নীতিনির্ধারণী কাজ শেষ ॥ যাত্রা ডিজিটালে- ০ সচিবালয় থেকে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত ডিজিটালের আওতায় আনা হচ্ছে- ০ স্কুল কলেজে ল্যাবের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে by ফিরোজ মান্না

 সচিবালয় থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত ডিজিটাল পদ্ধতির আওতায় আনা হচ্ছে। আগামী এক বছরে এক হাজার ইউনিয়ন পরিষদে ফাইবার অপটিক কেবল সংযোগ দেয়া হবে।
ইন্টারনেট কানেকটিভিটি গ্রাম পর্যনত্ম পৌঁছানো হবে, মানুষ যাতে ঘরে বসে সব ধরনের সেবা পেতে পারে। স্কুল কলেজে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করে দৰ ছাত্রছাত্রী গড়ে তোলা হবে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়, ব্যাংকসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ই-গবর্নেন্সের আওতায় আনা হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে রাজধানীর হোটেল র্যাডিসনে আয়োজিত 'ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্জন : জনগণকে সংযোগ ও আন্ত:সংযোগ' শীর্ষক ধারণাপত্র প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার এ কথা বলেছেন। বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার এ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) সভাপতি হাবিবুলস্নাহ এন করিম জনকণ্ঠকে জানান, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সরকার নীতিনির্ধারণী কাজ শেষ করেছে। এখন এগুলোর বাসত্মবায়ন শুরম্ন হলে দেশ অনেক দূর এগিয়ে যাবে। বাসত্মবায়ন করাটাই হচ্ছে বড় কাজ। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ৰেত্রে এখন পর্যনত্ম আনত্মরিক অবস্থানেই রয়েছে। আগে সরকারী বিভিন্ন দফতরকে ডিজিটালাইজড করতে হবে। মানুষ যাতে ঘরে বসে সার্ভিস পেতে পারে। সবকিছু ডিজিটাল পদ্ধতিতে চললে দেশের দুনর্ীতি বহু গুণে কমে যাবে। বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়, পোস্ট অফিস, চট্টগ্রাম বন্দর, বেশ কিছু স্কুল কলেজে কম্পিউটার ল্যাব করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন দফতর ডিজিটাল পদ্ধতির আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে। সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিগুলো সরকারের এ সব উদ্যোগের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। তবে মুশকিল হচ্ছে সরকার আনত্মরিক হলেও আমলাদের এই কাজে আগ্রহ কম। কারণ ডিজিটাল হলে তাদের দুর্নীতি কমে যাবে। তখন আর ফাইল আটকে রাখতে পারবে না। যে ফাইল ১৪ টেবিল ঘুরে আসতে হয়। সেই ফাইল তখন দু'তিনটি জায়গা থেকেই কাজ শেষ হবে। তারা ডিজিটাল পদ্ধতি বাসত্মবায়নের ৰেত্রে এজন্যই আগ্রহ দেখাচ্ছে না। নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটও তারা আপগ্রেড করে না। ডিজিটাল পদ্ধতি বাসত্মবায়ন হলে সরকারী কর্মকর্তাদের কর্ম দৰতা বাড়বে। প্রশাসনে কাজের গতি আসবে। প্রশাসন হবে স্বচ্ছ। তাছাড়া ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে কাগজ এবং অতিরিক্ত জনবলের প্রযোজন হয়। কম্পিউটারে কাজ করলে এসব অপচয় থেকে মুক্ত হওয়া যাবে।
এদিকে সরকারী ওয়েবসাইটগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। একদিকে নিম্নমানের ওয়েবসাইট অন্যদিকে এসব ওয়েবসাইটে কোন তথ্যই আপগ্রেট করা হয় না। বাংলাদেশের যে ওয়েবসাইটটি রয়েছে তার অবস্থা আরও বেহাল। এখানে আপগ্রেট তথ্যের মধ্যে রয়েছে সরকারের মন্ত্রীদের নাম। বাকি তথ্যগুলো বহু পুরনো। এই ওয়েবসাইটটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পরিচালিত হয়। সরকার যেহেতু ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে চায় সেৰেত্রে সরকারী অফিস-আদালতের ওয়েবসাইটগুলো আপগ্রেট থাকা প্রয়োজন। তা না হলে জনগণের তথ্য জানার বিষয়টি অন্ধকারেই থেকে যাবে। মহাজোট সরকারের অন্যতম নির্বাচনী ইশতেহার ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া। সোয়া বছরে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজটি বহুদূর এগিয়েছে এমন বক্তব্য দিয়েছেন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা। কেন্দ্র থেকে জেলা সদর পর্যনত্ম অনেক বিষয় ডিজিটাল পদ্ধতির আওতায় আনা হয়েছে। এখন উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যনত্ম কানেকটিভিটির কাজ চলছে। কেন্দ্র থেকে দেশের ৬৪টি জেলা পর্যায়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সরাসরি কথা বলা যাচ্ছে। আগামী দিনে উপজেলা পর্যায়ে ভিডিও কনফারেন্স নিয়ে যাওয়া হবে। এর পরের ধাপে ইউনিয়ন এবং গ্রোথ সেন্টারে ভিডিও কনফারেন্স ব্যবস্থা পেঁৗছে দেয়া হবে। বর্তমান সরকার কৃষকের মধ্যেও কম্পিউটার ও ইন্টারনেট পেঁৗছে দিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। কৃষক যাতে এর মাধ্যমে সুবিধা পেতে পারেন। কোন্ জমিতে কি ফসল ফলবে তার সেবাও ইন্টারনেটের মাধ্যমে পেতে পারেন সেই সেবাও পেঁৗছে দেয়া হবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ল্যে ইউনিয়ন পর্যায়েও ইন্টারনেট ছড়িয়ে দেয়া হবে। এছাড়া স্বাস্থ্যসেবায় ইন্টারনেট সহায়তা বাড়ানোর জন্য প্রতিটি হাসপাতালে ওয়েবক্যাম, ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া হবে। মানুষ যাতে ই-মেডিসিনের মাধ্যমে সহজেই স্বাস্থ্যসেবা পায়। বর্তমানে ৫৬টি জেলার ২৯৬টি উপজেলায় ফাইবার অপটিক কেবল সংযোগ রয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি সেবা তৃণমূল পর্যায় পর্যনত্ম পেঁৗছে দিতে সরকার ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ৰেত্রে চীন সব ধরনের সহযোগিতা দেবে।
