বাংলাদেশে স্টিট ভিউ চালু করছে গুগল

গুগল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আওতায় অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রামের সঙ্গে গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে যুক্ত হয়ে বাংলাদেশে গুগল ম্যাপস স্ট্রিট ভিউ চালু করতে যাচ্ছে।
এই উদ্ভাবনী সেবার মাধ্যমে বাংলাদেশি এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভ্রমণকারীরা এদেশকে নতুনভাবে দেখার এক চমৎকার অভিজ্ঞতা লাভ করবেন। বাংলাদেশের অনুমোদন সাপেক্ষে গুগল ঢাকা এবং চট্টগ্রামজুড়ে স্ট্রিট ভিউ গাড়ি চালানো শুরু করতে যাচ্ছে। গাড়িটি গুগল ম্যাপস স্ট্রিট ভিউয়ের জন্য এই এলাকাগুলো হতে নানা ধরনের ছবি সংগ্রহ করবে। গুগল ম্যাপস মনে করে, বাংলাদেশে স্ট্রিট ভিউ চালু করার ফলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হওয়ার পাশাপাশি দেশের মানুষের কাছে অনলাইন মানচিত্র সেবা আরও সুবিধাজনক হবে এবং বাংলাদেশ একটি আকর্ষণীয় ও উদীয়মান পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বিশ্বব্যাপী পর্যটকদের কাছে পরিচিতি পাবে।
গুগল ম্যাপসের জনপ্রিয় সেবা স্ট্রিট ভিউ পৃথিবীর ৪০টিরও বেশি দেশে বিদ্যমান। এটি ব্যবহারকারীকে তার নিকটবর্তী এলাকার প্যানোরামিক একটি চিত্র তুলে ধরার মাধ্যমে সহজেই কোন জায়গার দিকনির্দেশনা পেতে সাহায্য করে, তাকে নিজের চোখে জায়গাটি দেখার সুযোগ করে দেয়। যে দেশগুলোতে স্ট্রিট ভিউ সুবিধা বিদ্যমান, সেখানকার ব্যবহারকারীরা গুগল ম্যাপস থেকে যে কোন এলাকার দৃশ্য জুম করে বড় আকারে দেখতে পান। বামপাশে অবস্থিত কমলা রঙের পেগমান আইকনটি টেনে এনে ম্যাপের নীল রঙ চিহ্নিত রাস্তাগুলোর ওপর বসিয়ে তারা এই সুবিধা পেয়ে থাকেন।
বিশেষ ধরনের ক্যামেরা এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সম্মতিসূচক চিহ্নসংবলিত গুগল গাড়ি যাত্রা করেছে। এর সাহায্যে ঢাকাসহ দেশের অন্য বড় শহরগুলোর বিভিন্ন এলাকা, জনপদ ও রাস্তাঘাটের ছবি তোলা হবে। এই উদ্যোগ এদেশে গুগলের দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করে, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে আগামী কয়েক বছর বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ছবি তোলা। এই উদ্যোগে বাংলাদেশ সরকারের পূর্ণ সহযোগিতা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সব সময় নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ করতে প্রস্তুত এবং গুগলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ফলে আরও বেশি দেশি-বিদেশি মানুষকে সমপৃক্ত করতে পারব যারা বাংলাদেশকে নতুন আলোকে দেখার সুযোগ পাবে। তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি এই মানচিত্র প্রযুক্তির বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দেয়ার পাশাপাশি বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরবে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রযুক্তি অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি শক্তিশালী চালিকাশক্তি এবং ইন্টারনেট সেই শক্তিশালী প্লাটফর্ম যার মাধ্যমে বাংলাদেশ সমপর্কে সচেতনতা বাড়ানো সম্ভব। স্ট্রিট ভিউ-এর বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন বাংলাদেশের জনগণের নানা ধরনের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে সাহায্য করবে।
