বিশেষ সাক্ষাৎকার : বেগম সেলিমা রহমান-দুর্নীতির কথা আমাদের বলার আগেই সরকারি দলের নেতারা স্বীকার করছেন

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, অর্থনীতি ও সমকালীন রাজনৈতিক প্রসঙ্গসহ বিভিন্ন বিষয়ে কালের কণ্ঠের সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন মোস্তফা হোসেইন কালের কণ্ঠ : তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করছেন আপনারা। একসময় করেছিল আওয়ামী লীগ।


গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় এর প্রয়োজনীয়তা কেন মনে করছেন?
সেলিমা রহমান : গণতন্ত্রের প্রয়োজনেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। আর আওয়ামী লীগ যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করেছিল তখন আমরাই এ পদ্ধতি প্রবর্তন করেছি। সুতরাং আমরা তো নতুন করে কিছু বলছি না। যে পদ্ধতির জন্য আন্দোলন করেছিল আওয়ামী লীগ, যে পদ্ধতিকে আমরাও গ্রহণ করেছিলাম সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায়; সেই পদ্ধতির সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে- এটাই তো স্বাভাবিক। এখন আওয়ামী লীগ চাইছে তাদের অধীনে একটা পাতানো নির্বাচনের আয়োজন করতে। এটা জনগণ মেনে নেবে কেন? সুতরাং আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চালিয়ে যাব।
কালের কণ্ঠ : আপনারা তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো রূপরেখা উপস্থাপন করেননি। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রস্তাব করেছেন।
সেলিমা রহমান : তিনি যে প্রস্তাব করেছেন, তার কোনো রূপরেখা নেই। কিন্তু সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা বর্ণিত ছিল। তাঁরাই তো সেই রূপরেখাসহ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতিই বাতিল করে দিয়েছেন। এর জন্য কি কোনো দাবি ছিল? তাঁরা তাঁদের দলীয় স্বার্থের কথা বিবেচনা করে হুট করে সংবিধান সংশোধন করে ফেলেছেন। ক্ষমতা আর সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে কিছু করে ফেলাই সমাধান নয়। জনগণ তা মানবে কি না তা দেখার প্রয়োজন আছে। জনগণ চায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক। আর আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনের পথেই এগিয়ে চলেছি। জনগণের এই দাবি তাঁরা যদি না মানেন তাহলে আমাদের সামনে এক দফার আন্দোলন প্রস্তুত।
কালের কণ্ঠ : তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হলে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হবে না?
সেলিমা রহমান : সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হলে করতে হবে। তারা যেভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করেছে, সেভাবেই তাদের এটা আবার বহাল করতে হবে। তাদের কথার তো কোনো ঠিক নেই। একবার বলছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। আবার বলছে, নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া হবে। কখনো বলছে, কোনো অনির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। প্রশ্ন হচ্ছে, সংসদ যদি ভেঙে দেওয়া হয় তাহলে নির্বাচিত সরকার থাকবে কিভাবে? আসলে কখন কে কী বলে, তার ঠিক নেই। আর যে কথাগুলো তারা বলছে, খেয়াল করে দেখুন তার মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। একেকজন একেক রকম কথা বলে চলেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিভাবে হবে, সে ব্যাপারে তারা যেকোনো সময় আলোচনা করতে পারে। আলোচনায় এলে যেকোনো বড় সমস্যারও সহজেই সমাধান হয়ে যেতে পারে।
কালের কণ্ঠ : অনেকেই বলছেন, দুই নেত্রীর সংলাপের মাধ্যমে সমাধান হতে পারে। আপনি কী মনে করছেন?
