মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী সচিব এমপি কূটনীতিকদের সংহতি

যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি 'ফাঁসি' দাবিতে শাহবাগ গণআন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে তিন মিনিট নীরবতা পালন করেছেন মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, জাতীয় সংসদ ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা।
রাজধানীসহ দেশব্যাপী এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শ্রেণী-পেশার মানুষ। সবাই নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান ও রাস্তার সামনে দাঁড়িয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের নেতারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে তিন মিনিট নীরবতা পালন করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শাহবাগ গণজাগরণের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন।মন্ত্রীদের মধ্যে যারা সংহতি প্রকাশ করেন : নিজ নিজ দাফতরিক কাজ সম্পন্ন করে বিকেল চারটার আগেই শাহবাগ গণজাগরণের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে সচিবালয়ের সামনের সড়কে দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করেন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. আফছারুল আমীন, পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন প্রমুখ।
প্রতিমন্ত্রীদের সংহতি প্রকাশ : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. শাহজাহান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবি তাজুল ইসলাম, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান তিন মিনিট দাঁড়িয়ে শাহবাগের গণজাগরণের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন।
নতুন প্রজন্মের ডাকে জাতীয় সংসদ : শাহবাগ চত্বরে নতুন প্রজন্মের আহ্বানে সারাদেশের মতো জাতীয় সংসদের শতাধিক এমপি, সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পার্লামেন্ট বিটে কর্মরত সাংবাদিকরা বিকেলে ৩ মিনিট নীরবতা পালন করেন। সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে মহাজোটের এমপিরা সমবেত হতে থাকেন। পৌনে ৪টায় গোটা প্লাজার ৪টি সারিতে অবস্থান করে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিসহ বিভিন্ন ধরনের সেস্নাগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে।
এ সময় 'বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, রাজাকারে ঠাঁই নেই', 'জামায়াত-শিবির রাজাকার এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়', 'তোমার-আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা', '৭১-এর হাতিয়ার গর্জে ওঠো আরেকবার' এবং চোর-বাটপার রাজাকার এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়' ও জয়বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু এসব নানা সেস্নাগান দিতে থাকেন মহাজোট এমপিরা।
নীরবতা পালন শেষে বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেন, 'দেশ স্বাধীন করার জন্য ৬৯'এ আমরা আন্দোলন শুরু করি আর ৭১ এ স্বাধীনতা লাভ করি। আর স্বাধীনতার এত বছর পর তরুণ প্রজন্ম ঐক্যবদ্ধ হয়েছে স্বাধীনতা বিরোধীদের ফাঁসির দাবিতে। আমি তরুণ প্রজন্মকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
জাসদ নেতা মইন উদ্দিন খান বাদল বলেন, তরুণ প্রজন্মের এই আন্দোলন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। আমি এই স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের সফলতা কামনা করছি।
নীরবতায় অংশ নেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, হুইপ সাগুফতা ইয়াসমিন এ্যামিলি, আবদুর রহমান, জাতীয়র্ পাির্টর মুজিবুল হক চুন্নু প্রমুখ।
সচিবদের সংহতি প্রকাশ : সচিবালয়ের সামনে মন্ত্রিপরিষদের সঙ্গে তিন মিনিট দাঁড়িয়ে সংহতি প্রকাশ করেন শিক্ষা সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, স্থানীয় সরকার সচিব আবু আলম মো. শহিদ খান, পূর্ত সচিব ড. খন্দকার শওকত হোসেন, তথ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, নৌ-সচিব সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব এমএম নিয়াজউদ্দিন, সড়ক বিভাগের সচিব এমএএন ছিদ্দিক, ধর্ম সচিব কাজী হাবিবুল আওয়াল, খাদ্য সচিব মুশফেকা ইকফাৎ, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সচিব নববিক্রম ত্রিপুরা প্রমুখ। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, উপসচিবসহ অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও এই কর্মসূচিতে স্বতস্ফূর্তভাবে অংশ নেয়। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীরাও দাঁড়িয়ে সংহতি প্রকাশ করেছেন।
গভর্নরের নেতৃত্বে নীরব থাকল ব্যাংকিং খাত :
যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের তরুণদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা জানাল বাংলাদেশ ব্যাংকসহ ব্যাংকিং খাত। বিকেল ৪টা থেকে ৪টা ৩ মিনিট পর্যন্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীরা নীরবতা পালন করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ড. আতিউর রহমানের নেতৃত্বে নীরবতা পালন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। তিনি বিকেল ৪টার আগে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের নিচে নেমে আসেন। এ সময় আসেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালক, বিভিন্ন বিভাগের মহাব্যবস্থাপকরাসহ সব স্তরের কর্মকর্তারা। এ সময় তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গভর্নরের উপস্থিতিতে সেস্নাগান দিতে থাকেন।
এদিকে গণআন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে দেশের অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও। জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, বিশেষায়িত বেসিক ব্যাংক, বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকসহ সব প্রতিষ্ঠানের পক্ষে তিন মিনিট নীরবতা পালন করা হয়েছে। এসব ব্যাংকের বাইরে অনেক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যক্তিগতভাবে নীরবতা পালন করে।
বিচার দাবিতে একাত্মতা প্রকাশ ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্টদের
তিন মিনিটের জন্য দাঁড়িয়ে নীরবতা পলন করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্টরাও। যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবিতে পুরো দেশবাসীর সঙ্গে এ কর্মসূচি পালন করা হয় ট্রাইব্যুনাল সংলগ্ন শিশু একাডেমীর উল্টো দিকে কার্জন হলের সামনের রাস্তায়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ও তদন্ত সংস্থার সদস্য, রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ট্রাইব্যুনালের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যরা। ট্রাইব্যুনাল বিটে কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীরাও এতে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় রাস্তায় চলাচলকারী সব যানবাহন থেমে যায়। বিভিন্ন ধরনের যানবাহন থেকে নেমে এসে যাত্রী ও পথচারীরাও এ কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে দাঁড়িয়ে যান।
কূটনীতিকদের সংহতি প্রকাশ
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে তিন মিনিট নীরবতা পালন করে শাহবাগের গণআন্দোলনকারীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন। পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হকসহ মন্ত্রণালয়ের কূটনীতিক ও সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন। বিকেল ৪টা বাজার কিছু আগেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিস থেকে বেরিয়ে প্রধান ভবনের সামনে সমবেত হন। ৪টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সবাই দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন শুরু করেন। পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রী শাহবাগে গিয়ে আন্দোলনকারীদের প্রতি সমর্থন জানান। এর আগেও তিনি শাহবাগে গিয়ে আন্দোলনকারীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন।
সিপিবি ও বাসদ
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ৩ মিনিট নীরবতা পালন করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) নেতারা।
পল্টন মোড়ে সিপিবি'র অফিসের সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এবং বাসদ'র সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামানের নেতৃত্বে নেতারা সংহতি প্রকাশ করেন। এ সময় শত শত নেতাকর্মী ও সাধারণ জনতা জয় বাংলা, দুনিয়ার মজদুর এক হও, রাজাকারের ফাঁসির দাবিতে সেস্নাগান দিতে থাকে।
বনমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য
জামায়াত-শিবির জ্বলন্ত উনুনে হাত দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রতিমন্ত্রী স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু। তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শাহবাগে গণজাগরণের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সচিবালয়ের সামনে গতকাল বিকেল ৪টা থেকে ৪টা তিন মিনিট পর্যন্ত দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন শেষে এ মন্তব্য করেন।

No comments

Powered by Blogger.