ফের জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র তা-ব গুলি ভাঙচুর আগুনঃ পুলিশের ওপর হামলা

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আবারও জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা সশস্ত্র তা-ব চালিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর থেকে শিবির ক্যাডাররা একযোগে এই সশস্ত্র তা-ব চালিয়েছে।
তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করে। গুলি ছোড়ে। পুলিশ সাজোয়াযান নিয়ে ধাওয়া করে গুলি, গ্যাস ও লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষের সময় মতিঝিলে গাড়ি ভাঙচুর, অগি্নসংযোগ, কাওরানবাজার, পান্থপথসহ আশপাশে ব্যাপক সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার সময় পুলিশ নয়াদিগন্ত পত্রিকা অফিস ও আশপাশের গলিতে অভিযান চালিয়ে জামায়াত-শিবিরের ৪৩ ক্যাডারকে আটক করে। এ ছাড়াও কাওরানবাজার, কলাবাগান, পান্থপথ এলাকা থেকে অনেককে আটক করা হয়েছে। আরো আটক অভিযান চলছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত মোট ৭৩ জনকে আটক করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, দুপুর দেড়টার দিকে মতিঝিল, আরামবাগ, নটরডেম কলেজের আশপাশের অলিগলি থেকে জামায়াত-শিবিরের প্রায় এক হাজার ক্যাডার সশস্ত্র মিছিল বের করে। তারা মিছিল থেকে গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করে। কোন কোন স্থানে গুলির শব্দ পাওয়া গেছে। পুলিশ ধাওয়া করে লাঠি, গ্যাস ও গুলি ছোড়ে। এই সময় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। দুপুরে বোমা বিস্ফোরণে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।
প্রতক্ষদর্শীরা জানায়, দুপুর দেড়টার দিকে নটরডেম কলেজের দিক থেকে প্রায় এক হাজার নেতাকর্মীর একটি মিছিল শাপলা চত্বরের দিকে যেতে থাকে। এ সময় প্রায় ১৫/১৬টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে তারা। শিবির ক্যাডাররা আরামবাগ এলাকায় রাস্তায় তুলার বস্তা ফেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। মতিঝিল টয়েনবি সার্কুলার রোডের ওপরে আগুন লাগিয়ে দেয়। এক পর্যায়ে তারা বেশ কিছু যানবাহনে ভাঙচুর চালায়। পুলিশ তাদের ধাওয়া করলে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায় শিবিরকর্মীরা। এ ঘটনায় প্রায় ৪৩ শিবির কর্মীকে আটক করে পুলিশ। এ সময় মতিঝিল এলাকাসহ আশপাশের সব এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করে।
এদিকে, প্রায় একই সময় নয়াদিগন্ত পত্রিকা অফিসের সামনে একটি নোয়া প্রাইভেট গাড়িতে (ঢাকা মেট্রো চ-৫৩৩৪৯১) আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। গাড়ির আগুন থেকে পাশেই নয়াদিগন্তের প্রেসের কাগজে আগুন ধরে যায়। ঘটনার পরপরই ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পেঁৗছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। নয়াদিগন্ত অফিসের জানালার কাচ ভাঙা দেখতে পাওয়া যায়। তবে জানালার কাচ ভাঙার বিষয়ে কেউ কিছু জানাতে পারেনি। এ ঘটনার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নয়াদিগন্ত পত্রিকার লোকজন উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, ঘটনা শুনে নিচে নেমে এলে নিরাপত্তাকর্মীরা তাদের বলে, ছাত্রলীগের কর্মীরা এসে প্রথমে গাড়ি ভাঙচুর করে। এক পর্যায়ে তারা গাড়িতে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যায়। তবে ঘটনাস্থলের পাশের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জানান, এ গলি দিয়ে কাউকে ঢুকতে কিংবা বেরুতে দেখা যায়নি। হঠাৎ করে ওই গাড়িতে আগুন জ্বলতে দেখা যায়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মতিঝিল জোনের ডিসি আনোয়ার হোসেন, জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা ঝটিকা মিছিল থেকে আগুন লাগিয়েছে। তারা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। তখন একজন পুলিশ সদস্যসহ কয়েকজন আহত হয়েছে। ঘটনার পরপর জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা নয়াদিগন্ত পত্রিকার গলি ও পত্রিকা অফিসে ঢুকে। এরপর পুলিশ আশপাশের গলিতে পত্রিকা অফিসে অভিযান চালিয়ে শিবির ক্যাডারদের আটক করে। ঘটনার সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লাঠি, গুলি ও গ্যাস নিক্ষেপ করেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সংঘর্ষের সময় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। যানবাহন চলাচল প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বন্ধ ছিল। শত শত চাকরিজীবী ও পথচারী চরম ভোগান্তির শিকার হন।
কাওরানবাজারে গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা কাওরানবাজার আন্ডারপাস এলাকায় মিছিল করে। তারা মিছিল থেকে কাওয়ার, বাজার, পান্থপথ, বসুন্দারা সিটি এলাকা, কলাবাগানসহ আশপাশ এলাকায় মিছিল বের করে। মিছিল থেকে যানবাহন ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলা চালায়। পুলিশ পাল্টা ধাওয়া, লাঠিচার্জ ও গুলি ছোড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। সংঘর্ষের সময় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষ ও গোলাগুলির সময় অনেকেই আহত হয়েছে। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ ৬ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে পথচারী রয়েছে।
গোয়েন্দা সংস্থা সূত্র জানায়, পান্থপথ এলাকার গোপন আস্তানা থেকে শিবির ক্যাডারা বের হয়ে রাস্তায় ঝটিকা মিছিল বের করে। এছাড়াও কলাবাগান, ধানম-ি, আশপাশের বিভিন্ন গলিতে ঝটিকা মিছিল বের করে। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করে। পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ পাল্টা ধাওয়া, লাঠিচার্জ ও গুলি ছোড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার সময় ৩ জন পুলিশসহ কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের জনসংযোগ শাখা থেকে বলা হয়েছে, মতিঝিল ও কাওরানবাজার, কলাবাগান, ধানম-িসহ আশপাশ এলাকা শিবিরের ঝটিকা মিছিল ও সংঘর্ষের সময় কমপক্ষে ৭৩ জন আটক করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ৬ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়েলটি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের পিঠে, উরুতে গুলি লেগেছে। আহতদের মধ্যে একজন তরুণী রয়েছেন। তার নাম নাফিজা আক্তার। বয়স ২৫ বছর। সংঘর্ষ, ভাঙচুর, পুলিশের ওপর হামলা এবং পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধা দেয়ার ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হবে বলে জানান। এছাড়াও ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-শিবির ঝটিকা মিছিল করেছে।

No comments

Powered by Blogger.