সেলিমা রহমান : এটা কেউ বলতেই পারেন। তবে আমি একমত নই। আমরা তো দুই নেত্রীর কথাবার্তাই শুনছি। তাঁরা তো দলের কথা বলেন। দলই মূল ভূমিকা পালন করে থাকে। সুতরাং সংলাপ হলে দলীয় পর্যায়ে হওয়া দরকার। আমাদের নেত্রী সহজ পথ পছন্দ করেন। তার পরও তিনি সংলাপে আপত্তি করবেন না বলে আমি বিশ্বাস করি। তিনি দেশের স্বার্থে, জাতীয় প্রয়োজনে যেকোনো পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। আমাদের মূল সমস্যার দিকে নজর দিতে হবে। দুই নেত্রীর সংলাপ না হওয়াটাই কি মূল সমস্যা? তাই মনে করি না, এটা খুব জরুরি কোনো বিষয়। পঞ্চদশ সংশোধনীর পূর্বাবস্থায় ফিরে গেলেই হলো। সেখানে সব নির্দেশনা দেওয়া আছে। বিকল্প ব্যবস্থাও আছে। তার পরও যদি মনে করা হয় যে কোনো পরিবর্তন করতে হবে, তা-ও তো অসম্ভব কিছু নয়। আসল কথা হচ্ছে আন্তরিকতা। সরকার আন্তরিক হলে এটা কোনো বড় সমস্যা নয়।
কালের কণ্ঠ : আপনি বলছেন, নেতাদের কথাবার্তা শুনছেন। তাঁদের কথাবার্তা কি গণতান্ত্রিক নয়?
সেলিমা রহমান : প্রধানমন্ত্রী কী বলছেন, তা সারা দেশের মানুষ শুনছে। আমি একা শুনব কেন? একটি দলের প্রধান তিনি। দেশের প্রধানমন্ত্রীও। কিন্তু তিনি যেভাবে মানুষকে অবজ্ঞা করেন, তা কোনোভাবেই আশা করা যায় না। ব্যারিস্টার রফিক-উল-হককে কিভাবে তিনি অপমান করলেন? বয়োজ্যেষ্ঠ একজন আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক। তিনি যদি অস্বাভাবিক কিছু বলে থাকেন, তাঁর কথায় যদি কিছু ভুল থাকে; তাহলে প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ডেকে নিয়ে বলতে পারতেন। অথচ তিনি কোনো অন্যায় আচরণ না করার পরও প্রধানমন্ত্রী যেভাবে অপমান করলেন, তা কি একজন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শোভন হয়েছে? তিনি আসলে মানুষকে সম্মান দিতে জানেন না। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ও বাংলাদেশের গর্বের মানুষ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী তিনি। এত বড় মাপের মানুষটাকে তিনি কিভাবে অপদস্ত করলেন! আমার তো মনে হয়, তিনি মানুষকে সম্মানই দিতে জানেন না। এখন ছাত্রলীগের ছেলেরা যে আচরণ করছে, সেটা যদি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে শেখা বলে মনে করি, তাইলে কি ভুল হবে?
কালের কণ্ঠ : দুর্নীতি নিয়ে সব সময়ই কথা হয়। কিন্তু ছায়ার মতো দুর্নীতিও সঙ্গে চলে। এখন আপনারাও বলছেন, দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে দেশ। এমন কেন বলছেন?
সেলিমা রহমান : আমরা নিজে থেকে দুর্নীতির কথা বলছি না। যা মানুষ দেখছে, যা প্রচারমাধ্যমে প্রামাণ্য দলিল হিসেবে প্রকাশিত হচ্ছে; তা-ই তো আমরা বলছি। আর আমাদের কথা না হয় বাদই দেন, সরকারের লোকজনই তো দুর্নীতির কথা স্বীকার করে চলেছেন। মানুষ তো অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। একটার পর একটা দুর্নীতি করেই চলেছে তারা। ব্যবসা-বাণিজ্য, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, কর্মক্ষেত্র- কোনটা বাকি আছে, যেখানে দুর্নীতি বাসা বানায়নি? সাম্প্রতিক কিছু ঘটনাই দেখুন না। মানুষ কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট নিয়ে বলতে শুরু করেছে। প্রশ্নের পর প্রশ্ন জন্ম হয়েছে এই কুইক রেন্টাল নিয়ে। এটা কাটতে না কাটতেই এসে গেল হলমার্কের ঘটনা। তারও আগে ক্ষমতায় এসেই শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি তো হাজার হাজার মানুষকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। কোনটা বলবেন? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে দুর্নীতির থাবা না পড়েছে। সুরঞ্জিত সেন? কী বলবেন? পদ্মা সেতু নিয়ে কী খেলাই না চলছে। এটা তো আমরা বলিনি। বিশ্বব্যাংক আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। সরকার সেই দাবি তো মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। সুতরাং দুর্নীতি নিয়ে কথা যদি বলা হয়, তাহলে সারা দিন বলা যাবে। এটুকু বলা যায়, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে, তখনই দুর্নীতিতে বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়নের খেতাব পেতে হয়। পদ্মা সেতু নিয়ে যে দুর্নীতির তকমা পেয়েছে বাংলাদেশ, তা কি এত সহজে মিটিয়ে ফেলা যাবে?
