অর্থ কেলেঙ্কারির তদন্ত-অপকর্ম ঢাকার অপচেষ্টা গ্রহণযোগ্য হবে না

দেশের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা এখন হলমার্ক-সোনালী ব্যাংকের অর্থ কেলেঙ্কারি। এই জালিয়াতির সঙ্গে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা জড়িত- এমন সন্দেহ থেকেই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পর্ষদের সাবেক ও বর্তমান সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন ব্যাংকটির সংশ্লিষ্ট শাখার বেশ কিছু কর্মকর্তাসহ প্রধান কার্যালয়ের অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও। সর্বোপরি সরকারি দলের অনেক শীর্ষ নেতার নামও এসেছে সন্দেহভাজনদের তালিকায়। সরকারের দায়িত্বশীল অনেক ব্যক্তি হলমার্ক ও সোনালী ব্যাংকের অর্থ কেলেঙ্কারির বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য করায় সন্দেহের তীর তাঁদের দিকেও গেছে। এরই মধ্যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সোনালী ব্যাংক হলমার্ক বিষয়ে কোনো মামলা করছে না। শুরুতে সরকার সোনালী ব্যাংককে ফৌজদারি মামলা করতে বললেও বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শক্রমেই মামলা করা থেকে বিরত থাকছে সোনালী ব্যাংক। মামলা করবে দুদক। হলমার্ক-সোনালী ব্যাংক অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনা নিয়ে অনেক আগে থেকেই মামলা করার প্রস্তুতি হিসেবে বিভিন্ন পর্যায়ে শুনানি চলছিল। আবার সোনালী ব্যাংককে মামলা করতে হলে দুদকের মাধ্যমে যাওয়ারও সুযোগ ছিল।
সোনালী ব্যাংকে আর্থিক জালিয়াতির যে ঘটনা ঘটেছে, তা নজিরবিহীন। জালিয়াতির মাধ্যমে যে তিন হাজার ৬০৭ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে দুই হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা নিয়ে গেছে হলমার্ক গ্রুপ। গত মে মাসে ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলেও আত্মসাৎ করা টাকা উদ্ধারে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো তৎপরতা লক্ষ করা যাচ্ছে না। তদন্ত, টাকা উদ্ধারের ব্যবস্থা গ্রহণে বিলম্ব থেকে অনেকের মনেই নতুন সন্দেহ দানা বাঁধতে পারে। সরকারের দায়িত্বশীল কোনো ব্যক্তি বা কথিত রাঘব বোয়ালকে বাঁচাতেই কালক্ষেপণ করা হচ্ছে- এমন সন্দেহ জনমনে দেখা দেওয়াটাও এখন আর অমূলক নয়। যদিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী তদন্ত চলছে।
এমনিতে আমাদের দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঋণখেলাপি-সংস্কৃতি চালু আছে। ধরেই নেওয়া হয়, যত বড় ঋণখেলাপি তত বেশি শক্তিশালী। বড় ঋণখেলাপিরা আইনের ঊর্ধ্বে- এমনটিও মনে করেন অনেকে। ঋণখেলাপিরা অনেক ক্ষেত্রে আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছে- এমন উদাহরণ আছে বলেই হয়তো মানুষের মনে এ ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে। হলমার্ক কেলেঙ্কারির পর স্বাভাবিকভাবেই মানুষের মনে প্রাথমিকভাবে এ ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে যে আইনের জাল দিয়ে জালিয়াতচক্রকে ধরা যাবে না। তার পরও দুদক মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, এটা আশার কথা। সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের পাঁচ সদস্যকে দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আজ আরো ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় উপকমিটি সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন করেছে।
এখন মূল বিষয় হচ্ছে, হলমার্কের আত্মসাৎ করা টাকা উদ্ধার ও জালিয়াতচক্রকে আইনের হাতে সোপর্দ করা। এ কাজটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দক্ষতার সঙ্গে করতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দিলে চলবে না। 'বিলম্বিত বিচার- বিচারহীনতার নামান্তর', এমন একটি কথা আইন-আদালত অঙ্গনে চালু আছে। হলমার্কের ক্ষেত্রে যেন তেমন কোনো ঘটনা না ঘটে। আমরা চাইব হলমার্ক-সোনালী ব্যাংকের জালিয়াতির ঘটনাটির নিরপেক্ষ তদন্ত হবে। টাকা উদ্ধারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে। একই সঙ্গে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের জালিয়াতি রোধ করতে নতুন কোনো আইন প্রণয়নের প্রয়োজন আছে কি না, সেটাও ভেবে দেখা দরকার।

No comments

Powered by Blogger.