গাজীপুরে দুর্ঘটনার জন্য ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষ দায়ী?- হতভাগ্য শ্রমিকদের স্বজনের ক্ষোভ, বিলাপ ॥ ২১ লাশ হস্তান্তর ॥ দু'টি তদন্ত টিম গঠন

মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেও গাজীপুরের যে সোয়েটার ফ্যাক্টরিতে শ্রমিকদের কোলাহল ও মেশিনের শব্দে মুখরিত ছিল এখন তা ভুতুড়ে ভবনে পরিণত হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গরিব এ্যা- গরিব নামে ফ্যাক্টরির ২১ শ্রমিক নিহত এবং অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে।
পুড়ে গেছে তৈরি পোশাক ও সুতাসহ বিভিন্ন মালামাল। শুক্রবার ফ্যাক্টরির ধ্বংস সত্মূপের মাঝে সর্বত্র শ্রমিকদের অতি প্রয়োজনীয় টিফিন বাটি, জুতা-সে-েল ও কাপড় চোপড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। বিকেলে স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী ও বিজিএমইএ নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালেও ফ্যাক্টরির অগি্নদগ্ধ বিভিন্ন মালামাল থেকে আগুনের ধোঁয়া বেরোতে দেখা গেছে। বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে পোড়া গন্ধ। আর এ ভবনটির পাহারায় রয়েছে র্যাব ও পুলিশের একাধিক দল। এদিকে মর্মানত্মিক এ অগি্নকা-ের ঘটনায় নিহত ১৫ মহিলাসহ ২১ গার্মেন্টস কমর্ীর লাশ শুক্রবার তাদের স্বজনদের কাছে হসত্মানত্মর করা হয়েছে। এ সময় তাদের স্বজন ও সহকমর্ীদের আহাজারিতে এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। পরে দাফনের জন্য পুলিশের প্রহরায় নিহতদের লাশ তাদের গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। মর্মানত্মিক এ ঘটনার জন্য নিহতদের স্বজনরা ফ্যাক্টরি কর্তপকেই দায়ী করেছে। এদিকে শ্রমিক অসোনত্মষের আশঙ্কায় কর্তৃপ ফ্যাক্টরি ৪ দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে। বিজিএমইএ কতর্ৃপ নিহতদের প্রতি পরিবারকে ২ লাখ টাকা তিপূরণ প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়াও বিজিএমইএ দেশের সকল পোশাক কারখানায় ৩ দিনব্যাপী শোক পালনের এবং কালো পতাকা উত্তোলনের সিদ্ধানত্ম নিয়েছে। অগি্নকা-ের ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন ও বিজিএমইএ কতর্ৃপ দু'টি পৃথক তদনত্ম টিম গঠন করেছে।
গাজীপুর সদরের ভোগড়ার গরীব এ্যা- গরিব সোয়েটার ফ্যাক্টরির দ্বিতীয় তলায় বৃহস্পতিবার রাতে ভয়াবহ অগি্নকা-ের ঘটনা ঘটে। এতে ১৫ মহিলাসহ ২১ গার্মেন্টস কমর্ী নিহত এবং অর্ধশতাধিক কমর্ী আহত হয়েছে। আগুনে তৈরি পোশকসহ ওই তলায় রাখা মেশিনপত্র ও বিভিন্ন মাল পুড়ে গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের বক্তব্য ॥ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফায়ার সার্ভিসের দু'কর্মকর্তা জানান, আগুনের সূত্রপাত হওয়ার পর ফায়ার বেল না বাজানোয় উপরের তলাগুলোতে অবস্থানরতরা সঠিক সময়ে আগুনের সংবাদ জানতে পারেনি। তাই তাদের প েবেরিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া ফ্যাক্টরির কর্মচারী শ্রমিকদের অগি্নকা-ের সঙ্গে সঙ্গে তারা প্রয়োজনীয় কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি। তাছাড়া ছয়তলা ভবনের উপরের ছাদে অবৈধভাবে টিন দিয়ে বর্ধিত তলা তৈরি করায় ঘটনার সময় শ্রমিকরা ছাদে গিয়ে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নিতে না পারায় হতাহতের সংখ্যা এত বেশি হয়েছে। এছাড়া বিশাল এ ফ্যাক্টরিতে নিয়মানুযায়ী পানির কোন রিজার্ভ ট্যাংক বা সোর্স না থাকায় আগুন নেভাতে গিয়ে দমকলকমর্ীদের হিমশিম খেতে হয়েছে। তাদেরকে দূর থেকে পানি এনে আগুন নেভাতে হয়েছে। এতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় বেশি লেগেছে। ফায়ার সার্ভিস গাজীপুর সদরের স্টেশন অফিসার আবু জাফর জানান, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় য়তির পরিমাণ এবং সঠিক কারণ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি।
লাশ হসত্মানত্মর ॥ গার্মেন্টসে অগি্নকা-ের ঘটনায় হতভাগ্য ২১ জনের লাশসহ কফিন তাদের স্বজনদের কাছে শুক্রবার স্থানীয় প্রশাসন হসত্মানত্মর করেছে। লাশ হসত্মানত্মরের পর দাফনের জন্য পুলিশ প্রহরায় এ্যাম্বুল্যান্সযোগে নিহতদের গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। প্রতিটি লাশ পরিবহন ও দাফনের জন্য ফ্যাক্টরি কর্তৃপ নগদ ১৫ হাজার টাকা করে প্রদান করেছে। এ সময় গাজীপুর সদর হাসপাতাল মর্গ এলাকায় র্যাব ও পুলিশের কড়া পাহারা ছিল। নিহতদের স্বজনদের আবেদনের প্রেেিত ময়নাতদনত্ম ছাড়াই এসব লাশ হসত্মানত্মর করা হয়। দুপুরের মধ্যেই এই প্রক্রিয়া শেষ হয়। এদিকে লাশ হসত্মানত্মর প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে নিহতদের স্বজনরা ােভ প্রকাশ করে।
মন্ত্রীর ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও অনুদান ॥ পোশাক ফ্যাক্টরিতে অগি্নকা-ের খবর শুনে শুক্রবার বিকেলে স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, বিজিএমইএ সভাপতি আব্দুস সালাম মোর্শেদী, স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেলসহ বিজিএমইএ নেতৃবৃন্দ পরিদর্শন করেছেন। বিজিএমইএর প থেকে নিহতের পরিবারকে ২ লাখ টাকা করে অনুদান প্রদানের ঘোষণা দেয়া হয়। এছাড়া নিহতদের পরিবারের সদস্যদের চাকরির নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়। এ সময় বিজিএমইএর সভাপতি জানান, অগি্নকা-ের ঘটনায় আহত শ্রমিকদের বিজিএমইএর প থেকে ফ্রি চিকিৎসাসেবা প্রদানের আশ্বাস দেয়া হয়। এদিকে রাতেই গাজীপুর জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল উদ্দিন তালুকদার, পুলিশ সুপার এএসএম মাহফুজুল হক নুরম্নজ্জামানসহ জেলা প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা হাসপাতালে নিহত ও আহতদের দেখতে ছুটে যান।
তদনত্ম কমিটি গঠন ॥ এদিকে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের প থেকে ঘটনা তদনত্মের জন্য গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ হাসান সারওয়ারকে আহ্বায়ক করে একটি তদনত্ম কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান ও গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের ডেপুটি এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর (ডিএডি) মোঃ রফিকুল ইসলাম। তদনত্ম কমিটি শুক্রবার সকাল থেকেই তাদের তদনত্ম কাজ শুরম্ন করেছে।

No comments

Powered by Blogger.