স্ট্রিট ভিউ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে পর্যটন ও বেসামরিক বিমান চলাচল সচিব খোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, আমরা বাংলাদেশে পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য নানাভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা আশা করি, গুগল ম্যাপসের স্ট্রিট ভিউ-এ আমাদের সহায়তা, বাংলাদেশে পর্যটন খাতের উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম খান বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বাংলাদেশে গুগল ম্যাপস স্ট্রিট ভিউ আনয়নের জন্য গুগলকে সহযোগিতা করছে। কারণ আমরা বিশ্বাস করি, যে কোন অর্থনৈতিক উন্নয়নে উদ্ভাবনী প্রযুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
নিঃসন্দেহে, একটি উন্নত ও বিস্তারিত মানচিত্র_ ব্যবসা বাণিজ্য, ভোক্তা এবং বৃহত্তর অর্থনীতিতে নানা ধরনের সুবিধা এনে দিতে পারে। সমপ্রতি গুগলের সহযোগিতায় প্রকাশিত অক্সেরা রিপোর্টে (যঃঃঢ়://াধষঁবড়ভঃযববিন.পড়স/ৎবঢ়ড়ৎঃং/মবড়ংঢ়ধঃরধষ-ংবৎারপবং) দেখা গেছে, অনলাইন মানচিত্র ও জিপিএসের মতো বিভিন্ন ভৌগোলিক সুবিধা বিশ্বের নানা স্থানে অর্থনৈতিক উত্থানের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অক্সেরা (যঃঃঢ়://িি.িড়ীবৎধ.পড়স/) হতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জিও-সার্ভিস খাত বিশ্বব্যাপী ৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পারিশ্রমিক এবং ১৫০-২৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রাজস্ব জোগান দিয়েছে। জিও-সার্ভিসের এই সুবিধা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ভোক্তাদের খরচ বাঁচানোর পাশাপাশি দক্ষ পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সহায়তা করে।
যেহেতু অক্সেরা রিপোর্ট সব সময় সঠিক সংখ্যার ভিত্তিতে তৈরি করা হয়, সুতরাং মানচিত্র আসলেই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি দীর্ঘমেয়াদি অবদান রাখার লক্ষ্যে গুগল তার স্ট্রিট ভিউয়ের মতো অনলাইন মানচিত্র প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে ।
গুগল এশিয়া প্যাসিফিকের ডিরেক্টর অফ পাবলিক পলিসি, অ্যান লেভিন বলেন, ঢাকা এবং চট্টগ্রামে স্ট্রিট ভিউ ড্রাইভিং চালু করার এই উদ্যোগে গুগল বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত। স্ট্রিট ভিউয়ের ছবিগুলো বাংলাদেশের ব্যস্ত রাস্তাকে নতুন আঙ্গিকে দেখার সুযোগ করে দেবে বলে আমাদের বিশ্বাস। সেই সঙ্গে বৈদেশিক বিনিয়োগ ও পর্যটক- দুটোকেই আকৃষ্ট করবে বলে আমরা মনে করি। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও গ্রাহকদের মানচিত্রের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে স্ট্রিট ভিউ দেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি অবদান রাখতে পারে। আমরা পরবর্তী সময়ে গুগল ম্যাপে বাংলাদেশের ৩৬০ ডিগ্রি প্যানোরামিক ছবি শেয়ার করব।
গুগল স্ট্রিট ভিউ ব্যবহারকারীর জন্য সব ধরনের সুবিধা বজায় রাখার পাশাপাশি মানুষের গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে কঠোর নীতি অনুসরণ করে। গুগল মুখম-ল এবং গাড়ির নাম্বার প্লেট ঝাপসা করার একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে যেন সেগুলোকে শনাক্ত করা না যায়। এছাড়াও ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে তাদের কোন ছবি ঝাপসা করার অনুরোধ পেলে গুগল তা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে।
পর্যটন ও বেসামরিক বিমান চলাচল সচিব খোরশেদ আলম চৌধুরী, তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব ও এটুআই প্রোগ্রামের পরিচালক নজরুল ইসলাম খান, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সাধারণ পরিচালক (অ্যাডমিন) ও এটুআই প্রোগ্রামের পরিচালক কবির-বিন-আনোয়ার, গুগল এশিয়া প্যাসিফিকের ডিরেক্টর অফ পাবলিক পলিসি অ্যান্ড গভর্মেন্ট রিলেশন অ্যান লেভিন, হেড অফ এমার্জিং মার্কেটিং অ্যাট গুগল এশিয়া প্যাসিফিক জেমস ম্যাকলার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.