নিশ্চিন্ত হতে পারছে না নিশ্চিন্তপুরের ওরা

এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর নিজেদের জীবন নিয়ে কিছুতেই নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় নিশ্চিন্তপুরের পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা। সবার মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। যদি আগুন লেগে যায়! তাঁদের পরিণতিও কী তাজরীন ফ্যাশনের নিহত পোশাককর্মীদের মতো হবে?
ওই এলাকার পোশাককর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখানকার বেশির ভাগ কারখানায় আগুন লাগলে বের হওয়ার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। এটি তাঁদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এখানকার পোশাককর্মীদের মুখে এখন শুধু নিজেদের জীবন নিয়ে ভয় আর আতঙ্কের কথা।
আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে নিশ্চিন্তপুর এলাকার পোশাক কারখানা বার্জের শ্রমিকেরা অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। এরপর কর্তৃপক্ষ কারখানাটি আজকের জন্য ছুটি ঘোষণা করে। এ পরিস্থিতিতে শ্রমিক অসন্তোষের আশঙ্কায় ওই এলাকার সবগুলো পোশাক কারখানায়ও ছুটি ঘোষণা করা হয়।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) মোস্তফা কামাল প্রথম আলো ডটকমকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
গত শনিবার সন্ধ্যায় নিশ্চিন্তপুরের তাজরীন ফ্যাশনে আগুন লাগে। ওই অগ্নিকাণ্ডে এ পর্যন্ত ১১১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম বদরুল আলম প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ৪৩ জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঢাকার জেলা প্রশাসক শেখ ইউসুফের তত্ত্বাবধানে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। ৫৮টি লাশ শনাক্ত করা যায়নি। এসব লাশ দাফনের জন্য বেসরকারি সংস্থা আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলাম নিয়ে গেছে।
অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাইন উদ্দিন খন্দকারকে আহ্বায়ক করে সরকার চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর পক্ষ থেকে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে এক লাখ টাকা করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির আশুলিয়া অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী জাহানারা আকতার। ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। বাকি ১৫ হাজার করে টাকা পরে দেওয়া হবে বলে জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে। যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পর্যাপ্ত সাহায্য-সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দেন।
এ দুর্ঘটনায় আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকে জাতীয় শোক পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বলেছিলেন। শতাধিক পোশাককর্মীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া।

No comments

Powered by Blogger.