পীরগঞ্জে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে পাঁচটি ইটভাটা

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে পাঁচটি ইটভাটা। ভাটাগুলোতে ইট পোড়ানোর জন্য বসানো হয়েছে নিষিদ্ধ ড্রাম চিমনি। এসব ইটভাটায় এখন জ্বালানি হিসেবে কাঠ পোড়ানোর প্রস্তুতি চলছে।
উপজেলার উত্তর গড়গাঁও, ঘোড়াধাপ, সিন্দুরনা, খনগাঁও ও ভেলাতৈড় গ্রামের ফসলি জমিতে সম্প্রতি নতুন অবৈধ এই পাঁচটি ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উত্তর গড়গাঁও গ্রামে ফসলি জমিতে ‘এসআরএম ব্রিকস’ নামের একটি ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। ড্রাম চিমনিও তৈরি হয়ে গেছে। ভাটায় কাঁচা ইট ঢোকানো হচ্ছে। ভাটার শ্রমিকেরা জানান, এক সপ্তাহের মধ্যেই আগুন দেওয়া হবে। এই ভাটার মালিক উপজেলার সিঙ্গারোল গ্রামের শমসের আলী।
ভোমরাদহ ইউনিয়নের ঘোড়াধাপ গ্রামের ‘চেরুয়া কান্দরে’ বিএমডিএ ২৪ নম্বর গভীর নলকূপ এলাকার ফসলি জমিতে ‘এসএলডব্লিউ ব্রিকস’ নামের একটি ইটভাটা স্থাপন করছেন সিরাজুল ইসলাম, লিয়াকত আলী ও আবদুল ওয়াহেদ। ভাটার চারদিকে ধান আর আখের খেত। ভাটার শ্রমিকেরা জানান, ৪ নভেম্বর থেকে সেখানে ইট তৈরির কাজ চলছে। নভেম্বরের শেষের দিকে ভাটায় আগুন দেওয়ার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
সিন্দুরনা গ্রামের আবাদি জমিতে ইটভাটা স্থাপন করেছেন ভেমটিয়া গ্রামের বেলাল হোসেন। ড্রাম চিমনি দিয়ে ভাটায় ইট পোড়ানো শুরু করার জন্য গোদাগাড়ী বাজারের সহিদুল ইসলামের করাতকলের ভেতরে কয়েক হাজার মণ কাঠ কিনে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বেলাল হোসেন তাঁর ভাটায় কাঠ পোড়ানোর জন্য আমার করাতকলটি ব্যবহার করছেন।’
খনগাঁও ইউনিয়নের আরাজি উজ্জ্বলকোঠা গ্রামের ফসলি জমিতে ড্রাম চিমনির ইটভাটা তৈরি করেছেন স্থানীয় নরেশ চন্দ্র রায় এবং ভেলাতৈড় গ্রামেও একইভাবে ফসলি জমিতে ইটভাটা তৈরি করেছেন বজলার রহমান নামের এক ব্যক্তি। তাঁরা ভাটায় কাঠ পোড়ানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও অন্যান্য অনুমোদন না নিয়ে কোনোভাবেই ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। ‘যথাযথ অনুমতি গ্রহণ সাপেক্ষে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে ভাটায় আগুন দিতে হবে’ মর্মে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নতুন স্থাপন করা ইটভাটার একজন মালিক বলেন, ‘ভাটা করতে গিয়ে অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। ড্রাম চিমনির বদলে একটি পাকা চিমনি তৈরি করতে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা বেশি খরচ হবে। আমরা ড্রাম চিমনির মাধ্যমে ইটভাটা করার জন্য প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে অলিখিত অনুমতি পাওয়ার চেষ্টা-তদবির চালাচ্ছি।’
ইউএনও সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে সজাগ দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। কেউ নিয়ম অমান্য করে ভাটায় ইট পোড়ানো কার্যক্রম শুরু করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

No comments

Powered by Blogger.