বিপর্যয়ের মুখে কপোতাক্ষের ১৫ লাখ মানুষ'র জীবন ও সম্পদ by বি এম জুলফিকার রায়হান

অতি মুনাফালোভী চিংড়ি চাষিদের অপতৎপরতা, কর্তৃপক্ষের দুর্নীতি, কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দানে বৈষম্য, ক্ষতিপূরণ দানে প্রশাসনিক জটিলতা,
কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতার অভাব আর কুচক্রী মহল দ্বারা হাইকোর্টে মামলা দায়েরের কারণে অনিশ্চিতের মুখে পড়েছে বহু কাঙ্ক্ষিত কপোতাক্ষ নদ খনন কার্যক্রম। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী ওয়াদা হিসেবে কপোতাক্ষ নদ খনন করার জন্য বরাদ্দ দেয়া প্রায় ২৬২ কোটি টাকার প্রকল্প'র বিরুদ্ধে কুচক্রী মহল চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়ায় (!) কপোতাক্ষ অববাহিকার প্রায় ১৫ লাখ মানুষ এখন উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যে আবর্তিত। প্রভাবশালী ওই মহলটির ইন্দনে কতিপয় ব্যক্তি হাইকোর্টে টিআরএম'র বিরুদ্ধে রিট পিটিশন দায়ের করায় বন্ধ হয়ে গেছে কপোতাক্ষ নদ খনন প্রক্রিয়া। এতে করে চলতি বছর আবারও ভয়াবহ জলাবদ্ধতা ও বন্যায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে তালাসহ কপোতাক্ষ নদ অববাহিকা এলাকায়। গুটি কয়েক ব্যক্তি তাদের কয়েক লাখ টাকার হীন স্বার্থ উদ্ধার করতে যেয়ে এক শ্রেণীর বিতর্কিত ব্যক্তির দ্বারা লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন ও শত শত কোটি টাকার সম্পদ হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। ফলে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত অনুযায়ী দেয়া ২৬২ কোটি টাকার কপোতাক্ষ খনন প্রকল্পের কাজ নিয়ে সংশয় দেখা দেয়ায় কপোতাক্ষ পাড়ের মানুষরা বিতর্কিত ওইসব রিটকারীদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংগঠন ও সচেতন মহলের পক্ষ থেকে রিট প্রত্যাহারের দাবিতে সভা, সমাবেশ ও আলোচনার মাধ্যমে রিট প্রত্যাহারের চেষ্টা শুরু করেছে এমনকি সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে রিট আবেদনটি বৃহৎ জনস্বার্থে খারিজ করে দেয়ার জন্য মহমান্য হাইকোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণও করেছে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, কপোতাক্ষ নদের অববাহিকায় জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প এর ১ম পর্যায়ে তালা উপজেলার খেশরা ও জালালপুর ইউনিয়ন সীমান্তের পাখিমারা বিলে টি আর এম প্রকল্পের পেরিফেরিয়াল বাঁধ নির্মাণ বাবদ ৫ কোটি ৭৪ লাখ ৮ হাজার ১৬ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাস্তবায়নে ২০১১-১২ অর্থ বছরে ১২ হাজার ৭৮০ মিটার দৈর্ঘ্যের বাঁধ নির্মাণ গত বছরের (২০১২ সালের) ১২ মার্চ থেকে শুরু করে ২৩ জুন শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা শেষ হয়নি। বরং মেয়াদ শেষ হওয়ার দীর্ঘ ৭ মাস পার হলেও এই প্রকল্পের অগ্রগতি নেই।
সরেজমিন পরিদর্শনকালে জানা গেছে, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জমির মালিকানা নির্ধারণের প্রাথমিক কাজ শেষ হলেও জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের টাকা দেয়ার ব্যবস্থা হয়নি। এমনকি ক্ষতিপূরণের টাকা নির্ধারণ নিয়ে বিতর্ক ও বিরোধ থাকায় জমির মালিকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের যশোর ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মশিউর রহমান বলেন, টিআরএমভুক্ত জমির মালিকদের বিঘাপ্রতি ১৩ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর মামলা নিষ্পত্তি করার চেষ্টা চলছে। মামলা নিষ্পত্তি হলেই টিআরএমের বাকি কাজ শেষ করা হবে।সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ড. মুহা. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, টিআরএমভুক্ত জমির মালিকদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি জমির জন্য প্রতিবছর বিঘাপ্রতি ৯ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য প্রস্তাবনা প্রকল্প কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। তালার নির্বাহী কর্মকর্তা স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলাপ করেই এই ক্ষতিপূরণের মূল্য নির্ধারণ করে তার কাছে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছেন। জমির শ্রেণী ও উৎপাদনশীলতার উপরই এই ক্ষতিপূরণের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে দাবি করে তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মোট ১৩ কোটি ৭৮ লাখ ৩০ হাজার টাকার ক্ষতিপূরণের প্রস্তাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে পাঠানো হয়েছে। তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান প্রস্তাবনা পাঠানোর কথা স্বীকার করে বলেন, দ্রুতই সব সমস্যার সমাধান হবে। তালা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার জানান, জমির মালিকদের অবশ্যই ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে। তবে এখনও তারা কাগজপত্র জমা না দেয়ায় একটু বিলম্ব হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.