বিন লাদেনের হত্যাকারী এখন নিরাপত্তাহীন, বেকার

আল-কায়েদার নেতা ওসামা বিন লাদেনকে হত্যাকারী মার্কিন নেভি সিলের সাবেক সদস্য এখন নিরাপত্তাহীন বেকার অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। লাদেন হত্যার পর প্রথম বারের মতো দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন
অভিযানের ওই রাতে তিনি আল-কায়েদা প্রধানকে তিনটি গুলি করেছিলেন। মার্কিন বাহিনীর পক্ষে এত সাহসিকতার কাজ করলেও এখন তাকে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে বেকার জীবন কাটাতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রতিশোধ হামলার আশংকায় তাকে সব সময় সন্ত্রস্ত থাকতে হচ্ছে। নিজের পরিচয় গোপন রেখে মার্কিন কমান্ডো এসকোয়ার ম্যাগাজিনকে দেয়া সাক্ষাতকারে প্রথম বারের মতো ২০১১ সালের মে মাসের ওই অভিযানে নিজের ভূমিকার কথা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, তাকে (লাদেন) সেই রাতে বেশ বিভ্রান্ত মনে হচ্ছিল। আমি যেমনটা ধারণা করেছিলাম তিনি তার চেয়ে খানিকটা লম্বা ছিলেন। নেভি সিল কমান্ডো বলেছেন পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে রাতের আধাতে মার্কিন কমান্ডোরা যখন লাদেনের লুকিয়ে থাকা ভবনের চতুর্থ তলায় পৌছে, আল-কায়েদা প্রধান তখন তার ছোট স্ত্রীকে সামনে ঠেলে দিয়েছিলেন। তার পাশেই একটি একে৪৭ পড়েছিল। ওই কমান্ডো বলেছেন লাদেন স্ত্রীর কাছে লাদেনকে রক্ষার জন্য কিছু ছিল কিনা বা দুজনের মৃত্যুর উদ্দেশ্যেই তাকে ঠেলে দেয়া হয়েছিল কিনা সেটা তিনি জানেন না। মার্কিন কমান্ডো বলেন, লাদেনের হাতের কাছেই একটি আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। তার পক্ষ থেকে হুমকি থাকায় আমি তাকে মাথায় প্রথম গুলি করেছিলাম। সে যাতে নিজে আত্মহত্যা না করতে পারে সেজন্যই আমি কোন সুযোগ দেইনি। তিনি বলেন ঠিক তখনই আমি তাকে কপাল লক্ষ্য করে দুবার গুলি করি। দ্বিতীয় গুলির পর সে বিছানার সামনে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এরপর তাকে আমি আরেকটি গুলি করেছিলাম। এরপর তার মৃত্যু হয়। সে নড়াচড়া করছিল না এবং তার জিহ্বা বেড়িয়ে গিয়েছিল। এসকোয়ারের নিবন্ধে অজ্ঞাত ওই নেভি কমান্ডোকে ‘শুটার’ বলে উল্লেখ করে তাকে এবং তার পরিবারের বর্তমান দুঃখ দুর্দশার ওপর জোড় দেয়া হয়েছে। এখন তিনি কোন পেনশন, স্বাস্থ্যবীমা সুবিধা বা পরিবারের জন্য বাড়তি কোন নিরাপত্তা পাচ্ছেন না। গত বছর লাদেন অভিযানে অংশগ্রহণকারি নেভি সিলের আরেক সদস্য ‘নো ইজি ডে’ নামক একটি বই প্রকাশের দীর্ঘ দিন পর এনকোয়ার ম্যাগাজিনে এ দীর্ঘ সাক্ষাতকার প্রকাশ করা হলো। গত বছর বইটি প্রকাশের পর বিব্রত পেন্টাগন কর্মকর্তারা অভিযোগ এনে বলেছিলেন এ ধরণের বই প্রকাশের মাধ্যমে নেভি সদস্য গোপন তথ্য প্রকাশ না করার শর্ত ভঙ্গ করেছেন। সেনাবাহিনীর বর্তমান বা সাবেক সদস্য কোন স্পর্শকাতর বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করতে চাইলে সেটার পাডুলিপি প্রথমে পেন্টাগনের কাছে খতিয়ে দেখার জন্য জমা দিতে হয়। তবে মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন এসকোয়ারের এ সাক্ষাতকারের কোন পাডুলিপি তাদের কাছে জমা দেয়া হয়নি। প্রতিরক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা এখন এ সাক্ষাতকারের মাধ্যমে কোন স্পর্শকাতর তথ্য প্রকাশিত হয়েছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখছেন বলে নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। অ্যাবোটাবাদের অভিযানে কোন সিল সদস্য আহত বা নিহত না হওয়ায় লাদেনের হত্যাকারি ওই অভিযানকে সফল বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু ২০১২ সালের গ্রীষ্মে নৌবাহিনী থেকে অবসর নেয়ার পর তিনি নিজের পরিবারের ওপর প্রতিশোধ হামলা এবং একজন বেসামরিক নাগরিক হিসেবে কি কাজ করে জীবন ধারণ করবেন সেটা নিয়ে এখন হতাশায় ভুগছেন। ১৬ বছর মার্কিন সেনাবাহিনীতে দায়িত্ব পালন করে অবসরে গেছেন বলে তিনি কোন ধরণের পেনশন সুবিধা পাচ্ছেন না। মার্কিন সেনাবাহিনীতে কমপক্ষে ২০ বছর দায়িত্ব পালন করলে কেবল পেনসনের সুবিধা দেয়ার বিধান রয়েছে। এ ব্যাপারে হতাশা ব্যক্ত করে লাদেন হত্যাকারি কমান্ডোর স্ত্রী বলেছেন, তিনি দেশের জন্য এতো কিছু করেছেন, আর এখন তাকে সবাই রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.