কালের কণ্ঠ : তারাও তো আপনাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করেছে।
সেলিমা রহমান : তারা অভিযোগ করেছে। নির্বাচনের আগেও করেছে। এখন তারা ক্ষমতায়। তাদের মেয়াদও তো প্রায় শেষ। এত বছরে কি একটা দুর্নীতির প্রমাণ তারা দিতে পেরেছে? একটা প্রমাণও দিতে পারেনি। আসলে নিজেদের দুর্নীতির দুর্নাম ঢাকার জন্যই তারা অন্যের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে। এতে করে সাধারণ মানুষকে তারা বোকা বানানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে। মানুষ তো এখন অনেক সচেতন। চোখ-কান খোলা তাদের। সুতরাং জনগণের সামনে এটা পরিষ্কার যে তারা একদিকে অভিযোগ করছে, আর অন্যদিকে সরাসরি দুর্নীতি করছে। মানুষ তো সামনে যা দেখছে, তা-ই বিশ্বাস করবে। ভিত্তিহীন বিষয় মেনে নেবে মানুষ, এটা তারা ভাবে কিভাবে?
কালের কণ্ঠ : আপনারা এক দফা আন্দোলনেও যেতে প্রস্তুত; অথচ রাজপথে আন্দোলন তেমন জোরালো নয়। বলা হচ্ছে, আপনারা আন্দোলন করার মতো সংগঠিত নন। এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?
সেলিমা রহমান : আমরা আন্দোলনে আছি। আন্দোলন করছি। রাজপথেও আছি। কিন্তু মহাজোট সরকার যেভাবে স্বৈরাচারী আচরণ করছে, তাতে কতটা সম্ভব? আমাদের কর্মীদের এমনকি সমর্থকদেরও নির্বিচারে মহাজোট সরকার নির্যাতন করে চলেছে। দেখুন শান্তিপূর্ণ মিছিল করা যায় না। আমাদের এক নেতা আলাল সাহেব, তাঁকে ধরে নিয়ে গেল বিনা কারণে। কোথাও ১৮ দলের সমাবেশ হবে- সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করে বসে। আমি গেলাম পিরোজপুরে সভা করব বলে। সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করে বসল। এমনটা সারা দেশে হচ্ছে। আমাদের নেতা-কর্মীদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। ঘরেও হামলা হচ্ছে। বিরোধী রাজনৈতিক কোনো নেতা-কর্মীকে দাঁড়াতেই দিচ্ছে না সরকার।
কালের কণ্ঠ : তারা বলছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য তৎপর। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কী পর্যায়ে আছে?
