প্রবর্তক থেকে চট্টেশ্বরী মোড়- রাস্তার ওপর পার্কিং, বাড়ছে যানজট by আশরাফ উল্লাহ

বুধবার সন্ধ্যা ছয়টা। মেহেদীবাগ সড়ক। বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র ন্যাশনাল হাসপাতালের সামনে একটি প্রাইভেট কার রোগী নিয়ে এসেছে। ভেতরে পার্কিংয়ের জায়গা নেই। রাস্তার ওপর দাঁড় করিয়েই গাড়ি থেকে নামানো হয় রোগী। এর পেছনে সিএনজিচালিত আটোরিকশা থেকে নামছিলেন আরেকজন রোগী।


পেছনে তখন গাড়ির সারি। যা বিস্তৃত চট্টেশ্বরী মোড় পর্যন্ত। এ চিত্রটি প্রতিদিনের।
ন্যাশনাল হাসাপাতালের মতো একই চিত্র দেখা গেছে আরেক বেসরকারি হাসপাতাল সিএসসিআরের সামনেও। সেখানেও রোগী নামানো হচ্ছে সড়কের ওপর। এতে যানজট ছড়িয়েছে প্রবর্তক মোড় পর্যন্ত।
প্রবর্তক থেকে চট্টেশ্বরী মোড়ে যানজট দিন দিন বাড়ছে। দিনের অন্যান্য সময়ের চেয়ে যানজট বিকেলে তীব্র হয়। তখন ১০ মিনিটের পথ যেতে লাগে পৌনে এক ঘণ্টা। নিত্যদিন কষ্ট সয়ে চলাচল করছেন আশপাশের বাসিন্দা ও হাসপাতালে আসা লোকজন।
মেহেদীবাগের আমিরবাগ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা উকিল আহমদ তালুকদার বলেন, ‘ঢুকতে-বেরুতে প্রতিদিন সহ্য করি মহাযন্ত্রণা। দিনে যানজট কিছুটা কম, কিন্তু বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত প্রায়ই অবরুদ্ধ থাকি। আবাসিক এলাকা থেকে একটি গাড়ি বেরোতে কমপক্ষে ২০ মিনিট অপেক্ষায় থাকতে হয়।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, সন্ধ্যার সময় প্রবর্তক মোড় থেকে বাদশা মিয়া সড়কের মুখ পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে পার্কিং করে রাখা হয়েছে কার, সিএনজিচালিত আটোরিকশা। এগুলোর দখলে চলে গেছে সড়কের অর্ধেক অংশ। বাকি অংশে চলছে গাড়ি। তার ওপর সিএসসিআর ও প্রিমিয়ার হাসপাতালে আসা রোগী ও দর্শনার্থীদের চাপ তো আছেই। রাস্তার ওপরই গাড়ি থেকে নামছে রোগী। কেউ রাস্তায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা দাঁড় করিয়ে দরদাম করছে। কেউ রাস্তা পারাপারে ব্যস্ত।
মেহেদীবাগ সড়কে ন্যাশনাল হাসপাতালের দিকে যেতেই যানজট আরও তীব্র। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মসজিদের সামনে থেকেই গাড়ি আটকে আছে। সরু সড়কটিতেও পার্কিং করে রাখা হয়েছে সিএনজিচালিত আটোরিকশা, কার ও রিকশা। এ ছাড়া আরেক বিড়ম্বনা রাস্তার ওপর আড়াআড়ি করে রাখা ডাস্টবিন। ন্যাশনাল হাসপাতালের পাশে লুসি বিউটি পারলারের গ্রাহকেরাও গাড়িতে ওঠানামা করছে সড়কের ওপর।
সড়কের ওপর রোগী ওঠানামা প্রসঙ্গে সিএসসিআর হাসপাতাল লিমিটেডের উপমহাব্যবস্থাপক মাহবুবুল হক বলেন, চাপ বেশি হলে অনেক সময় বাইরে রোগী নামানো হয় তবে গাড়ি বেশিক্ষণ দাঁড়ায় না। মূলত মিমি সুপার মার্কেট, আফমি প্লাজা এবং মেহেদীবাগ সড়কের যানজট পুরো সড়কে ছড়িয়ে পড়ে।
যানজট বাড়ার কারণ সম্পর্কে নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী আলী আশরাফ বলেন, প্রবর্তক থেকে চট্টেশ্বরী পর্যন্ত যেসব হাসপাতাল ও বহুতল ভবন গড়ে উঠেছে সেগুলোতে পার্কিংয়ের পর্যাপ্ত স্থান নেই। প্রশাসনকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। তার ওপর রয়েছে মানুষের আইন না মানার প্রবণতা। সড়কের ওপর গাড়ি রাখাটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এ জন্য যানজট থেকে মুক্তি মিলছে না।
তিনি আরও বলেন, প্রবর্তক ও মেহেদীবাগ এলাকায় নতুন করে বেসরকারি হাসাপাতাল ও রোগনিরূপণকেন্দ্র স্থাপন করা বন্ধ করতে হবে। এ জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে প্রশাসনকেই। ট্রাফিক বিভাগ সূত্র জানায়, নগরের বেশির ভাগ হাসপাতাল ও রোগনিরূপণ কেন্দ্রের অবস্থান এই এলাকা ঘিরে। এ ছাড়া রয়েছে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, তৈরি পোশাক কারখানা, প্রিমিয়ার, ইস্ট ডেল্টা ও বিজিসি ট্রাস্টের ক্যাম্পাসও। তবে যানবাহনের চাপ বাড়ে বিকেলের দিকে। তখন হাসপাতাল ও রোগনিরূপণ কেন্দ্রে আসা মানুষের চাপ বেশি থাকে, তাই স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি যানবহন চলাচল করে এ সড়ক দিয়ে।
এ প্রসঙ্গে নগর পুলিশের উপকমিশনার (যানবাহন) কুসুম দেওয়ান বলেন, ‘সড়কের ওপর অবৈধ পার্কিং করলে নিয়মিত মামলা হচ্ছে। তবে প্রবর্তক মোড়ে যানজট আগের চেয়ে কমেছে। এখন যানজট বেশি মেহেদীবাগ সড়কে। সরু সড়কটির পাশে রয়েছে ন্যাশনাল হাসাপাতাল ও লুসি বিউটি পারলার। এ দুটি প্রতিষ্ঠানেই সেবা নিতে আসা মানুষের সংখ্যা প্রচুর। এ ছাড়া রয়েছে একটি তৈরি পোশাক কারখানাও। সব মিলিয়ে এ সড়কে চাপ বেশি। তার ওপর সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ ডাস্টবিনটা রাখা হয় সড়কের ওপর আড়াআড়িভাবে। অবশ্য এটি সঠিক স্থানে রাখার জন্য আমরা প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছি।’

No comments

Powered by Blogger.