বিনিয়োগকারীদের সুদ মওকুফ-সুষ্ঠু নীতিমালা ও আন্তরিকতা অপরিহার্য

শেয়ারবাজারে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিচার হয়নি দীর্ঘদিনেও। আর এর খেসারত দিতে হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের, বিশেষ করে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। ভিটেমাটি বিক্রি করে যাঁরা অর্থপ্রাপ্তির আশায় বিনিয়োগ করেছিলেন, তাঁদের আশাভঙ্গ হয়েছে শেয়ারবাজারের অস্বাভাবিক আচরণে।
দীর্ঘ আন্দোলনের ইতিবাচক পরিণতি হলেও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বড় একটি অংশ এখনো সেই ইতিবাচক অবস্থা থেকে সুফল পাবে, এমন লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। সুদ মওকুফ করার সরকারি সিদ্ধান্ত তাদের বেলায় কার্যকর হচ্ছে না মূলত ব্রোকারেজ হাউসগুলোর অধিকাংশের উদ্যোগহীন থাকার কারণে। বেসরকারি ব্রোকারেজ হাউসগুলোর উদ্যোগী ভূমিকা না নেওয়ার কারণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সেখানে আইনের অপ্রতুলতা রয়েছে। দীর্ঘ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারি একটি সিদ্ধান্ত আদায় করা সম্ভব হলেও তা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় নীতিমালার জন্যও কি নতুন করে আন্দোলনে নামতে হবে বিনিয়োগকারীদের? বেসরকারি ব্রোকারেজ হাউসগুলো যে ঋণ মওকুফের সুবিধা প্রদান করবে, তার বিনিময়ে তারা সরকারের কাছ থেকে কর ছাড়ের সুবিধা দাবি করছে। তাদের দাবির পক্ষে যুক্তিও আছে। কারণ তারা মার্জিন ঋণ দিয়েছে ব্যাংকঋণের মাধ্যমে। সুদ মওকুফের কারণে তাদের যে লোকসান হবে, তা পুষিয়ে নেওয়ার কোনো পথ খোলা রাখা হয়নি। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে যে সুবিধা আছে, সেই সুবিধা পাচ্ছে না তারা। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো তাদের 'ফাদার ব্যাংক' থেকে সহায়তা পাবে সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে। বাস্তবতা হচ্ছে, সরকার এখনো সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোনো নীতিমালা গ্রহণ করেনি। ফলে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে এক ধরনের ঢিলেমি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারি নীতিমালা না থাকার পাশাপাশি বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে আন্তরিকতার ঘাটতিও দেখা যায়।
২০১০ সালে শেয়ারবাজারে যে অস্বাভাবিক ধস নামে তাতে যেসব বিনিয়োগকারী সর্বস্বান্ত হয়েছে, তাদের পূর্ণ তালিকা প্রকাশ হয়েছে অতি সম্প্রতি। সরকার সুদ মওকুফের সুবিধা দেওয়ার পর অনেকেই সে সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এ ব্যাপারে সরকারি সহযোগিতাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে তৈরি হয়েছে এক ধরনের বৈষম্য। সুষ্ঠু নীতিমালার অভাবে যে এ রকম বৈষম্য সৃষ্টি হতে পারে, এটা সরকারের আগেই চিন্তা করা উচিত। শেয়ারবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে সরকারের দেওয়া সহযোগিতা বাস্তবায়নে এ মুহূর্তে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সমন্বয় এবং সরকারের আন্তরিকতা। খেয়াল রাখতে হবে বিনিয়োগকারীদের মানসিক অবস্থার বিষয়টির প্রতিও। আর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন কতটা হলো, তার জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু তদারকি। তদারকির কোনো ব্যবস্থা না থাকায়ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা সুফল পাচ্ছেন না। কিংবা সুদ মওকুফের সুবিধা কবে নাগাদ শতভাগ ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা পাবেন, তারও নিশ্চয়তা নেই। তাই সর্বস্ব হারানো বিনিয়োগকারীদের মাথা তুলে দাঁড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে সরকারকেই। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ-বঞ্চনা ও ব্যথা-বেদনা যে নিদারুণভাবে উপেক্ষিত হয়েছে, তা সরকারকে উপলব্ধি করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.