ভিনদেশের চিঠি- সুন্দরীতমা অথবা তেলাপোকা কাহিনি
অস্ট্রেলিয়ায় এসে তপুর বাসায় উঠলাম। কিছুদিনের মধ্যেই বাসায় তেলাপোকার উপদ্রব শুরু হলো। অসংখ্য তেলাপোকা। ‘আমাদের বাসায় তেলাপোকা’ না বলে, ‘আমরাই তেলাপোকার বাসায় থাকি’ বলাটা যুক্তিসংগত হয়ে গেল। তেলাপোকা সমস্যায় জীবন অতিষ্ঠ। সামনেই পরীক্ষা।
তেলাপোকার পেছনে নষ্ট করার সময় কই? এ দেশে পতঙ্গ নিবারক কোম্পানি আছে। ডাকলেই খরচ ২৫০ ডলার, প্রায় ২২ হাজার টাকা। তেলাপোকার পেছনে এত টাকা ঢালব? অসম্ভব। তেলাপোকায় যদি খেয়ে ফেলে, ফেলুক। তবু এত টাকা দিতে পারব না। পাশের ফ্ল্যাটে এক চীনা দম্পতি থাকেন। কিন্তু তাঁদের বাসায় তেলাপোকা নেই। তপু বলল, ওরা তেলাপোকা খায়। ওখানে যাবে মরতে?
বলিস কী? এই জিনিসও কেউ খায়?
ওরা সবই খায়।
অস্ট্রেলিয়ার তেলাপোকা হলদে ধরনের লাল। পাগুলো কেমন জানি করাতের মতো। এ জিনিস কেউ খায়, এটা চিন্তা করলেও বমি আসে। তেলাপোকা নিধনে তপুর চেষ্টার কোনো অন্ত নেই। আজ এটা করছে তো কাল ওটা। একদিন দেখি মহা উৎসাহে আলুভর্তা করছে। জিজ্ঞেস করলাম, আলুভর্তা কার জন্য?
তেলাপোকার জন্য।
মানে?
হুঁ। সেদ্ধ আলুর সঙ্গে বেকিংপাউডার। মামারা এবার বুঝবে।
কী বুঝবে?
খেলেই মরবে।
আলুভর্তা খেয়ে দুনিয়াতে কিছু মরে? বরং মোটাতাজা হয়। দ্রুত বংশ বিস্তার করবে।
আরে না। বেকিংপাউডার আছে না?
বেকিংপাউডারে কী হবে?
পেটের মধ্যে গিয়ে ফুলবে। পেট ফুলে মরবে।
বুদ্ধির জাহাজ! এসব জানলি কোত্থেকে?
ইন্টারনেটে...।
তপুর আলুথেরাপিতে অল্প কিছু মরল বটে। কিন্তু অজস্র তেলাপোকার কাছে তা কিছুই না। পরীক্ষার আগের রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে তপুকে বললাম, তুই একটা কাজ কর।
কী?
ভাতের সঙ্গে জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি গুঁড়া করে মাখিয়ে রাখ।
তাতে কী হবে?
তেলাপোকার জন্মনিয়ন্ত্রণ হবে।
মানে?
ওদের পরিবার পরিকল্পনা করাতে পারলেই কাজের কাজ হবে। তখন তোর আলুথেরাপিও কাজে লাগবে।
সত্যি?
অবশ্যই সত্যি। তুই করেই দ্যাখ।
সকালে ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি হয়ে গেল। কোনোমতে জামা-কাপড় পরে দৌড়ে গিয়ে বাস ধরলাম। বাসের জানালার ধারে বসে পরীক্ষার কথা ভাবছি। বাসটি একটা স্টপেজে থামলে এক সুন্দরীতমা এসে আমার পাশে বসল। আড়চোখে তার দিকে আবার তাকালাম। মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে একগাল পরিমিত হাসি দিল। মুহূর্তেই মাথাটা ফাঁকা হয়ে গেল। কী গভীর কালো মায়া হরিণী চোখ! ভি-কাটের বড়গলা টাইট গেঞ্জিতে মিনি স্কার্ট। হলুদ ফরসা পা। সাক্ষাৎ ক্যাটরিনা কাইফের ছোট বোন। আমার হূদয়পথের রোদে এক পশলা সুরভি ছড়িয়ে দিল।
একটু পরে হঠাৎ আমার কাপড়চোপড়ের ভেতরে একটা কিছুর উপস্থিতি টের পেলাম। আস্তে অস্তে নড়াচড়া করছে। লোহাকাটা করাতের মতো ধারালো, ছোট ছোট করাতের মতো কী দিয়ে যেন জায়গা-বেজায়গায় আঁচড় দিচ্ছে। বুঝতে বাকি থাকল না, এটা তেলাপোকাই। এদের পা এত ধারালো হতে পারে! কোনো দিন তা চিন্তাই করিনি। আমার হার্টবিট বেড়ে গেল। কেমন জানি লাগছে! তেলাপোকাটি শরীরের এমন জায়গায় অবস্থান নিয়েছে যে প্যান্টের ওপর দিয়ে তাকে টিপে মারতে চাইলে সে মরবে কি না জানি না। তবে আমি মরে যাব নিশ্চিত। তা ছাড়া পাশেই বসা এক সুন্দরীতমা। বাসের মধ্যে কত মানুষ! দাঁতে দাঁত চেপে মনে মনে ওপরওয়ালাকে ডাকছি।
কখন যে জ্ঞান হারিয়েছি, নিজেই জানি না। চোখ খুলে দেখি আমি হাসপাতালে। একপাশে তপু আরেক পাশে সেই সুন্দরীতমা। আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বিশ্বাস করতে পারলাম না। কয়েকবার চোখের পাতা ফেলে আবার তাকালাম। মুহূর্তেই শত্রু তেলাপোকাটির প্রতি একধরনের কৃতজ্ঞতা অনুভব করলাম। তক্ষুনি সেই মেয়েটি জিজ্ঞেস করল, ‘তোমার কেমন লাগছে এখন?’ আমি কিছুই বলতে পারলাম না।
শাখাওয়াৎ নয়ন
অস্ট্রেলিয়ার নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডিরত।
nayonshakhawat@yahoo.com
বলিস কী? এই জিনিসও কেউ খায়?
