মোবাইলের সাহায্যে গাড়ি চুরি নিয়ন্ত্রণের প্রযুক্তি উদ্ভাবন by শাহীন রহমান

একজন স্বশিক্ষিত বিজ্ঞানী মোঃ সালাউদ্দিন। লেখাপড়া বেশিদূর না করলেও ছোটকাল থেকেই বিজ্ঞানের বিভিন্ন গবেষণায় মগ্ন থাকতেন। আর এ নেশা থেকেই বেশিদূর লেখাপড়া না শিখেও আবিষ্কার করেছেন বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি।
তার আবিষ্কৃত এসব প্রযুক্তি সময়ের প্রেক্ষাপটে খুবই প্রয়োজনীয় ও অত্যাবশ্যক মনে করছেন অনেকেই। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্পগবেষণা পরিষদ আয়োজিত শিল্প, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় তাঁর আবিষ্কৃত প্রযুক্তি আকর্ষণ করেছে অনেককেই।
বাংলাদেশে মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীর সংখ্যা কম নয়। দিনে দিনে বাড়ছে মোটরসাইকেলের ব্যবহার। তাছাড়া মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে সচ্ছল পরিবারের প্রাইভেট কার ও মাইক্রো গাড়িসহ বিভিন্ন গাড়ির ব্যবহার বাড়ছে। কিন্তু প্রতিনিয়ত গাড়ি চুরির সংখ্যা বাড়ছে। ফলে কেউ একেবারে নির্বিঘেœ গাড়ি ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে পারছেন না। এসব গাড়ি মালিকদের গাড়ির নিরাপত্তা বিধানে সালাউদ্দিন তৈরি করেছেন মোবাইল ফোনের সাহায্যে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি। কোন চোর যদি কারও গাড়ি চুরি করতে যায় তাহলে এ প্রযুক্তি ব্যবহারে চুরির আগেই মালিক জেনে যাবেন বিষয়টি। তাছাড়া চুরি যাওয়া গাড়িটির অবস্থান সম্পর্কে সঙ্গে সঙ্গে তথ্য পেয়ে যেতে পারেন যে কেউ। এছাড়া বিভিন্ন কারণে অনেকে দীর্ঘদিন গাড়ি ব্যবহার করেন না। কিন্তু প্রতিদিন একবার হলেও গাড়ি স্টার্ট করতে হয়। তা না হলে গাড়ির ইঞ্জিন ঠা-া হয়ে স্টার্ট নাও হতে পারে। আবার কেউ দূরে অবস্থান করলে গাড়ি স্টার্ট করা সম্ভব নাও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে একই প্রযুক্তি ব্যবহার করে গাড়ি স্টার্ট ও বন্ধ করা যাবে। বিদেশ থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
স্বশিক্ষিত বিজ্ঞানী সালাউদ্দিন এ প্রযুক্তির নাম দিয়েছেন মোবাইলের সাহায্যে গাড়ির নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ। এই নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজন একটি মাত্র ডিভাইস। যা মোটরসাইকেল বা গাড়ির সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। ডিভাইসের পাসওয়ার্ড থাকবে মোবাইল ফোনের সঙ্গে সংযুক্ত। গাড়ি কেউ চুরি করলে সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সংকেত পাঠাবে ডিভাইস থেকে। আবার দূর থেকে মোবাইলের মাধ্যমে পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেই গাড়ি স্টার্ট অন অফ করা যাবে। সেক্ষেত্রে কারও গাড়ি থাকবে নিরাপদ। চুরি হয়ে যাওয়ার কোন ভয় নেই।
মেহেরপুরের গাংনি থানার মোহম্মদপুর গ্রামে জন্ম স্বশিক্ষিত বিজ্ঞানী মোঃ সালাউদ্দিনের। লেখাপড়া করেছেন মাত্র এসএসসি পর্যন্ত। আগে থেকে পরিবারের ইলেক্ট্রনিক হার্ডওয়্যারের দোকান ছিল। এ দোকানে কাজ করার সময় বিজ্ঞানের আবিষ্কারের দিকে ঝুঁকে পড়েন সালাউদ্দিন। গাড়ি নিরাপত্তা প্রযুক্তি ছাড়া তিনি আবিষ্কার করেছেন ব্যাটারি ও সেলফ স্টার্টের সেফটি ডিভাইস। অনেক সময় গাড়িতে তেল বা জ্বালানি না থাকলে গাড়ি স্টার্ট হতে চায় না। এ কারণে অনেক সময় গাড়ির ভেতরে থাকার ব্যাটারিতে চাপ পড়ে ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তবে এ প্রযুক্তি ব্যবহারে সে ক্ষতির কোন আশঙ্কা নেই। গাড়ির ইঞ্জিনের নিরাপত্তার জন্য তৈরি করেছেন সেফটি ডিভাইস। এ প্রযুক্তি ব্যবহার করলে ইঞ্জিন অতিরিক্ত গরম হয়ে বন্ধ হয়ে যাবে না। ফলে নিরাপদ থাকবে গাড়ি। এছাড়া তিনি আবিষ্কার করেছেন অটো টিউবওয়েল পদ্ধতি। এ পদ্ধতি পানি তুলতে বার বার মোটর স্টার্ট করতে হবে না। এটি পরিচালনার জন্য অতিরিক্ত কোন লোকের দরকার হবে না। বিদ্যুত চলে গেলে যেমন পানি তোলা বন্ধ হয়ে যাবে তেমনি আবার বিদ্যুত ফিরে আসলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই অটো টিউবওয়েল চালু হয়ে যাবে। তিনি জানান এ পদ্ধতিতে খরচ কম। মোটর নষ্ট হওয়ার কোন ভয় নেই।
সালাউদ্দিন জনকন্ঠকে বলেন, তার ইচ্ছা রয়েছে বায়ুশক্তি ব্যবহার করে গাড়ি চালানোর প্রযুক্তি আবিষ্কার করা। যাতে গাড়িতে তেলের কোন প্রয়োজন না হয়। তিনি বলেন, তার উদ্ভাবিত প্রযুক্তি মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চান। এজন্য সরকার বা সংশ্লিষ্টদের সাহায্যের একান্ত প্রয়োজন। একাজে সাহায্য সহায়তা পেলে তিনি তার গবেষণাকে অনেকদূর নিয়ে যেতে পারবেন বলে জানান।
স্বশিক্ষিত বিজ্ঞানীর পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এ মেলায় রয়েছে খুদে বিজ্ঞানীদেরও মিলন মেলা। এসব খুদে বিজ্ঞানী তাদের আবিষ্কারে বিভিন্ন মডেল তুলে ধরছেন মেলায়। নটর ডেম কলেজের দু ছাত্র অনিক ও তৌফিক তৈরি করেছেন তারবিহীন বিদ্যুত সরবরাহের মডেল। এ মডেলের মাধ্যমে তারা তুলে ধরছেন মহাকাশ থেকে কিভাবে সৌরশক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুত শক্তিকে কাজে লাগানো যায়। এ মডেলে তারা তুলে ধরেছেন সোলার সংযুক্ত স্যাটেলাইট আকাশে উৎক্ষেপণ করতে হবে। এর সঙ্গে ট্রান্সমিটিং এন্টেনা সংযুক্ত থাকবে। আর পৃথিবীতে থাকবে একটি রিসিভিং এন্টেনা। সোলারের মাধ্যমে সংগৃহীত বিদ্যুত শক্তি ট্রান্সমিটিং এন্টেনার সাহায্যে রিসিভিং এন্টেনায় সরবরাহ হবে। সেখান থেকে বিভিন্ন কৌশলে তা গ্রিডে স্থাপন করা হবে। তারা বলেন, আগামীতে বিদ্যুত উৎপাদনের বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহারের কোন উপায় নেই। ফলে এখন থেকেই নতুন নতুন পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে তারবিহীন বিদ্যুত প্রবাহ একটি অন্যতম বিদ্যুত উৎপাদন পদ্ধতি হতে পারে।
বৃহস্পতিবার থেকে ধানম-ির ড. কুদরাত-এ-খুদা সড়কে বিসিএসআইআর চত্বরে আয়োজিত এ মেলা শুরু হয়েছে। তিন দিনব্যাপী আয়োজিত এ মেলা শেষ হচ্ছে আজ শনিবার। নতুন প্রজন্মকে বিজ্ঞান সচেতন, বিজ্ঞানচর্চায় উৎসাহিত করা এবং বিজ্ঞানমনস্ক করে তোলার লক্ষ্যে প্রতিবছর বিসিএসআইআর এ মেলার আয়োজন করে। এবার এ মেলায় বিভিন্ন স্কুল কলেজ, বিজ্ঞান ক্লাব ও স্বশিক্ষিত বিজ্ঞানী মিলে প্রায় ৭৪টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। এসব স্কুল কলেজের খুদে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন আবিষ্কারের মডেল তুলে ধরেছে। এছাড়া স্বশিক্ষিত ৩টি বিজ্ঞানী গ্রুপ মেলায় অংশ নিয়েছে। এ প্রতিষ্ঠান থেকে মেলায় ১৮৭টি প্রকল্প উপস্থাপন করা হয়েছে। বিসিএসআইআর-এর বিভিন্ন গবেষণা মেলায় প্রদর্শন করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.