ফেসবুকের দেয়াল তো আছে by আনোয়ার হোসেন

 ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী প্রচার কাজে রয়েছে আচরণবিধি। কী করা যাবে এবং কী করা যাবে না সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের নিয়ম-কানুন বেশ কঠোর। তারা বাড়ি এবং অন্যান্য স্থানে দেয়াল লিখন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু ফেসবুকের দেয়াল? তার ওপর নির্বাচন কমিশন খবরদারি করবে,
এমন ক্ষমতা কোথায়? শনিবার আনন্দবাজার লিখেছে : এই দেয়ালে নির্বাচন কমিশনের কোনো বিধিনিষেধ নেই। খরচের হিসাব দেওয়ার প্রয়োজন নেই। সেই কারণেই সমস্ত দেয়াল ছয়লাপ লাল অথবা সবুজে। স্লোগান থেকে ছবি, কার্টুন থেকে ইশতেহার, কী নেই সেখানে। এটা কোনো শহর কিংবা গ্রামের দেয়াল নয়। ইন্টারনেটের সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট 'ফেসবুকের ওয়াল' এখন ভোট প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার।
আনন্দবাজারের জলপাইগুড়ি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সদর বিধানসভার আসনে লড়ছেন বামফ্রন্ট প্রার্থী ফরওয়ার্ড বল্গকের গোবিন্দ রায়। তিনি নিজেই ঢুকে পড়েছেন ফেসবুকে। তার অ্যাকাউন্ট খুললেই পাওয়া যাবে নিজস্ব এক বিস্তৃত ওয়াল। সেখানে নিজের ইচ্ছামতো ছবি বা নিজের কথা লেখা যায়। লাল পতাকায় দৃপ্ত সিংহকে পেছনে রেখে গোবিন্দ বাবুর ছবি। দেখা যাবে জনসভা, মিছিলের ছবি। স্লোগান, ভোট দেওয়ার আবেদন থেকে পরিবর্তনের স্লোগানকে ব্যঙ্গ করে নানা ব্যঙ্গচিত্র। নির্বাচনী আইনে প্রতিপক্ষের সম্পর্কে বক্তব্য রাখার বিষয়ে সীমারেখা টানা রয়েছে। কিন্তু ফেসবুকের দেয়াল আটকাবে কে?
বামফ্রন্টের প্রতিপক্ষ কংগ্রেসের সুখবিলাস বর্মার অবশ্য ফেসবুকে কোনো অ্যাকাউন্ট নেই। কিন্তু জেলা কংগ্রেসের সভাপতি মোহন বসুর অ্যাকাউন্ট রয়েছে। রয়েছে কংগ্রেসের 'টিম ফেসবুক'। যার সৌজন্যে সুখবিলাস বর্মার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিশাল মিছিলের ছবি ঢুকে পড়েছে ফেসবুকে।
গোবিন্দ বাবুর জলপাইগুড়ির সীমান্তবর্তী গ্রামের বাড়ির উঠোনে বসে সভা করার ছবি বা মিছিলের পাল্টা কংগ্রেস প্রার্থীর বক্তৃতা থেকে জনসংযোগের ছবি ঠাঁই পেয়েছে সেখানে। জনগণের কাছে জোড়হাতে ভোট আবেদনের ছবি থেকে পরিবর্তনের পক্ষে সওয়াল, সবই ফেসবুকের মাধ্যমে এক থেকে বহুজনের কাছে ছড়িয়ে যাচ্ছে। একইভাবে ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ী কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী গৌতম দেবের হয়েও প্রচার চালাচ্ছে টিম ফেসবুক। সেখানে প্রচারে গিয়ে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাঁসার থালাবাটিতে খাওয়ার এক্সক্লুসিভ ছবিও রয়েছে।
আদতে, ফেসবুক কিংবা অর্কূট এক ধরনের সামাজিক বন্ধুত্বের ওয়েবসাইট। এগুলোর সাহায্যে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তের লোকজনের সঙ্গে পরিচিত হয়ে ওঠা যায়। তৈরি হতে পারে ভাবের আদান-প্রদান। ভিডিও ফুটেজ আদান-প্রদান করা যেতে পারে। নিজের সম্পর্কে খুব সাধারণ কিছু তথ্য দিয়েই ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। স্কুলপড়ুয়া থেকে প্রবীণ, কে আক্রান্ত নয় এই ফেসবুক নেশায়। ফরওয়ার্ড বল্গক প্রার্থী গোবিন্দ বাবুর নিজের অ্যাকাউন্ট রয়েছে ফেসবুকে। তিনি বলেন, 'এটা প্রচারের অন্যতম সেরা মাধ্যম। অনেকদিন ধরেই আমি ফেসবুকে রয়েছি। প্রচারের কিছু ছবিও তুলে দিচ্ছি।' জেলা কংগ্রেসের 'টিম ফেসবুকে'র সদস্য বলতে সুদীপ সরকার, শুভেন্দু বসু, জয়ন্ত ভৌমিক, অরিন্দম ভট্টাচার্যসহ কিছু যুব নেতা। সুদীপ বাবু বলেন, 'ধরুন কর্মসূত্রে কেউ বাইরে রয়েছে। তার কাছে ফেসবুকের মাধ্যমে আবেদন জানাতে পারছি। আগে এটা কল্পনা করা যেত না।' অরিন্দম, শুভেন্দু, জয়ন্তরা বলেন, 'কয়েকজন সিপিএম নেতাকর্মীও আমাদের ফেসবুক বন্ধু। তাদের কাছেও আমাদের বক্তব্য পেঁৗছে দিয়েছি।'
বাংলাদেশেও কিন্তু এমন প্রযুক্তি কার্যকর হতে পারে এবং আগামী সাধারণ নির্বাচনে নিশ্চিতভাবেই তা দেখা যাবে।
জয়তু তথ্যপ্রযুক্তি।

No comments

Powered by Blogger.