শাহবাগ আন্দোলনের টুকিটাকি

'রাজাকার'-এর শব্দ সংক্ষেপ!
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে ৯ম দিনের মতো চলছে আন্দোলন। প্রজন্ম চত্বরে তরুণরা আবিষ্কার করেছে অভিনব সব প্রতিবাদ।
সেসব প্রতিবাদ যেমন উপস্থিত জনতাকে উদ্বেলিত করছে তেমনি মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারের ফলে তা ছড়িয়ে পড়ছে দেশ হতে বিশ্বময়। প্রায় প্রতিদিনই নিত্যনতুন প্রতিবাদের ভাষা সারাদেশের তরুণদের মধ্যে গণজাগরণের সৃষ্টি করেছে। এমনি একটি প্রতিবাদের নাম রাজাকারের শব্দ সংক্ষেপ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র অমিত রায় তৈরি করেছে এ প্রতিবাদ লিপিটি।
এতে দেখা যায়, একটি প্ল্যাকার্ডে কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই, আর কোন দাবি নাই, লেখার পর রাজাকার শব্দের শব্দ সংক্ষেপ দেয়া হয়েছে। রা_ রাক্ষস, জা_ জানোয়ার, কা_ কাপুরুষ, র_ রক্তচোষা এভাবে রাজাকার শব্দের শব্দ সংক্ষেপ সাজানো হয়েছে। কীভাবে এই আইডিয়া মাথায় এলো জানতে চাইলে অমিত জানায়, কয়েকদিন ধরেই শাহবাগে আসবো আসবো ভাবছিলাম কিন্তু আসতে পারছিলাম না ব্যস্ততার কারণে। পড়ার টেবিলে ডিকশনারি দেখতে দেখতে হঠাৎ মনে হলে রাজাকারের শব্দসংক্ষেপ করা যায় কিনা। পেয়ে গেলাম শব্দ। এভাবেই তিন বন্ধু মিলে প্ল্যাকার্ড তৈরি করে আজকে চলে এলাম শাহবাগে।
নয় বছরের কাদের মোল্লা!
একটি ভ্যানগাড়ির উপর ফাঁসির মঞ্চ। মাঝখানে কাদের মোল্লার গলায় ফাঁসির দড়ি। দু'পাশে দুজন জুতাপেটা করছে কাদের মোল্লাকে। এভাবে ভ্যানগাড়িটি শাহবাগজুড়ে ঘুরছে আর মানুষকে ফাঁসির দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হতে প্রেরণা জুগাচ্ছে। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই কাদের মোল্লার মামা রশিদ মিয়া জানালো, মিরপুর থেকে এসেছেন এই কাদের মোল্লাসহ আরও ১০/১২ জনের একটি দল। কাদের মোল্লার অবয়বে নয় বছরের ছোট্ট ছেলেটির নাম শাওন। তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে। কীভাবে এই কাজে উদ্বুদ্ধ হলেন? রশিদ মিয়া জানালো, টিভিতে কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে তরুণ ছেলেমেয়েদের আন্দোলন দেখে তার মনে কিছু একটা করার আকাঙ্ক্ষা জাগে। তখন ভাগ্নেকে কাদের মোল্লা সাজার প্রস্তাব করলে সেও রাজি হয়। যেই ভাবা সেই কাজ। শুরু হয় প্রস্তুতি। স্থানীয় এক চিত্রশিল্পীর সহায়তায় কাদের মোল্লার মত পাজামা পাঞ্জাবি, টুপি, পাকা দাড়ি জোগাড় করে মেকাপ নেয়া হয়। এরপর আরও কয়েকজনের সহযোগিতায় সার্বিক প্রস্তুতি শেষে তারা সকাল সাড়ে ১০টায় শাহবাগ আসেন। রাত ১০টা পর্যন্ত থাকবেন বলে জানালেন তিনি।

আমরা বানরের দল রাজাকারদের কাতুকুতু দেব!
শাহবাগের আন্দোলনে একের প্র এক যোগ হচ্ছে তরুণ প্রজন্মের অভিনব প্রতিবাদ। এর কিছু প্রতিবাদ দেখে উপস্থিত জনতা যেমন স্বাধীনতা যুদ্বের চেতনা শানিত করছেন নিজের মধ্যে তেমনি কিছু প্রতিবাদ দেখে আনন্দিতও হচ্ছেন। এমনি একটি প্রতিবাদের ব্যানারে লেখা রয়েছে আমরা বানরের দল রাজাকারদের কাতুকুতু দেব! বাংলাদেশ স্টুডেন্টস ডেভেলপমেন্ট ফোরাম সংগঠনের উদ্যোগে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে একটি ব্যানার টাঙানো হয় জাতীয় জাদুঘরের সামনে। জাদুঘরের সীমানা দেয়ালে ফুটপাতের রাস্তার পাশে টাঙ্গানো ব্যানারটিতে বড় করে লেখা রয়েছে সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার চাই। ব্যানারের বাম কোনায় একটি বানরের ছবি দিয়ে তার নিচে লেখা রয়েছে আমরা বানরের দল রাজাকারদের কাতুকুতু দেব!।

টিউশনি যায় যাক, শাহবাগে আসবই!
জাতীয় জাদুঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। দুপুরের কড়া রোদ মাথার উপর। একটু ছায়ায় দাঁড়াতে জাদুঘরের প্রবেশমুখে গাছের নিচে আসছে সবাই। এ সময় দুজন ছাত্র রাজাকারদের ফাঁসির দাবিতে নিজ হাতে লেখা প্ল্যাকার্ড বুকে ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের এ ছাত্ররা জানালো তারা গতকালই প্রথম এসেছে শাহবাগে। এত দেরীতে আসার কারণ তারা নিজেরাই ব্যাখ্যা করল। ভাই, শ্রেণি পরীক্ষা চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার উপর একাধিক টিউশনি করতে হয়। মনে অনেক ইচ্ছা থাকলেও আসতে পারিনি। পুরান ঢাকায় একাধিক টিউশনী করে তাদের পড়ালেখা, থাকা-খাওয়াসহ যাবতীয় খরচ নিজেদের বহন করতে হয়। তারা জানালো, আজকে শ্রেণি পরীক্ষা নেই তাই চলে এসেছি। কতক্ষণ থাকবেন জানতে চাইলে তারা জানায়, যদিও টিউশনিতে যাওয়া দরকার কিন্তু আজকে যাব না। দেশের জন্য কিছুইতো করতে পারি না। টিউশনি যায় যাক শাহবাগে আসবই।

No comments

Powered by Blogger.