মালালার ওপর হামলার পরিকল্পনাকারী শনাক্ত

পাকিস্তানে মালালা ইউসুফজাইয়ের (১৪) ওপর হামলার মূল পরিকল্পনাকারীকে শনাক্ত করা হয়েছে বলে দাবি করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। এ ঘটনায় গতকাল শনিবার আরও পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে তিন ভাই ও একজন আফগান নাগরিক রয়েছেন। এ নিয়ে এ পর্যন্ত ৭০ জনকে আটক করা হলো।


আটক তিন ভাই হলেন—ইনাম, আবদুল হাদি ও ওবায়দুর রহমান। অন্যদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রেহমান মালিক জানান, হামলায় জড়িত দুই বন্দুকধারীকে শনাক্ত করা গেছে। তাঁদের এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি।
গত ৯ অক্টোবর সোয়াত উপত্যকার মিংগোরা শহরে স্কুলবাসে উঠে মালালাকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি চালায় তালেবান জঙ্গিরা। একটি গুলি তার মাথায় বিদ্ধ হয়। ওই দিন রাতেই পেশোয়ারের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচার চালিয়ে তার দেহ থেকে গুলি বের করেন। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাওয়ালপিন্ডি সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
মালালার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও এখনো তাকে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস যন্ত্র দিয়ে রাখা হয়েছে। সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিম সালিম বাজওয়া শুক্রবার জানান, পরবর্তী ৩৬ থেকে ৪৮ ঘণ্টা মালালার জন্য সংকটপূর্ণ। চিকিৎসকদের একটি বোর্ড তাকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছে।
সোয়াতের জেলা পুলিশ কর্মকর্তা (ডিপিও) গুল আফজাল খান আফ্রিদি দাবি করেন, মালালার ওপর হামলার মূল পরিকল্পনাকারীকে শনাক্ত করা গেছে। তাঁর নাম আতাউল্লাহ। সোয়াতের সাঙ্গোতা অঞ্চলে তাঁর বাড়ি। পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী সাঙ্গোতা ও এর আশপাশের এলাকাগুলোতে অভিযান চালিয়ে এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে। আটক ব্যক্তিদের অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। শিগগিরই তাঁদের জনসম্মুখে হাজির করা হবে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী রাজা পারভেজ আশরাফ মালালাকে দেখতে শুক্রবার হাসপাতালে যান। প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি মালালার বাবা জিয়াউদ্দিন ইউসুফজাইকে ফোন করে তাঁর মেয়ের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। তিনি বলেন, ‘মালালা আমার মেয়ের মতো। তার চিকিৎসার খরচ আমি বহন করব।’
মালালার দ্রুত সুস্থতা কামনা করে তার মা-বাবার কাছে চিঠি লিখেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন। জাতিসংঘে নিযুক্ত পাকিস্তানের নতুন দূত মাসুদ খানের কাছে শুক্রবার চিঠিটি হস্তান্তর করা হয়। কর্মকর্তারা এই তথ্য জানিয়েছেন।
পাকিস্তানের ন্যাশনাল ইয়ুথ এসেম্বলি (এনওয়াইএ) নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মালালার নাম প্রস্তাব করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। সংগঠনটির প্রধান হানান আলী আব্বাসি বলেন, এনওয়াইএ মনে করে, স্বাধীনতা ও শিক্ষার আন্তর্জাতিক প্রতীক হিসেবে মালালা অন্য যে কারও চেয়ে এই পুরস্কারের যোগ্য।
মালালার দ্রুত সুস্থতা কামনা করে গতকাল আফগানিস্তানের বিদ্যালয়গুলোতে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আমানউল্লাহ ইমান বলেন, ‘মালালার প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে দেশের সাড়ে ১৫ হাজার স্কুল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৯৫ লাখ শিক্ষার্থী প্রার্থনা করেছে।’
সোয়াত উপত্যকায় নিজের জীবন যাপন নিয়ে ২০০৯ সালে বিবিসি উর্দুতে লেখালেখির সুবাদে সবার নজরে আসে মালালা। জঙ্গিরা ২০০৭ সালে ওই উপত্যকা দখলের পর মেয়েদের বিদ্যালয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। মালালা এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়ায়। আর এটা করতে গিয়েই তালেবানের রোষানলে পড়ে সে। মালালা গত বছর পাকিস্তান সরকারের কাছ থেকে জাতীয় শান্তি পুরস্কার পায়। একই বছর শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করে কিডস রাইটস ফাউন্ডেশনের ‘ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেনস পিস প্রাইজ’-এর জন্যও মনোনীত হয় সে। এএফপি, ডন, এপিপি।

No comments

Powered by Blogger.