আবর্জনামুক্ত ঢাকা-আধুনিক প্রযুক্তি ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা

 এবারের পহেলা বৈশাখে একটি ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ নিয়ে গ্রামীণফোন সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছে। রাজধানীর পহেলা বৈশাখের আয়োজনের কেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ওই দিন পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে গ্রামীণফোন ও ঢাকা সিটি করপোরেশন।
বিজ্ঞাপন দিয়ে জানানো হয়েছিল, প্রতিবছর পহেলা বৈশাখ উদযাপনের ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ১০০ টনেরও বেশি আবর্জনা জমে। ফলে আবর্জনামুক্ত করার উদ্যোগ। এ বিষয়ে নাগরিক সহায়তাও চেয়েছিলেন তারা। জানা গেছে, কর্মসূচিটি সফল হয়েছে। প্রতীকী কর্মসূচি হিসেবে এটি অনেককেই অনুপ্রাণিত করেছে। আমরা মনে করি, ঢাকার আবর্জনা-ব্যবস্থাপনা নিয়ে এ উদ্যোগ নাগরিকদের ভাবিত ও অনুপ্রাণিত করবে। পৃথিবীর প্রতিটি শহরের মতো আমাদের রাজধানী ঢাকাতেও প্রতিদিন টন টন আবর্জনা তৈরি হয়। তবে অন্য শহরগুলোর সঙ্গে ঢাকার পার্থক্য হলো_ অন্য শহরগুলো দক্ষ আবর্জনা-ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ঝকঝকে-তকতকে থাকে, কিন্তু ঢাকায় সেই সুন্দর-সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাব প্রকট। ফলে এ শহরে যত্রতত্র অপরিচ্ছন্নতা চিহ্ন নাগরিকদের পীড়িত করে। বিশ্বের বড় শহরগুলোতে পয়ঃনিষ্কাশনের বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থা আছে। ফলে নগরে তৈরি আবর্জনা ও জঞ্জালের অনেকটাই রিসাইকেল ব্যবস্থার মাধ্যমে কাজে লাগানো সম্ভব হয়। রিসাইকেল-অযোগ্য জঞ্জাল মাটির নিচে পুঁতে ফেলা হয় বা অন্যভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য, আধুনিক সভ্যতার সঙ্গে আমাদের বসবাস শুরু হলেও সভ্যতার আবশ্যক ব্যবহার্যগুলো আমরা আয়ত্ত করতে পারিনি। ফলে মানববর্জ্য হোক কি শিল্পবর্জ্য_ আমাদের পয়ঃপ্রণালির লক্ষ্য শহরের আশপাশের নদ-নদী, বিল ও জলাশয়। নগরের বর্জ্য এ জলাশয়গুলোকে বিষাক্ত, দূষিত ও ব্যবহার অযোগ্য করে তুলেছে, নানা রকম ভোগান্তি ও বিপত্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এ দূষণ। অনেক অভিযোগ, লেখালেখি, সচেতনতা কার্যক্রমের পরও দূষণ থেমে নেই। নগর গড়লেও আজও নগরের আবশ্যক আবর্জনা-ব্যবস্থাপনার কোনো ভালো উপায় আমরা আয়ত্ত করতে পারিনি। ফলে জলাশয়গুলো তো বটেই নগরীর খোলা প্রান্তর, রাস্তার ধার, নগরপ্রান্তের স্থানগুলো স্থায়ী ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। কোনো আধুনিক নগরীর জন্য এটি সুখকর বা স্বস্তিদায়ক চিত্র নয়। অনেকেই মনে করেন, আবর্জনা-ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে। উন্নত শহরগুলোর উদাহরণ সামনে রেখে সঠিক পরিকল্পনা নিতে হবে। শুধু সিটি করপোরেশনের ওপর দায় চাপিয়ে বসে থাকলে বিষয়টির সুরাহা হবে না। কেননা ক্রমবর্ধমান এ শহরের প্রতিটি বাড়িতে তৈরি আবর্জনা সিটি করপোরেশনের জন্য খুব কঠিন কাজ। ফলে আবর্জনা-ব্যবস্থাপনার দায়িত্বটি বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ছেড়ে দেওয়া উচিত। ইতিমধ্যে বেশকিছু স্থানে বেসরকারি ব্যবস্থাপনা কার্যকর হয়েছে বটে। কিন্তু অদক্ষ ও অপেশাদার প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক ক্ষেত্রে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার বদলে নিত্যনতুন বিপত্তির জন্ম দিচ্ছে। এক্ষেত্রে দায়িত্বশীল, দক্ষ ও পেশাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ পাওয়া উচিত। কাজ ঠিকমতো হচ্ছে কি-না তাও সিটি করপোরেশনের তরফে তদারক করা উচিত। সিটি করপোরেশন বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বাইরে এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠন ও সমিতি আবর্জনা-ব্যবস্থাপনার কাজ করে। এলাকাবাসীর সচেতনতার ফলে এগুলো কার্যকর হয়েছে। এ উদ্যোগগুলোকে পেশাদারিত্বের মাধ্যমে উন্নততর করে তোলা সম্ভব। আর এজন্য স্থানীয় উদ্যোগ বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে দায়িত্ব ছেড়ে দিলেই সিটি করপোরেশন দায়মুক্ত হতে পারবে না। আবর্জনা-ব্যবস্থাপনা, সঠিক স্থানে আবর্জনা নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বটি তাদের নিতে হবে। রিসাইকেল প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা এখন ভাবতে হবে। রিসাইকেল-অযোগ্য আবর্জনা যাতে তৈরি না হয় সেজন্য সচেতনতা তৈরি করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে বড় বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হবে, বেসরকারি খাতের সহায়তা নিতে হবে। সরকার, সিটি করপোরেশন ও নাগরিক উদ্যোগের সমন্বয় হলে ঢাকা শহর আবর্জনামুক্ত ও সুন্দর একটি শহরের রূপ পেতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.