বরগুনা শহরের ২০০ কোচিং সেন্টারের ‘শিক্ষাবাণিজ্য’

রগুনা শহরের আনাচকানাচে প্রায় ২০০ কোচিং সেন্টার ও প্রাইভেট-টিউশনি কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। ভালো ফল করানোর আশ্বাসে বাহারি নাম আর আকর্ষণীয় সাইনবোর্ড দিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষকেরা এসব প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পালা করে পাঠদান করছেন। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রেণীকক্ষে পাঠদান কার্যক্রম


মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। জানা গেছে, শিক্ষকদের শ্রেণীকক্ষে পাঠদানে মনোযোগী করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০০৮ সালে শিক্ষকদের প্রাইভেট-টিউশনি বন্ধের জন্য একটি নির্দেশনা জারি করে। কিন্তু বরগুনায় এ নির্দেশনা উপেক্ষা করে বিভিন্ন বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষকেরা প্রাইভেট-টিউশনি ও কোচিং সেন্টার খুলে পাঠদান অব্যাহত রেখেছেন।
শহরের কলেজ সড়ক, কলেজ ব্রাঞ্চ সড়ক, ডিকেপি সড়ক, মুসলিমপাড়া, থানাপাড়া, লাকুরতলা এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় ২০০ কোচিং সেন্টার গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে কলেজ, এর আশপাশের এলাকা ও ডিকেপি সড়ক এলাকায়ই শতাধিক কোচিং সেন্টার রয়েছে। এ ছাড়া শহরের দুটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষক তাঁদের বাসায় কোচিংয়ের মতো করে প্রাইভেট পড়ান।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শহরের ডিকেপি সড়কে গোল্ডেন কোচিং, কলেজ সড়কে সৃজনশীল, কমার্স একাডেমি, শুভেচ্ছা, শহীদ তিতুমীর, প্রগতি, সাকসেস, প্রোগ্রেস, এক্সিলেন্ট কোচিংসহ অর্ধশতাধিক; কলেজ শাখা, বাগানবাড়ি ও ডিকেপি সড়ক মিলিয়ে শতাধিক এবং শহরের চরকলোনি, বটতলা, লাকুরতলা এলাকা মিলিয়ে প্রায় ২০০ কোচিং সেন্টার গড়ে উঠেছে।
সম্প্রতি কলেজ সড়কের বিজয় বৃত্তি কোচিংয়ে গিয়ে দেখা যায়, ৫০-৬০ জন শিক্ষার্থীকে দুটি কক্ষে সারিবদ্ধ করে বেঞ্চে বসিয়ে বিশেষ নোট দিয়ে পড়া মুখস্থ করানো হচ্ছে। কোচিংয়ের পরিচালক জহিরুল ইসলাম ওরফে বাদল উপস্থিত নেই। শিক্ষক জুয়েল জানান, তাঁরা ৫৫ জন শিক্ষার্থীকে স্পেশাল বৃত্তির জন্য পড়ান। শিক্ষার্থীরা জানায়, তারা এক হাজার টাকা কোচিং ফি এবং সাপ্তাহিক মূল্যায়ন পরীক্ষা বাবদ ১০০ টাকা করে ফি দেয়।
পরিচালক জহিরুল ইসলাম শহরের অদূরে রোডপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। অভিভাবক ইফতেখার শাহীন বলেন, ‘ছেলের লেখাপড়া নিয়ে আমি খুবই চিন্তিত। স্কুলে শিক্ষকেরা এখন আর ভালো পড়ান না। বাধ্য হয়ে বিজয় বৃত্তি কোচিংয়ে ভর্তি করিয়েছি।’
জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘ভাই, আমার বাড়িতে এক তিল জমিজমা নেই। এই দিয়ে শহরে থেকে চলতে হয়। সরকার যে বেতন দেয়, তা দিয়ে সংসার খরচ চলে না। কোচিং না থাকলে এটা সম্ভব হতো না।’
শহরের কলেজ সড়কের পশ্চিম মাথায় সানরাইজ কোচিংয়ের পরিচালক বরগুনা জিলা স্কুলের সহকারী শিক্ষক বাদল মিয়া। এখানে শ্রেণীভেদে শিক্ষার্থীপ্রতি ৬০০ থেকে এক হাজার টাকা ফি নেওয়া হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী বলে, স্যারের কাছে প্রাইভেট না পড়লে ক্লাসের পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া যায় না। অভিযোগ প্রসঙ্গে শিক্ষক বাদল মিয়া বলেন, শিক্ষার্থীদের এসব কথা সত্য নয়।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিখিল চন্দ্র গুহ বলেন, ‘কোচিং বা প্রাইভেট বন্ধের ব্যাপারে আমাদের কাছে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা নেই। তবে এটা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।’ তিনি আরও বলেন, ‘এসব বিষয়ে অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ওই সব বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি ছাড়া শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই।’

No comments

Powered by Blogger.