কিউবা ক্ষেপণাস্ত্র সংকট- যে কথা কেউ জানতেন না

এত দিন সবাই যেটা জানতেন সেটা পুরোপুরি ঠিক নয়। ১৯৬২ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের মতৈক্যের মাধ্যমে কিউবা ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের সমাধান হয়নি। বরং কিউবার হাতে আরও ১০০ পারমাণবিক অস্ত্র ছিল, যা যুক্তরাষ্ট্র জানত না।


পরে অবশ্য অস্ত্রগুলো রাশিয়া কৌশলে নিয়ন্ত্রণে নেয়।
বিবিসি অনলাইন ম্যাগাজিনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন ওয়াইল্ড আইরিস টিভির প্রযোজক সাংবাদিক জো ম্যাথিউস ও তাঁর রুশ সহকর্মী পাশা শিলভ।
স্নায়ুযুদ্ধের সময় ১৯৫৮ থেকে ১৯৬১ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্য, ইতালি ও তুরস্কে শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করে যুক্তরাষ্ট্র। পাল্টা জবাব হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়নও কিউবায় ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু অস্ত্র মোতায়েন করে। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল থেকে কিউবার দূরত্ব সামান্যই। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র-সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। কিন্তু একজন শীর্ষ সোভিয়েত নেতার সফল কূটনীতির কারণে বিশ্ববাসী সম্ভাব্য ভয়াবহ পারমাণবিক যুদ্ধ থেকে রক্ষা পায়। সম্ভাব্য তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ এড়াতে সক্ষম হয় বিশ্ব।
কিউবায় হামলা চালানো হবে না—যুক্তরাষ্ট্রের এ অঙ্গীকারের বিনিময়ে দেশটিতে মোতায়েন করা সব ক্ষেপণাস্ত্র ফিরিয়ে নিতে রাজি হয় সোভিয়েত ইউনিয়ন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ও সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভের মধ্যে সমঝোতা হয়। কিন্তু কিউবার হাতে এর পরও ১০০ পারমাণবিক অস্ত্র রয়ে যায় যা যুক্তরাষ্ট্র জানত না। জো ম্যাথিউস ও পাশা শিলভের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সোভিয়েত ইউনিয়নের চাতুর্য, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা ব্যর্থতা আর কিউবার নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর অস্থির মেজাজ’—এই তিনটির সম্মিলনের কারণেই এটা সম্ভব হয়েছিল।
কেনেডিকে দেওয়া ছাড়ের কারণে কাস্ত্রো তথা কিউবার জনমনে সৃষ্ট ক্ষোভ দুই পরাশক্তির সমঝোতা বানচাল করে দিতে পারে এই আশঙ্কায় ভুগছিলেন ক্রুশ্চেভ। এ কারণে সোভিয়েত নেতারা কিউবার জন্য একটি ‘সান্ত্বনা পুরস্কার’ দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। পুরস্কারটি ছিল কিউবাকে শতাধিক কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র দেওয়া। সেগুলো দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের সঙ্গেই কিউবায় পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তা যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের নজরে পড়েনি। হাভানায় এই অস্ত্র পাচার এবং কাস্ত্রোকে শান্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয় ক্রেমলিনের দ্বিতীয় নেতা আনাস্তাস মিকোওয়ানকে।
১৯৬২ সালের ২২ নভেম্বর হাভানায় কাস্ত্রোর সঙ্গে চার ঘণ্টাব্যাপী এক বৈঠকে মিকোওয়ান তাঁর কূটনৈতিক জীবনের সেরা অস্ত্রটি ব্যবহার করেন। তিনি কাস্ত্রোকে বোঝাতে সক্ষম হন যে মস্কোর উদ্দেশ্য ভালো থাকলেও কিউবার হাতে স্থায়ীভাবে ক্ষেপণাস্ত্র হস্তান্তর করা হলে তা সোভিয়েত আইন লঙ্ঘন করবে। আসলে এ রকম কোনো আইনই ছিল না। মিকোওয়ানের কৌশল কাজে লাগল। কাস্ত্রো অস্ত্রগুলো ফিরিয়ে দিতে রাজি হলেন। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সোভিয়েত সরকার। বিবিসি অনলাইন।

No comments

Powered by Blogger.