প্রাথমিকে বিস্ময়কর সাফল্য-এই ধারা অব্যাহত থাকুক

দেশের সবচেয়ে বড় পাবলিক পরীক্ষায় এবার ছোট্টমণিরা পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক থেকে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। প্রশ্ন আসতে পারে, দেশের প্রাথমিকে শিক্ষার মান কি হঠাৎ করে এতটা বেড়ে গেল যে, সমাপনী পরীক্ষায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা এই অভাবিত সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে? হ্যাঁ, অবশ্যই। শিক্ষক ও অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের প্রতি অধিক নজর দিয়েছেন এবং তাদের যত্ন নিয়েছেন বলেই এবার বিস্ময়কর সাফল্য অর্জিত হয়েছে।


তবে ফলের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, বেসরকারি ও সাহায্য সংস্থা পরিচালিত আনন্দ স্কুলের শিক্ষার্থীদের ফল উল্লেখ করার মতো নয়। তারা পাস ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তি_ উভয় ক্ষেত্রেই খারাপ করেছে। এর প্রধান কারণ, এখানকার শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হয় হাজার-বারোশ' টাকার মতো। আর যারা শিক্ষার্থী তারা সবাই ছিন্নমূল, গরিব। আনন্দ বিদ্যালয়ে যেসব শিশু ভর্তি হয় তাদের অনেককেই আবার সমাপনী পরীক্ষার সময় খুঁজে পাওয়া যায় না। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীপিছু শিক্ষকের সংখ্যা বৃদ্ধি, শিক্ষকদের উপযুক্ত বেতন প্রদান এবং একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের জন্য খাবারসহ আনুষঙ্গিক সহায়তার ব্যবস্থা করা গেলে এরাও প্রধান ধারার স্কুলের শিক্ষার্থীদের মতোই ভালো ফল করতে সক্ষম হবে। সরকার ও এনজিওগুলোর উচিত এ ব্যাপারে সম্মিলিতভাবে এর অর্থ জোগানদাতা বিশ্বব্যাংক ও এডিবির দৃষ্টি আকর্ষণ করা। তা ছাড়া এসব ছিন্নমূল শিশুকে শিক্ষা প্রদানে সরকারেরও দায়িত্ব রয়েছে। ভালো ফলপ্রাপ্তির মধ্যে যেসব স্কুল এগিয়ে রয়েছে সেগুলোর মধ্যে প্রশিক্ষণ স্কুল, মাধ্যমিকের সঙ্গে যুক্ত প্রাথমিক স্কুল এবং ব্র্যাক স্কুল প্রথম সারিতে রয়েছে। এসব স্কুলে শিক্ষার পরিবেশ ভালো, শিক্ষকরা পড়ান ভালো আর অভিভাবকরাও তাদের সন্তানের পড়াশোনার বিষয়ে যত্ন নেন। সরকারি বিদ্যালয় বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকদের উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে এবং তাদের শিক্ষার্থীদের প্রতি আরও মনোযোগী হতে বাধ্য করা গেলে গরিব ও নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানও অর্থবান পরিবারের সন্তানের মতোই পরীক্ষায় সফল হতে পারবে। আরও যত্ন ও শিক্ষার মানোন্নয়নের মাধ্যমে এই সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। যারা এবার অকৃতকার্য হয়েছে তারা যাতে ঝরে না যায় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে যত্নবান হতে হবে। প্রাথমিকে বিস্ময়কর সাফল্যের জন্য শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের অভিনন্দন।

No comments

Powered by Blogger.