প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার ফল-ছোটদের আকাশছোঁয়া জয়, অভিনন্দন

প্রাথমিক ও এবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ফল গত ২৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত হয়েছে। এ বছর প্রাথমিকে পাসের হার ৯৭.২৬ শতাংশ এবং এবতেদায়িতে ৯১.২৮ শতাংশ। এবারই প্রথম গ্রেডিংয়ের (জিপিএ) ভিত্তিতে ফল প্রকাশ করা হলো। প্রাথমিকে জিপিএ ৫ পেয়েছে এক লাখ পাঁচ হাজার ৬৭৩ জন। অন্যদিকে এবতেদায়িতে দুই হাজার ১৫০ জন শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছে। সন্দেহ নেই, এই ফল ছোটদের অনেক বড় সাফল্য। শিশু শিক্ষার্থীরা জীবনের প্রথম


পাবলিক পরীক্ষায় অবশ্যই স্মরণীয় সাফল্য ছিনিয়ে এনেছে। তাদের অভিনন্দন এবং তাদের এগিয়ে যাওয়ার পথ হোক আরো কুসুমাস্তীর্ণ।
জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরো বেশি হতো, যদি গ্রেডিংয়ের ধারণাটা পরিষ্কার থাকত। পরীক্ষার মাত্র কয়েক দিন আগে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এক পরিপত্রের মাধ্যমে জানানো হয়েছিল, এবার থেকে ফল গ্রেডিং পদ্ধতিতে প্রকাশ করা হবে। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ কিংবা স্পষ্ট নির্দেশনা ছিল না। ফলে শিক্ষকরা, বিশেষ করে যাঁরা মফস্বলে রয়েছেন, তাঁরা উত্তরপত্র মূল্যায়ন করতে কিছুটা হোঁচট খান। তার পরও যে সাফল্য পাওয়া গেল, তা প্রশংসনীয়। প্রাথমিকের সব ধারায় মোটামুটি একই ধরনের বই পড়ানো হয়। কিন্তু শিক্ষক ও অভিভাবকদের যত্ন এবং শিক্ষার পরিবেশের কারণে একেক ধরনের স্কুলে ফল হয়েছে একেক রকম। অর্থাৎ যেখানে শিক্ষার্থীর যত্ন বেশি, সেখানে ফল তত ভালো। এ থেকে শিক্ষা নিতে হবে। সন্দেহ নেই, প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে পাঠদান, শিক্ষকদের মনোনিবেশ, পেশাদারি, সরকারের নজরদারি ইত্যাদির অনেক উন্নতি ঘটেছে। এসব কারণেই ঝরে পড়ার সংখ্যাও হ্রাস পেয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের আরো বেশি সচেতন হতে হবে। আজকের শিক্ষার্থীরাই আগামী দিনের শক্তি। তাদের গড়ে তুলতে হবে সম্মিলিত প্রয়াসে। সারা দেশে এবার ৬৮ হাজার ৬২৯টি বিদ্যালয় থেকে শতভাগ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। গতবার শতভাগ পাস করা বিদ্যালয় ছিল ৫১ হাজার ৫৭৬টি। শতভাগ পাসের বিপরীতে ৩৭১টি স্কুল থেকে কোনো শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হতে পারেনি। এ বিষয়টি বিশেষভাবে আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ফল প্রকাশের মধ্য দিয়ে যে চিত্র ফুটে উঠেছে, তা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। বলা যায়, মেধার চমকে চমকিত দেশ। এবতেদায়িতে পাসের যে হার লক্ষ করা গেছে, তাও উজ্জ্বল চিত্র। নতুন শিক্ষানীতির আলোকে একটি আধুনিক, মননশীল জাতি গঠনে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। একমাত্র শিক্ষার আলোই দূর করতে পারে সমাজের পরতে পরতে জমে থাকা সব অন্ধকার। শিশুশিক্ষার বেহাল চিত্র অনেকটাই পাল্টে গেছে সংশ্লিষ্ট সবার ঐকান্তিক চেষ্টায়। এবারের ফল মূল্যায়নক্রমে এ ধারা আরো বেগবান করতে নতুন ভাবনাচিন্তার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার সামগ্রিক উন্নয়নে আরো জোরদার পদক্ষেপই আমাদের সব প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.