্যণীয়। চুলের এক্সেসরিজ হিসেবে ছিল চওড়া হেয়ার ব্যান্ড, নানা ধরনের আর্টিফিসিয়াল অনুষঙ্গ_ যা পেছনের দিকে না দিয়ে চুলের সামনে ক্লিপ দিয়ে পরা হয়েছে।
রূপ বিশেষজ্ঞ ফারজানা শাকিল বলেন, আন্তর্জাতিক বিউটি ইন্ডাস্ট্রির প্রভাব আমাদের এখানেও পড়ে। গত বছর টিপিক্যাল স্টাইল থেকে বের হয়ে সবাই ন্যাচারাল লুকের দিকে প্রাধান্য দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি আলোড়ন ছিল হেয়ার স্টাইলে। লং ও শর্ট লেয়ারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভলিউম লেয়ার, স্লাইস লেয়ার ও স্যাগি হেয়ার কাট। মিল্ক রিবন্ডিংয়ের প্রতি সবার আগ্রহ ছিল। বছরজুড়ে ছেলেদের হেয়ার স্টাইলেও প্রভাব ছিল লেয়ার কাটের। সেলিব্রিটিদের প্রভাবে তরুণদের হেয়ার স্টাইলে জায়গা করে নেয় বেকহামের স্পাইক কাট। লম্বা চুলের চেয়ে মাঝারি ও ছোট চুল বেশি দেখা গেছে। পুরনো বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় গেল বছরেও চুলে কালার ব্যবহৃত হয়েছে। হালকা ও গাঢ় দুই ধরনের রঙই দেখা গেছে। বেশি ব্যবহৃত হয়েছে গোলাপি, সোনালি, ধূসর, নীল, লালসহ অন্যান্য উজ্জ্বল রঙ। রিবন্ডিংয়ে যুক্ত হয়েছে কালার ও সাইনি রিবন্ডিং। চুলে ট্রেন্ডি লুক আনতে বেইজসহ স্টিক লাগিয়ে নেওয়ার প্রতিযোগিতা দেখা যায় বছরজুড়ে।
নখের জন্য ছিল ফ্রেঞ্চ মেনিকিউর, নেইল আর্ট, রিং ও অ্যাক্রেলিক। নেইল পলিসের কালারের ক্ষেত্রে সবাই ডার্ক প্লামস, রেড, গ্রে, ডিপ পার্পল, নেভি বল্গু, ডার্ক ব্রাউন, ডার্ক অরেঞ্জ ইত্যাদি রঙই বেছে নিয়েছেন। নেইল কাটে স্কয়ার সেপ ছিল ট্রেন্ডি। নিয়মিত অন্যান্য সেপও ছিল। চোখে ও ঠোঁটে গ্গি্নটারের ব্যবহার আগের বছরের তুলনায় কম দেখা গেছে। ইয়ার রিংয়ের ট্রেন্ড ছিল ওভারসাইজড ইয়ার রিং। পাশাপাশি চলেছে মুক্তার ড্রপ ইয়ার রিং ও ভিজেটজ ক্লিপ ইয়ার রিং।
রূপ বিশেষজ্ঞ আফরোজা কামাল জানান, চুলের কাটে ভলিউম লেয়ারের দাপট ছিলো প্রচণ্ড। দেখা গেছে চুল কাটতে যারা আসছেন তাদের মধ্য শতকরা আশি ভাগই ভলিউম লেয়ার পছন্দ করছেন। কেউ ছোট লেয়ার আবার কেউ বব কাটে ভলিউম লেয়ার নিয়েছেন। মেকআপের ক্ষেত্রে রঙের ছোঁয়া বেশি ছিল বলে মনে করেন তিনি। আবার সাজ রঙিন হলেও স্বাভাবিক সৌন্দর্যের রেশটুকু ছিল পুরোপুরিই। যেমন দেখা গেছে স্কিন বা বেস একদম ন্যাচারাল হলেও চোখে ফুটে উঠেছে গাঢ় সাজ।
রূপ বিশেষজ্ঞ তানজিমা শারমিন মিউনী জানান, চুল সাজানোর ফ্যাশনে টিনএজাররা ইমো কাটকে প্রাধান্য দিয়েছে বেশি। এছাড়া অন্যান্য ট্রেন্ডি কাট যেমন শ্যাগি, বব কাটের উপস্থিতি তো ছিলোই। মেকআপে সবার পছন্দ ছিল উজ্জ্বল ও ন্যাচারাল সাজ। যেমন বউ সাজের মতো ভারী সাজ নিতে এসেও কেউ কেউ চেয়েছেন স্বাভাবিক সৌন্দর্যের ছোঁটাই। সব মিলিয়ে পুরো বছরের বিউটি বাজারের আলোচনায় কেন্দ্র ছিল ন্যাচারাল বিউটি।

No comments

Powered by Blogger.