পবিত্র কোরআনের আলো-আক্রান্ত হলে যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে না যাওয়ার নির্দেশ

৪. যা-লিকুম্ ফাযূক্বূহু ওয়া আন্না লিলকা-ফিরীনা আ'যা-বান না-র।
১৫. ইয়া-আইয়্যুহাল্লাযীনা আ-মানূ ইযা লাক্বীতুমুল্লাযীনা কাফারূ যাহফান ফালা তুওয়াল্লূহুমুল্ আদ্বা-র।
১৬. ওয়া মান ইউওয়ালি্লহিম ইয়াওমায়িযিন দুবুরাহূ ইল্লা মুতাহার্রিফাল্ লিকি্বতা-লিন আও মুতাহায়্যিযান ইলা ফিআতিন ফাক্বাদ্ বা-আ বিগাদ্বাবিম্ মিনাল্লা-হি ওয়া মা'ওয়া-হু জাহান্নাম্; ওয়া বি'ছাল মাসীর।
১৭. ফালাম তাক্ব্তুলূহুম ওয়া লা-কিন্নাল্লা-হা ক্বাতালাহুম; ওয়া মা রামাইতা ইয্ রামাইতা ওয়া লা-কিন্নাল্লা-হা রামা; ওয়া লিইউব্লিইয়াল্ মু'মিনীনা মিনহু বালা-আন হাছানা-; ইন্নাল্লা-হা ছামীউ'ন আ'লীম। [সুরা : আল- আনফাল, আয়াত : ১৪-১৭]

অনুবাদ : ১৪. (হে কাফেররা!) এটা তোমাদের প্রাপ্য, সুতরাং তোমরা এর স্বাদ ভোগ কর। কাফেরদের জন্য জাহান্নামের শাস্তি তো অবশ্যই রয়েছে।
১৫. হে মুমিনরা, যখন তোমরা কাফেরদের সঙ্গে সংঘাতে মুখোমুখি হও, যখন তারা আক্রমণ করে, তখন পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করো না।
১৬. তবে কেউ যদি সমর কৌশল হিসেবে এ রকম করে অথবা সে নিজ দলের সঙ্গে গিয়ে মিলিত হতে চায়, সেটা ভিন্ন কথা। (অর্থাৎ তখন সেটা করাই যেতে পারে) এ ছাড়া যে ব্যক্তি সেদিন পলায়ন করে, সে আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্রোধ নিয়ে ফিরবে এবং তার ঠিকানা জাহান্নাম। কত নিকৃষ্ট সেই জায়গা।
১৭. যুদ্ধে যেসব কাফের নিহত হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে তোমরা তাদের হত্যা করোনি, বরং আল্লাহই তাদের হত্যা করে দিলেন। (হে নবী!) যখন আপনি তাদের প্রতি অস্ত্র নিক্ষেপ করেছিলেন তখন তা আপনি নিক্ষেপ করেননি; বরং আল্লাহই নিক্ষেপ করেছিলেন। এর মাধ্যমে তিনি মুমিনদের উত্তম প্রতিদান দিতে চেয়েছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা সব কিছু শোনেন এবং সব কিছু সম্পর্কে জ্ঞাত।

ব্যাখ্যা : ১৫ ও ১৬ নম্বর আয়াতে ন্যায়-যুদ্ধ বা শান্তির জন্য যে যুদ্ধ প্রয়োজন এর প্রতি নৈতিক সমর্থন ব্যক্ত করা হয়েছে, এর অপরিহার্যতার দিকটিও তুলে ধরা হয়েছে। ১৫ নম্বর আয়াতে ন্যায়-যুদ্ধ কোনটি, এর প্রাথমিক লক্ষ্য বর্ণনা করে প্রতিপক্ষের চ্যালেঞ্জ সাহসিকতার সঙ্গে গ্রহণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ১৬ নম্বর আয়াতে রণনীতি ও রণকৌশলের আরো কিছু মৌলিক জ্ঞাতব্য তুলে ধরা হয়েছে। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন সর্বাবস্থায়ই অগ্রহণযোগ্য এবং নিন্দনীয় হতে পারে, শত্রু সৈন্যের সংখ্যা অনেক বেশি বা নিজেদের শক্তি সামর্থ্য অনেক কম। কিন্তু আক্রান্ত হলে মোকাবিলা করতে হবে এটা ইসলামের যুদ্ধসংক্রান্ত মৌলিক বিধান। বদরের যুদ্ধের সময়কার অবস্থাটা এ রকমই হয়েছিল। এটা ইসলামের মৌলিক নীতি-নির্ধারণসংক্রান্ত একটা নজির। অবশ্য পরবর্তীকালে হুকুম ঠিক এমন থাকেনি। অবস্থাভেদে বিধান পরিবর্তিত করা হয়েছে। এ সূরার ৬৫-৬৬ নম্বর আয়াতে এ ব্যাপারে আরো কিছু বর্ণনা আছে। সে আলোকে এখন বিধান এই যে, শত্রু সৈন্য সংখ্যা যদি দ্বিগুণ বা তার কাছাকাছি হয়, তবে যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করা বা পরাজয় স্বীকার করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু তাদের সংখ্যা শক্তি যদি দ্বিগুণেরও বেশি হয় তখন যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে যাওয়ার বা বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুমতি আছে।
যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন না করার যে নির্দেশটি দেওয়া হয়েছে, এর দুটি ব্যতিক্রমের কথা বলা হয়েছে ১৬ নম্বর আয়াতে। ব্যতিক্রম দুটি হলো : (১) অনেক সময় যুদ্ধকৌশল হিসেবে যুদ্ধ চলা অবস্থায় পেছনে চলে আমার প্রয়োজন দেখা দেয়। এটা যদি যুদ্ধ থেকে পলায়নের উদ্দেশ্যে না হয়, মোকাবিলার কৌশল পরিবর্তনের জন্য হয়, তবে তা অবশ্যই সমর্থনযোগ্য। বিশেষ করে বড় যুদ্ধের ক্ষেত্রে এ ধরনের কৌশল পরিবর্তন বিজয় অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। (২) অনেক সময় অগ্রগামী কোনো ছোট দল পেছনে সরে এসে নিজেদের মূল বাহিনীর সঙ্গে মিলিত হয়। এটা যদি কৌশলগত সুবিধা অর্জনের জন্য হয়, তবে অবশ্যই সমর্থনযোগ্য। এ ধরনের পৃষ্ঠপ্রদর্শন প্রকৃত অর্থে পৃষ্ঠপ্রদর্শন বা পলায়ন নয়।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.