ওরা সবই খায়।
অস্ট্রেলিয়ার তেলাপোকা হলদে ধরনের লাল। পাগুলো কেমন জানি করাতের মতো। এ জিনিস কেউ খায়, এটা চিন্তা করলেও বমি আসে। তেলাপোকা নিধনে তপুর চেষ্টার কোনো অন্ত নেই। আজ এটা করছে তো কাল ওটা। একদিন দেখি মহা উৎসাহে আলুভর্তা করছে। জিজ্ঞেস করলাম, আলুভর্তা কার জন্য?
তেলাপোকার জন্য।
মানে?
হুঁ। সেদ্ধ আলুর সঙ্গে বেকিংপাউডার। মামারা এবার বুঝবে।
কী বুঝবে?
খেলেই মরবে।
আলুভর্তা খেয়ে দুনিয়াতে কিছু মরে? বরং মোটাতাজা হয়। দ্রুত বংশ বিস্তার করবে।
আরে না। বেকিংপাউডার আছে না?
বেকিংপাউডারে কী হবে?
পেটের মধ্যে গিয়ে ফুলবে। পেট ফুলে মরবে।
বুদ্ধির জাহাজ! এসব জানলি কোত্থেকে?
ইন্টারনেটে...।
তপুর আলুথেরাপিতে অল্প কিছু মরল বটে। কিন্তু অজস্র তেলাপোকার কাছে তা কিছুই না। পরীক্ষার আগের রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে তপুকে বললাম, তুই একটা কাজ কর।
কী?
ভাতের সঙ্গে জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি গুঁড়া করে মাখিয়ে রাখ।
তাতে কী হবে?
তেলাপোকার জন্মনিয়ন্ত্রণ হবে।
মানে?
ওদের পরিবার পরিকল্পনা করাতে পারলেই কাজের কাজ হবে। তখন তোর আলুথেরাপিও কাজে লাগবে।
সত্যি?
অবশ্যই সত্যি। তুই করেই দ্যাখ।
সকালে ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি হয়ে গেল। কোনোমতে জামা-কাপড় পরে দৌড়ে গিয়ে বাস ধরলাম। বাসের জানালার ধারে বসে পরীক্ষার কথা ভাবছি। বাসটি একটা স্টপেজে থামলে এক সুন্দরীতমা এসে আমার পাশে বসল। আড়চোখে তার দিকে আবার তাকালাম। মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে একগাল পরিমিত হাসি দিল। মুহূর্তেই মাথাটা ফাঁকা হয়ে গেল। কী গভীর কালো মায়া হরিণী চোখ! ভি-কাটের বড়গলা টাইট গেঞ্জিতে মিনি স্কার্ট। হলুদ ফরসা পা। সাক্ষাৎ ক্যাটরিনা কাইফের ছোট বোন। আমার হূদয়পথের রোদে এক পশলা সুরভি ছড়িয়ে দিল।
একটু পরে হঠাৎ আমার কাপড়চোপড়ের ভেতরে একটা কিছুর উপস্থিতি টের পেলাম। আস্তে অস্তে নড়াচড়া করছে। লোহাকাটা করাতের মতো ধারালো, ছোট ছোট করাতের মতো কী দিয়ে যেন জায়গা-বেজায়গায় আঁচড় দিচ্ছে। বুঝতে বাকি থাকল না, এটা তেলাপোকাই। এদের পা এত ধারালো হতে পারে! কোনো দিন তা চিন্তাই করিনি। আমার হার্টবিট বেড়ে গেল। কেমন জানি লাগছে! তেলাপোকাটি শরীরের এমন জায়গায় অবস্থান নিয়েছে যে প্যান্টের ওপর দিয়ে তাকে টিপে মারতে চাইলে সে মরবে কি না জানি না। তবে আমি মরে যাব নিশ্চিত। তা ছাড়া পাশেই বসা এক সুন্দরীতমা। বাসের মধ্যে কত মানুষ! দাঁতে দাঁত চেপে মনে মনে ওপরওয়ালাকে ডাকছি।
কখন যে জ্ঞান হারিয়েছি, নিজেই জানি না। চোখ খুলে দেখি আমি হাসপাতালে। একপাশে তপু আরেক পাশে সেই সুন্দরীতমা। আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বিশ্বাস করতে পারলাম না। কয়েকবার চোখের পাতা ফেলে আবার তাকালাম। মুহূর্তেই শত্রু তেলাপোকাটির প্রতি একধরনের কৃতজ্ঞতা অনুভব করলাম। তক্ষুনি সেই মেয়েটি জিজ্ঞেস করল, ‘তোমার কেমন লাগছে এখন?’ আমি কিছুই বলতে পারলাম না।
শাখাওয়াৎ নয়ন
অস্ট্রেলিয়ার নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডিরত।
nayonshakhawat@yahoo.com
No comments