লিভার রোগে দাঁত ও মুখের চিকিৎসা

প্যারেনকাইমাল লিভারের রোগে ওষুধের প্রতিক্রিয়া সবসময় আগে থেকে অনুমান করা যায় না। ওষুধের মাঝে টেট্রাসাইক্লিন, ইরাইথ্রোমাইসিন, এস্টোলেট, মনোঅ্যামাইন অক্সিডেজ ইনহিবিটর এবং ফিনাইলবুটাজন জাতীয় ওষুধ কম বেশি হেপাটোটক্সিক বা লিভারের জন্য ক্ষতিকারক।
তাই লিভারের রোগে দাঁত ও মুখের চিকিৎসায় এ জাতীয় ওষুধ স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে কম মাত্রায় প্রদান করতে হবে। এসব ওষুধের বিকল্প ওষুধ ব্যবহার করা গেলে তা অবশ্যই প্রদান করা উচিত। প্যারেনকাইমাল লিভারের রোগে ব্রেনের মেটাবলিজম বা বিপাকক্রিয়া অস্বাভাবিক হতে পারে এবং ব্রেন অতিমাত্রায় সংবেদনশীল হতে পারে কিছু ওষুধ সেবনের কারণে। প্যারেনকাইমাল লিভারের রোগে সিডেটিভস, হিপনোটিকস, ট্রাংকুলাইজার এবং অপিয়ডস জাতীয় ওষুধ সেবন করলে এনসেফালোপ্যাথি অথবা কমা পর্যন্ত হতে পারে। ওষুধের এসব প্রতিক্রিয়া বেড়ে যেতে পারে ওষুধের হ্রাসকৃত প্রোটিন বাইন্ডিং-এর কারণে। দাঁত ও মুখের চিকিৎসায় এসব ওষুধ প্রয়োগের প্রয়োজন হলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োগ করতে হবে। দাঁতের চিকিৎসায় লোকাল এনেসথেসিয়া নিরাপদ। তবে লিগনোকেইন লোকাল এনেসথেসিয়ার চেয়ে প্রিলোকেইন অধিক নিরাপদ। মুখের তীব্র ব্যথার কারণে যদি বেনজিডায়াজিপিন দ্বারা ইন্ট্রাভেনাস সিডেশন বা ঘুমের ওষুধ প্রয়োগের প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে রিলেটিভ এনালজেসিয়া অধিকতর নিরাপদ। দাঁত ও মুখের চিকিৎসায় জেনারেল এনেসথেসিয়া যদি একান্তই প্রয়োজন হয় তবে তা একজন অভিজ্ঞ এনেসথেসিওজিস্টের তত্ত্বাবধানে করা উচিত। এনেসথেসিয়ার পূর্বে প্রিমেডিকেশনে অপিয়ড জাতীয় ওষুধ কোনভাবেই দেয়া যাবে না।
প্যারেনকাইমাল লিভারের রোগে রোগীর রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই প্যারেনকাইমাল লিভারের রোগীর মুখের কোন সার্জারি প্রয়োজন হলে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। রক্ত পরীক্ষায় যদি দেখা যায় প্রথমবিন টাইম বেশি হয় তবে সেক্ষেত্রে ভিটামিন-কে ১০ মিলিগ্রাম (ফাইটোমেনাডিওন) প্রতিদিন ইনজেকশন আকারে কয়েক দিনের জন্য প্রদান করতে হবে অপারেশনের আগে। তাছাড়া রোগীকে খাবার গ্রহণের সময় গুরুপাক খাবার পরিহার করা উচিত। স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি সম্পূরক খাবার হিসাবে গ্যানোডার্মা লুসিডাম প্রজাতির মাশরুম লিভারের জন্য উপকারী শক্তিশালী গ্যানোডারিক এসিড আরএস এবং টি বিদ্যমান। তবে সব চিকিৎসাই একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শক্রমে গ্রহণ করা উচিত। তাই লিভারের রোগীদের মুখ ও দাঁতের চিকিৎসা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে হবে।

ডা. মোঃ ফারুক হোসেন
মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ

No comments

Powered by Blogger.