সবাইকে বিধিবিধান মেনে চলতে বাধ্য করা জরুরি- জাহাজভাঙা শিল্পের প্রসার

পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর জাহাজভাঙা শিল্পের প্রসার চলছে প্রায় অবাধে। এ বছর নতুন ২৫টি জাহাজভাঙা ইয়ার্ড গড়ে উঠেছে। এই সংবাদ উদ্বেগজনক। এই শিল্পের বিকাশ বাংলাদেশকে ‘শিল্পোন্নত দেশের বর্জ্যের ভাগাড়ে’ পরিণত করতে পারে।


জাহাজভাঙা শিল্প পরিবেশের জন্য যেমন ক্ষতিকর তেমনি এই শিল্পের শ্রমিকদের জীবনও ঝুঁকিপূর্ণ। গত তিন মাসে ১০টি দুর্ঘটনা ও ১০টি মৃত্যুর পরিসংখ্যান তারই প্রমাণ। কিন্তু এই শিল্প প্রসারিত হয়ে এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এর বাস্তবতাকে নানা কারণেই অস্বীকার করা যাচ্ছে না। তাই পরিবেশের ক্ষতি ও দুর্ঘটনার আশঙ্কা কমাতে কিছু বিধিমালা যেমন প্রণয়ন করা হয়েছে, তেমনি আদালতও কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন।
পরিবেশ ছাড়পত্রের শর্ত অনুযায়ী, জাহাজভাঙা ডকইয়ার্ডগুলোর শ্রমিকদের কাজের সময় বিশেষ পোশাক ও মাথায় হেলমেট পরতে হবে। কিন্তু প্রথম আলোর প্রতিবেদক বিভিন্ন ডকইয়ার্ডে গিয়ে দেখেছেন যে এই শর্ত মেনে চলা হচ্ছে না। তা ছাড়া, আইন ভেঙে রাতেও কাজ হচ্ছে এবং দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে। জাহাজের বর্জ্য তেল সমুদ্রে না ফেলার বাধ্যবাধকতাও অনেক ডকইয়ার্ড মানছে না।
কোনো নিয়ম, আইন বা বিধিবিধানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তা মেনে চলা বা চলতে বাধ্য করা। বিষয়টির তদারকি ও নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য করার দায়িত্ব যাঁদের, তাঁরা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না। তাঁরা প্রভাবশালী এসব ডকইয়ার্ডের মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার চেয়ে তাঁদের স্বার্থ রক্ষাতেই বেশি উৎসাহী। কোনো প্রতিষ্ঠানকে যদি নির্দিষ্ট শর্তের ভিত্তিতে পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়, তবে সেই প্রতিষ্ঠান তা মেনে চলছে কি না, সেটা অবশ্যই তদারক করতে হবে। তদারকি অব্যাহত রাখলে এবং কেউ আইন না মানলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হলে নিয়ম ভঙ্গের প্রবণতা কমবে। এ ক্ষেত্রে শিল্পমন্ত্রীর সাফাইও সমর্থনযোগ্য নয়।
দুর্ঘটনা রোধ এবং পরিবেশ সুরক্ষার স্বার্থেই জাহাজভাঙা শিল্পের জন্য যেসব বিধিবিধান রয়েছে, সেসবের যথাযথ বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।

No comments

Powered by Blogger.