বেহাল শওকত ওসমান মিলনায়তন by সাবিনা ইয়াসমিন

‘জরাজীর্ণ আসন, ভাঙা হাতল, ছারপোকার কামড়—এত সমস্যার মধ্যে কীভাবে এখানে সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা সম্ভব?’ গত শুক্রবার প্রথম আলোর কাছে শওকত ওসমান মিলনায়তন সম্পর্কে এই অভিযোগ রোকেয়া রহমান নামের এক দর্শকের।
রোকেয়া রহমান সুদূর রংপুর থেকে তাঁর সন্তানদের নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব দেখতে। ঢাকার সুফিয়া কামাল কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের (কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি) শওকত ওসমান মিলনায়তনে ছিল এই উৎসবের আয়োজন।
শওকত ওসমান মিলনায়তনের এমনই বেহাল অবস্থা আজ। প্রতিদিন বিকেলে যেখানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আসর বসে, সেখানে আজ এই করুণ চিত্র।
১৯৫৮ সালের ২২ মার্চ সাংস্কৃতিক চর্চার অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এই কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের প্রতিষ্ঠা। ১৯৭৭ সালে নতুন ভবন নির্মাণ করে এটি স্থানান্তর করা হয় শাহবাগে। ১৯৭৮ সালের ৬ জানুয়ারি উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এর নতুন যাত্রা। ৫২৫টি আসন নিয়ে এই মিলনায়তনে রয়েছে দুটি প্রবেশপথ, একটি টয়লেট।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মিলনায়তনটির সামনের সব কটি আসনই বসার অযোগ্য। একমাত্র টয়লেটের দরজা ভাঙা, সেখান থেকে নোংরা পানি গড়িয়ে এসে পড়ছে মিলনায়তনের মেঝেতে। এ থেকে ছড়িয়ে পড়া উৎকট গন্ধ দ্রুতই দর্শকদের বিরক্তির উদ্রেক করে। মিলনায়তনের মঞ্চে ওঠার সিঁড়িও নড়বড়ে। এতে শিল্পী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মঞ্চে উঠতে-নামতে নাকাল হন।
গত বছরের ১৬ নভেম্বর শওকত ওসমান মিলনায়তনের এক অনুষ্ঠানে কলকাতা থেকে এসেছিলেন শিল্পী সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় ও হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশেষ অতিথির সারিতে ভাঙা চেয়ারে বসতে গিয়ে হুড়মুড়িয়ে পড়তে পড়তে নিজেকে কোনো রকমে সামলে নিয়েছিলেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়।
মিলনায়তনে রয়েছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধার অভাব। সর্বত্র অযত্ন আর অবহেলা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণগ্রন্থাগারের অভ্যর্থনা বিভাগে দায়িত্বরত এক কর্মচারী বলেন, গত পাঁচ বছরে মিলনায়তনটির সংস্কার হয়নি।
দর্শকের সারিতে বসে থাকা আফসার আলী বলেন, ‘আমি এখানে নিয়মিত গান শুনতে আসি। কিন্তু এর হতচ্ছিরি পরিবেশ দেখে কষ্ট হয়। সংস্কৃতিচর্চার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন সুন্দর পরিবেশ। এখানকার শব্দ ও আলোকসম্পাতব্যবস্থারও সংস্কার জরুরি।
জাতীয় গণগ্রন্থাগারের মহাপরিচালক নূর হোসেন তালুকদার বলেন, সংস্কারকাজের জন্য সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। প্রায় এক কোটি ১২ লাখ টাকার বাজেট করা হয়েছে। তবে, এখনো মন্ত্রাণালয়ের অনুমতি মেলেনি।

No comments

Powered by Blogger.