মীর কাশেমের বিরুদ্ধে ৩ মার্চের মধ্যে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ- যুদ্ধাপরাধী বিচার

 একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন ৩ মার্চের মধ্যে দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
একই ট্রাইব্যুনাল বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর চারটি আবেদনের মধ্যে তিনটি আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। একটি আবেদনের ওপর শুনানি হয়েছে, আজ আদেশ প্রদান করা হবে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মঙ্গলবার এই আদেশ প্রদান করেছে। ট্রাইব্যুনালে অন্য দু’ সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ও মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে সতর্ক করে আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মঙ্গলবার চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এই আদেশ প্রদান করেছে। ট্রাইব্যুনালে অন্য দু’ সদস্য ছিলেন বিচারপতি মোঃ মজিবুর রহমান মিয়া ও জেলা জজ মোঃ শাহীনুর ইসলাম।
মীর কাশেম আলী ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন ৩ মার্চের মধ্যে দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
মঙ্গলবার প্রসিকিউশন মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধে তদন্তের ৩য় দফা অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করলে চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবিরের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের ট্রাইব্যুনাল তা দেখে এ নির্দেশ দেয়। প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করেন। এর আগে গত ২৭ সেপ্টেম্বর ও ২৭ নবেম্বর দু’দফায় মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলেন। ২৭ নবেম্বর তদন্তের চূড়ান্ত অথবা অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২৯ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালের আদেশ অনুযায়ী প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন মঙ্গলবার তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করেন। আদালতে তিনি বলেন, তদন্ত শেষ করতে আরও বেশ কিছুদিন সময় প্রয়োজন। পরে ট্রাইব্যুনাল মীর কাশেমকে হাজির করতে এবং চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দিতে ৩ মার্চ দিন ধার্য করে দেন। এজন্য মীর কাশেম আলীকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
প্রসিকিউশন জানিয়েছেন, অগ্রগতি প্রতিবেদনে মীর কাশেমের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ উল্লেখ করা হয়েছে। এ প্রতিবেদনে কাশেম আলীর বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের আসাদনগর ও পাঁচলাইশ এলাকায় গণহত্যা এবং চট্টগ্রামের ডালিম হোটেলে নিয়ে নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী বিভিন্ন ঘটনার অভিযোগ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ১৯৭১ সালে মীর কাশেম আলী ইসলামী ছাত্রসংঘের চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে আলবদর, আলশামস ও রাজাকার বাহিনী হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করতে মীর কাশেম আলীকে এর আগে দু’দফা সেফহোমে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্ত সংস্থা। গত ১৭ জুন মীর কাশেম আলীকে নয়া দিগন্ত পত্রিকার অফিস থেকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর ১৯ জুন তার জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠান ট্রাইব্যুনাল।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ॥ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ও মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল মঙ্গলবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে তাকে নিঃশর্ত ক্ষমা করে দেয়। একই সঙ্গে ট্রাইব্যুনাল এ ধরনের মন্তব্য করায় তাকে সতর্ক করে দেয়।
ট্রাইব্যুনাল তার আদেশে বলে, ‘একজন বিজ্ঞ নেতার কাছ থেকে বিচারাধীন বিষয়ে এ ধরনের বক্তব্য আশা করা যায় না। তাদের কাছ থেকে এসব কথা গ্রহণযোগ্য নয়। বাকস্বাধীনতা মানে এই নয় যে ইচ্ছেমতো সাবজুডিস বিষয়ে বক্তব্য দেবেন। একজন ব্যক্তির অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে অপরাধী বলা যায় না। রায় না হওয়া পর্যন্ত কোন ব্যক্তি সম্পর্কে অপরাধী সাব্যস্ত করে কেউ এমন মন্তব্য করতে পারেন না।
এরপর ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে আনীত অবমাননার অভিযোগটি নিষ্পত্তি করে দেয়। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের আইনজীবী আব্দুল বাসেত মজুমদার এ আবেদনের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন। এর আগে ১৪ জানুয়ারি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পক্ষে তাঁর আইনজীবী আব্দুল বাসেত মজুমদার ক্ষমা প্রার্থনা করে লিখিত জবাব দেন। গত ২৪ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনাল-২ তাঁর বিরুদ্ধে স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করে এবং বিচারিক বিষয়ে মন্তব্য করার কারণ ব্যাখ্যা দেয়ার নির্দেশ দেয়। গত ২২ ডিসেম্বর রাজধানীতে ১৪ দলের উদ্যোগে গণমিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই গণমিছিলপূর্ব সমাবেশে তিনি ট্রাইব্যুনালের বিচারিক বিষয়ে মন্তব্য করেন।
সাকার আবেদন খারিজ ॥ মঙ্গলবার চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর চারটি আবেদনের মধ্যে তিনটি আবেদন খারিজ করেছে।
একটি আবেদনের ওপর শুনানি হয়েছে, তার উপর আদেশ দেয়া হবে আজ। খারিজকৃত আবেদনগুলো হলো দৈনিক যুগান্তরের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন। ক্যামেরা ট্রায়াল ও মামলা মুলতবির আবেদন। শুনানি হয়েছে নবম জাতীয় সংসদে যোগদানের সুযোগ দেয়ার ওপর।

No comments

Powered by Blogger.