সেলিমা রহমান : এর জবাবও দেব তাদের মুখের কথা দিয়েই। সুরঞ্জিত বাবু বর্ষীয়ান রাজনৈতিক নেতা। তিনি বলেছিলেন, বাঘে ধরলে ছাড়ে, শেখ হাসিনা ধরলে ছাড়ে না। এখন সরকারের সেই ধরাধরি চলছে পুরোপুরি। তারা বাঘের চেয়েও বেশি শক্তি নিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের ধরপাকড়ে ব্যস্ত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার সময় কোথায়? কোন দিকের কথা বলব? বেডরুমেও নিরাপত্তা নেই। সাগর-রুনি নিজ গৃহে খুন হলেন। চৌধুরী আলমকে ধরে নিয়ে গেল। ইলিয়াস আলী গুম হয়ে গেলেন। কোনটার সুরাহা করতে পেরেছে সরকার? জননিরাপত্তা কি আছে এই দেশে? গণতান্ত্রিক রাজনীতি করার মতো পরিবেশ কি আছে? ইলিয়াস আলী রাজনীতি করেন। রাজনৈতিক নেতা বলেই তিনি সরকারের ব্যর্থতা কিংবা দুর্নীতির কথা জনসমক্ষে তুলে ধরবেন। এটাই তো গণতান্ত্রিক রাজনীতির ধারা। এটা কি তাঁর অপরাধ? অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন বলে আপনি তাঁকে গুম করে দেবেন! এটা কিভাবে হয়? রাজবাড়ীতে একটা মেয়েকে নির্যাতন করা হলো। এখানে-ওখানে নারী নির্যাতন অসহনীয় হয়ে পড়েছে। ছাত্রলীগ এখন আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে। তারা কী করছে মনে হয় না খুলে বলার দরকার আছে। দলীয়করণের মাত্রা সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। শুনুন, যখন আইন নিজের পথে না চলে তখন জনগণ কিন্তু রাস্তায় নামে। জনতার ঢল নেমে যাচ্ছে। তখন বাঁচার কোনো পথ থাকবে না।
কালের কণ্ঠ : ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক কিছু কর্মকাণ্ডকে কিভাবে বিশ্লেষণ করবেন?
সেলিমা রহমান : কী বলব তাদের কথা! এবারও তাদের কথা দিয়েই উত্তর দেব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের অভিভাবকত্ব ছেড়ে দিলেন। বুঝতে পারছেন কিছু? ওদের অত্যাচার দেখে তিনি এতই বিরক্ত হলেন যে তাঁর সামনে এ ছাড়া আর কোনো পথ খোলা ছিল না। কিন্তু অভিভাবকহীন ছাত্রলীগ আরো বেপরোয়া হয়ে গেছে। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, রাহাজানি, প্রতিপক্ষকে মারধর, হত্যা- কোন কাজে তারা নেই? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের নেতাদের যেভাবে পিটিয়েছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা যা করেছে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা যা করেছে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্বরোচিত কাজ করেছে- এমন কয়টা বলব? তাদের কীর্তি বলে শেষ করা যাবে না।
কালের কণ্ঠ : দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অসহিষ্ণু পরিবেশ বিরাজ করছে। এর পেছনে কারণ কী বলে মনে করেন?
সেলিমা রহমান : শিক্ষক যদি শিক্ষার পরিবেশ না পান, তাহলে তিনি শিক্ষা দেবেন কিভাবে? পরিবেশ তো শুধু শিক্ষার সহায়কই নয়, সামগ্রিক কল্যাণও নিশ্চিত করে। কিন্তু আজ সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কী ঘটছে? আওয়ামী লীগ শাসনামলে ১৯৭৫ সালে যেমন হয়েছিল, এখন আবার তা-ই হচ্ছে। মেধাবীদের স্থান নেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। সেখানে চরম দলীয়করণ হচ্ছে। দলীয়করণের ফলে সাধারণ মানুষের কাছে শিক্ষকদের সম্মান জানানোর রেওয়াজটাও বদলে যেতে শুরু করেছে। হাজার হাজার শিক্ষক আজ রাস্তায় নেমেছেন বাঁচার তাগিদে। তাঁদের ন্যায্য দাবিগুলো মেনে নেওয়ার ব্যাপারে সরকার চুপ। বুঝলাম, হুট করে তাদের এমপিওভুক্ত করা যাবে না। একটা পদ্ধতি মেনে নিতে হবে। কিন্তু শিক্ষকরা যে আজ রাস্তায় নামলেন, এর পেছনে কারণ কী? চাল-ডাল, তেল-নুন কেনার সংগতি হারিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের সামনে কোনো পথ খোলা নেই।
কালের কণ্ঠ : পররাষ্ট্র বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাফল্য-ব্যর্থতা মূল্যায়ন করবেন কিভাবে?
