শিক্ষক হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল কেরানীগঞ্জঃ বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশও স্বেচ্ছাসেবক লীগের হামলা

কেরানীগঞ্জে চুনকুটিয়া উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোস্তফা ভূঁইয়ার খুনির গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে গতকাল দিনভর দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রী ও এলাকাবাসী।
এ সময় পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের লাঠিচার্জে ২০ ছাত্রী আহত হলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। এক পর্যায়ে কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়ে বিক্ষুব্ধদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এদিকে গতকাল দুপুরে নিহত শিক্ষকের স্ত্রী লাকি বেগম বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় ঘাতক রিয়াদকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন।
গতকাল সকাল ১০টার দিকে শিক্ষার্থী ও বিক্ষুব্ধ লোকজন রিয়াদদের তেলঘাট এলাকার বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে। একসময় পুলিশ লাটিপেটা করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পুলিশের লাঠিপেটায় অন্তত ১০ ছাত্রী আহত হয়। এরপর তারা বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতু অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। সেখানে পুলিশ বাধা দিলে কদমতলী গোলচত্বরে এসে বিক্ষোভ মিছিল করে কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। সেখানেও বাধা পেয়ে কেরানীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে এসে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। আন্দোলনকারীদের অপর একটি গ্রুপ চুনকুটিয়া চৌরাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এ সময় তারা গাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়লে প্রতিবন্ধী এক পথচারী গুলিবিদ্ধ হয়। এ সময় পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিলে পুলিশের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মীরা মিলে বিক্ষোভকারীদের ওপর বেধড়ক লাঠিপেটা শুরু করে। এতে মৌ, ঝুমু, সুমি, টুম্পা, সম্পাসহ কমপক্ষে ১০ ছাত্রী আহত হয়। এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে নিহত শিক্ষকের লাশ সোমবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানার দীঘলদী গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
শিক্ষককে হত্যার প্রতিবাদে গতকাল চুনকুটিয়া উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীরা কালোব্যাজ ধারণ করে। দুপুর ২টায় বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বাসির-জসিম) ও শিক্ষক কর্মচারী মহা ঐক্যজোটের সভাপতি মো. বাসির উদ্দিন চুনকুটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে আন্দোলনরতদের একাত্মতা ঘোষণা করে বলেন, আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি এ ঘটনার প্রতিবাদে সারাদেশের শিক্ষকদের নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সভা করা হবে।
চুনকুটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কেএম ইলিয়াস হোসেন জানান, পুলিশ এখনও খুনিকে গ্রেফতার করতে না পারায় আমরা আশাহত। এ অবস্থায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ ও গুলিবর্ষণ করা মেনে নেয়া যায় না। আমি এ ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি। পাশাপাশি অবিলম্বে খুনির গ্রেফতার দাবি করছি।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থাানার ওসি সাখাওয়াত হোসেন জানান, শিক্ষক নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু লোক ছাত্রছাত্রীদের উসকানি দিয়ে আক্রমণাত্মক করে তুলছিল। তারাও ছাত্রছাত্রীদের ব্যবহার করে গাড়ি ভাঙচুর করছিল। তাদের ছত্রভঙ্গ করতেই পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। লাটিপেটার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, হুড়োহুড়ি করার সময় পড়ে গিয়ে কয়েকজন আহত হয়েছে। ওসি জানান, আসামিকে ধরতে আমরা বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করছি। আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি হয়েছে। শীঘ্রই তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। নকলে বাধা দেয়ায় গত সোমবার সকালে শিক্ষক মোস্তফা ভূঁইয়ার বাসায় ঢুকে এসএসসি পরীক্ষার্থী রিয়াদ ছুরিকাঘাতে তাকে হত্যা করে।

No comments

Powered by Blogger.