অন্যদিকে, সরকার গ্রামাঞ্চলে উন্নততর যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রবর্তনের লৰ্যে দেশের সকল ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়কে ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্কের আওতায় আনার ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে এক শ'টি ইউনিয়ন পরিষদকে ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্কের আওতায় আনার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী এক বছরের মধ্যে আরও এক হাজার ইউনিয়ন পরিষদ এই নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে। ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে তাঁর সরকারের ঘোষিত ভিশন বাসত্মবায়নে সকল উপজেলা হাসপাতালে কম্পিউটার সরবরাহ এবং ওয়েব ক্যামেরাসহ ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি দেশের শিৰা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দেড় হাজার ল্যাপটপ দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল শিৰা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হবে। সরকার ইতোমধ্যে আইসিটি পলিসি-২০০৯ অনুমোদন দিয়েছে এবং দেশে আইসিটি শিল্পের বিকাশ ত্বরান্বিত করতে আইসিটি এ্যাক্ট-২০০৯ প্রণয়ন করেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ এবং ৬৪ জেলা প্রশাসক ও ৭ বিভাগীয় কমিশনারের মধ্যে যোগাযোগ সহজ করতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ভিডিও কনফারেন্স সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা নেয়া হবে। গাজীপুরে হাইটেক পার্কের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি এবং সমগ্র দেশ ই-গবর্নেন্সের আওতায় আনতে দেশজুড়ে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা শক্তিশালী করা হচ্ছে। স্যাটেলাইট স্থাপনে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ৰেত্রে ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন্স ইউনিয়ন (আইটিইউ) সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামদুন আই তুরে আইটিইউ সহযোগিতা দেবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করার কথাও বলেছেন।
ডিজিটাল মেলা ॥ আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানী ঢাকায় শুরম্ন হচ্ছে তিন দিনব্যাপী 'ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা'। লৰ্য মহাজোট সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রম্নত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কার্যক্রম আরও বেগবান করা। সরকারী সেবাকে সহজ, দ্রম্নত ও স্বল্পমূল্যে জনগণের দোরগোড়ায় পেঁৗছে দেয়া। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরাই এ মেলার অন্যতম উদ্দেশ্যে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
কাল সকাল সাড়ে ১০টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটারে এ মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইউএনডিপির (জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী) অর্থায়নপুষ্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রাম এবং বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এ মেলার আয়োজন করছে।
ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা উপলৰে মঙ্গলবার বিকেলে এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেন মেলা আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ আবদুল করিম। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মুখ্য সচিব ছাড়াও বক্তব্যে রাখেন প্রধানমন্ত্রীর একানত্ম সচিব-১ নজরম্নল ইসলাম খান, তথ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ সচিব আবদুর রব হাওলাদার, প্রধান তথ্য কর্মকর্তা এ কে এম শামীম চৌধুরী এবং প্রধানমন্ত্রী উপ প্রেস সচিব মাহবুবুল হক শাকিল।
মুখ্য সচিব মেলার সার্বিক বিষয় তুলে ধরে বলেন, ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ৮২টি স্টল এবং বেসরকারী ৫টি সংস্থার ২০টি স্টল থাকবে। টেলিভিশন, রেডিও এবং দৈনিক পত্রিকার জন্যও স্টল রাখা হয়েছে। তিনি জানান, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিল পরিশোধ, ঘরে বসে রেলের টিকেট কেনা, গ্রামে বসে উপজেলার ডাক্তারের কাছ থেকে চিকিৎসা নেয়া, মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করে শিক প্রশিণ ও শিার মান উন্নয়ন, ইন্টারনেট থেকে ইউনিয়ন পরিষদে জীবন ও জীবিকাভিত্তিক গুরম্নত্বপূর্ণ তথ্য এবং সেবাসহ নানা উদ্ভাবন স্থান পাচ্ছে মেলায়।

No comments

Powered by Blogger.