শেষ হলো ইজতেমার প্রথম পর্ব- বিশ্বকে শান্তিময় করে দিতে আল্লাহর রহমত কামনা

‘হে আল্লাহ, আমাদের দোয়া কবুল করো, অন্তরে হেদায়েত দান করো। হে রহমানুর রাহিম, সব সমস্যা দূর করে দাও, সারা বিশ্বে তোমার রহমত ছড়িয়ে দাও, বিশ্বকে শান্তিময় করে দাও।
’ অশেষ শ্রদ্ধা ও আর ভক্তি নিয়ে মহান আল্লাহপাকের দরবারে এই প্রার্থনাই করছিলেন দিল্লির মাওলানা জোবায়েরুল হাসান।
মাইকে আর মুঠোফোনের এফএম রেডিওতে সেই প্রার্থনা ছড়িয়ে পড়েছিল টঙ্গীর তুরাগতীরের মূল ইজতেমা মাঠের চারপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মাঠে, মহাসড়কে, ঘরবাড়ির ছাদে, তুরাগের দুই তীরে, কিনারে থাকা নৌকায়, পথে আটকে থাকা বাসে, ট্রাকে, ব্যক্তিগত গাড়িতে বসে আল্লাহর দরবারে দুই হাত তোলেন।
আখেরি মোনাজাতকালে মহান আল্লাহপাকের কাছে অশেষ রহমত কামনায় আবেগাপ্লুত লাখো মুসল্লির কণ্ঠে উচ্চারিত ‘আমিন আমিন’ ধ্বনিতে গোটা ইজতেমা ময়দান এক পুণ্যময় ভূমিতে পরিণত হয়। নিজ নিজ গুনাহ মাফ ও আত্মশুদ্ধি লাভের প্রত্যাশায় মুসল্লিরা অশ্রুসিক্ত হয়ে মহান আল্লাহর দরবারে পানাহ চান।
মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও মঙ্গল কামনা করে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে গতকাল রোববার শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। ১৮ জানুয়ারি শুরু হবে বিশ্ব মুসলিমের অন্যতম বৃহৎ এই জমায়েতের দ্বিতীয় পর্ব। ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ৪৭তম বিশ্ব ইজতেমা। প্রথম পর্বে ৮৯টি দেশের ২৫ হাজার বিদেশি নাগরিকসহ কয়েক লাখ লোক অংশ নেয়।
গতকালের আখেরি মোনাজাত শুরু হয় ১২টা ৫৬ মিনিটে। প্রায় ২১ মিনিট ধরে চলা মোনাজাতে সারা বিশ্বের মানুষের সুখ-সমৃদ্ধি কামনা ছাড়াও আল্লাহর কাছে নিজের ভুলত্রুটি ও পাপ মোচনের আকুতি জানানো হয়।
রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান বঙ্গভবনের দরবার হলে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে বসে আখেরি মোনাজাতে শরিক হন। বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া এটলাস হোন্ডা কোম্পানির টঙ্গী কার্যালয়ে বসে মোনাজাতে শরিক হন। এ ছাড়া সরকারের মন্ত্রী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও মোনাজাতে অংশ নেন।
গতকাল বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের শেষ দিনে ভোর থেকে শুরু হয় বয়ান। মোনাজাতের আগে শেষ বয়ানে বলা হয়, প্রত্যেককে ব্যক্তিগত আমল ও ইজতেমায়ে আমল করতে হবে। একটা করতে গিয়ে অন্যটিকে বাদ দেওয়া যাবে না। কেননা, একটি অন্যটির পরিপূরক। নবীর প্রতি ভালোবাসা অন্তরে ধারণ করতে হবে। এ জন্য বেশি বেশি দরুদশরিফ পাঠ করতে হবে।
বয়ানে বলা হয়, আল্লাহ তাআলা আমাদের যে উদ্দেশ্যে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, আমরা তা সঠিকভাবে পালন করতে পারিনি, পারছি না। এ জন্য তাঁর কাছে মাফ চাইতে হবে। দীন ও দাওয়াতের কাজকে জীবনের উদ্দেশ্য করে নিতে হবে।
তিন দিন ইজতেমায় থেকে দ্বিতীয় দফা ইজতেমায়ও শরিক হওয়ার আকাঙ্ক্ষার কথা জানালেন ঢাকার নবাবগঞ্জের রহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ইজতেমা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়বেন। তিনি আরও বলেন, ‘মুসলমানদের জন্য আর কোনো নবী আসবেন না। তাই আমাদেরই নবীর নির্দেশিত কাজ করতে হবে। মানুষকে দীনের দাওয়াত দিতে হবে।’
মোনাজাত শেষ হওয়ার পর শুরু হয় বাড়ি ফেরার তাগিদ। বাঁধভাঙা স্রোতের মতো মুসল্লিরা ছুটে চলেন। কারও পিঠে ব্যাগ, কারও মাথায় বোঝা। টঙ্গীর আশপাশের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে সৃষ্টি হয় জনজট ও যানজট। অসংখ্য মুসল্লিকে যানবাহন না পেয়ে হেঁটে রওনা দিতে হয়।
তিন দিনের ইজতেমায় একজন ভারতীয় নাগরিকসহ মোট ১৩ জন মারা গেছেন। ইজতেমা মাঠেই তাঁদের জানাজা হয়েছে। গত শনি ও রোববার মারা যান মোট নয়জন। মৃত ব্যক্তিরা হলেন: কলকাতার ২৪ পরগনার কাতালবাজার রোড এলাকার রফিক উদ্দিন (৫০), সিরাজগঞ্জের জালাল মোল্লা (৬৫), নরসিংদীর চান মিয়া (৬০), রংপুর সদরের খলিলুর রহমান (৮০), ফরিদপুরের আলাউদ্দিন শেখ (৪৬), যশোরের সৈয়দ আলী খান (৬০), চাঁদপুর সদরের আবুল খায়ের পাটোয়ারী (৪০) ও আনসার আলী মিস্ত্রি (৬৪)।

No comments

Powered by Blogger.