বেশির ভাগ কারখানায় ইটিপি নেই by মোহাম্মদ আলম

গাজীপুরের টঙ্গীতে অবস্থিত বিসিক শিল্প এলাকার বেশির ভাগ ডায়িং ও ওয়াশিং কারখানায় বর্জ্য শোধনাগার বা ইটিপি নেই। প্রতিদিন এসব কারখানার প্রায় এক কোটি লিটার অশোধিত বর্জ্য গিয়ে পড়ছে তুরাগ নদে। ফলে নদী থেকে জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে।


শুষ্ক মৌসুমে নদীটি পরিণত হয় নর্দমায়।
বিসিক শিল্প এলাকার টঙ্গী ভূসম্পত্তি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, বিসিক এলাকায় ৩২টি ডায়িং ও ওয়াশিং কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ১৯টি কারখানায় ইটিপি নেই। আবার অনেক কারখানায় ইটিপি থাকলেও নিয়মিত তা চালু রাখা হয় না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে ও কারখানা সূত্রে জানা গেছে, সিনটেক্স ফিনিশিং মিলস লিমিটেড প্রতিদিন গড়ে ৩০ হাজার মিটার কাপড় ওয়াশিং ও ডায়িংয়ের কাজ করে। ইটিপি না থাকায় প্রতিদিন এই কারখানা থেকে প্রায় চার লাখ লিটার অশোধিত বর্জ্য নালার মাধ্যমে তুরাগ নদে গিয়ে পড়ে। বছরে শুধু এই কারখানা থেকেই ৪৮ লাখ লিটার অশোধিত তরল বর্জ্য তুরাগে পড়ছে। ইটিপি না থাকার ব্যাপারে কারখানায় কর্মরত একজন শ্রমিকের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘বুঝেন না? অফিসার আইলে সারেরা মাইনেজ কইরা দেয়।’ কারখানার পরিচালক আবদুর রব বলেন, কারখানাটি অনেক দিনের পুরোনো হওয়ায় ইটিপি বসানোর মতো স্থানসংকুলান ছিল না। বর্তমানে কারখানার মসজিদ ঘর ভেঙে সেখানে ইটিপি বসানোর প্রক্রিয়া চলছে।
একইভাবে ভূসম্পত্তি কার্যালয়ের অপর পাশে অবস্থিত মদিনা ওয়াশিং অ্যান্ড ডায়িং কারখানাসহ হলমার্ক ফার্মা, স্যাপ ফ্যাশনস, কোয়ার্টেক্স ফিনিশিং মিলস, পিপলস ফার্মা, সফি প্রসেসিং, আর্ক ওয়াশিং, কালার মার্ক ওয়াশিং, পারমিতা ডায়িং অ্যান্ড ফ্যাশনস, ঢাকা ওয়াশিং প্ল্যান্ট, আটলান্টিক ইন্টারন্যাশনাল, ইউনিক টেক্সটাইলস, হোম ওয়াশিং অ্যান্ড ডায়িং কারখানা ইটিপি ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে। ভূসম্পত্তি কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ইটিপি ছাড়াই এসব কারখানা পরিচালিত হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
যোগাযোগ করা হলে অভিযোগ অস্বীকার করেন বিসিক শিল্প এলাকার ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা মো. আবুল বাশার। তবে উল্লিখিত কারখানাগুলোতে ইটিপি না থাকার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, এসব কারখানার কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে ইটিপি স্থাপনের জন্য বলা হয়েছে।
গাজীপুর বিসিক শিল্প এলাকার উপব্যবস্থাপক আবুল হোসেন শেখ বেশির ভাগ কারখানায় ইটিপি না থাকা ও ইটিপি থাকা কারখানাগুলোতে নিয়মিত ইটিপি চালু না রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ম্যানেজ হওয়ার বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই। এ ব্যাপারে ভূসম্পত্তি কর্মকর্তারাই ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন।
এলাকাবাসী জানান, অশোধিত বর্জ্যের প্রভাবে নদীর পানি কালো হয়ে গেছে। একই সঙ্গে পানি থেকে বের হয় দুর্গন্ধ। গৃহস্থালিসহ কোনো ধরনের কাজেই এ পানি ব্যবহার করা যায় না। শুষ্ক মৌসুমে নদীটি পুরোপুরি নর্দমায় পরিণত হয়। নদীদূষণ রোধে টঙ্গী উন্নয়ন পরিষদের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নূর আলম বলেন, ডায়িং ও ওয়াশিং কারখানার রাসায়নিক বর্জ্যের কারণে তুরাগ নদের পানি অক্সিজেন শূন্য হয়ে গেছে। এর প্রভাবে এখানকার জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

No comments

Powered by Blogger.