সেলিমা রহমান : পররাষ্ট্র বিষয়ে তাদের সাফল্য এতই বিশাল যে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বই এখন হুমকির মুখে। টিপাইমুখ, তিস্তাচুক্তির খবর আপনারা জানেন। বাংলাদেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে তারা ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দিয়েছে। দেশটা যেন ভারতের কথায় ওঠে-বসে, এমন পরিস্থিতিই তারা তৈরি করে দিয়েছে। ভারত আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র। তাদের সঙ্গে বৈরীভাব তৈরি হোক, এমন কথা বলছি না। কিন্তু বন্ধুদেশ হিসেবে তাদের কাছে মাথা বিক্রি করে দিতে হবে কেন? আপনি ট্রানজিট সুবিধা-করিডর সুবিধা দিয়ে দিলেন। অথচ একবারও ভাবলেন না, আমার দেশের রাস্তাঘাট তাদের সেই ভারী যানবাহন চলার উপযোগী কি না। কতটা অবজ্ঞা করে বাংলাদেশকে এটা বুঝতে পারেন, সেখানকার কিছু বুদ্ধিজীবীর মুখ থেকে বাংলাদেশ সম্পর্কে তুচ্ছতাচ্ছিল্যপূর্ণ বক্তব্য থেকে। এই সুযোগটা তো করে দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
প্রধানমন্ত্রী বিদেশ গিয়ে বাংলাদেশের জঙ্গিদের কথা বলেন। তিনি নিজেই তো দেশের ইজ্জত-সম্মান ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
কালের কণ্ঠ : জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থাকে কিভাবে দেখছেন?
সেলিমা রহমান : সৌদি আরব আমাদের এখান থেকে সর্বনিম্ন পর্যায়ে লোক নিয়োগ করছে। আরব আমিরাত বন্ধ করে দিয়েছে। মালয়েশিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে জনশক্তি রপ্তানি হচ্ছে না। বিদেশে যারা গেছে, তারা সেখানে গিয়ে অসহায় অবস্থায় পড়েছে। তাদের কোনো সহযোগিতা করা হচ্ছে না। সরকারের কোনো ভূমিকা নেই নতুন জনশক্তির বাজার খোঁজার কিংবা বিদেশে অবস্থানকারীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে। আপনি আশা করবেন, কোটি কোটি ডলারের রেমিট্যান্স আসবে আর সেই শ্রমিকদের কল্যাণের ব্যাপারে কোনো ভূমিকা রাখবেন না, তা কী করে হয়! আর সেই কারণেই বিদেশে আমাদের শ্রমবাজার সংকুচিত হতে হতে এখন আশঙ্কাজনক পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বড় একটি খাত তো শেষ হতে চলেছে। সুতরাং সরকারের সাফল্যটা কোথায়, খুঁজে দেখুন।
কালের কণ্ঠ : সম্প্রতি বৌদ্ধবিহারে হামলা হয়েছে, আগুনে পুড়ে গেছে শত শত বছরের পুরনো মন্দির। এ পরিস্থিতিকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
সেলিমা রহমান : দেশের অবস্থা খুবই খারাপ। জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সরকার। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে সাম্প্রদায়িকতা নেই। ভারতে বাবরি মসজিদের ঘটনা সারা দুনিয়ার মানুষকে হতবাক করে দিয়েছিল। আমাদের এখানে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। এটা কেন হলো? এর দায় সরকারকে নিতে হবে। সরকার মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।
কালের কণ্ঠ : আপনাদের দল থেকে তদন্ত কমিটি করার পেছনে যুক্তি কী?
সেলিমা রহমান : এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল; অথচ সরকার কার্যকর কোনো পদক্ষেপই নিতে পারেনি। প্রশাসনের কার্যকলাপ দেখে মনে হচ্ছে, এর পেছনে নিশ্চয়ই অন্য কোনো কিছুও থাকতে পারে। আর প্রধানমন্ত্রী যেভাবে তদন্তের আগেই রাজনৈতিকভাবে রং দেওয়ার চেষ্টা করেছেন; স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানে গিয়ে তদন্ত ছাড়াই বলে দিলেন, বিরোধী দল এটা করিয়েছে; এমন পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। আমাদের দলের চেয়ারপারসন পরিষ্কার বলেছেন, অপরাধী যেই হোক না কেন, এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হতে হবে। যাতে আর কখনো এমন ঘটনা না ঘটে।
কালের কণ্ঠ : আপনাকে ধন্যবাদ।
সেলিমা রহমান : আপনাকেও ধন্যবাদ।

No comments

Powered by Blogger.