প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি-অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন চাই

প্রধানমন্ত্রীর পদে থেকে যে প্রতিশ্রুতিই প্রদান করা হোক, প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি থেকে আমজনতা সবাই এর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে থাকে। আর এটাই স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে সবাই ধরে নেয় যে, খুব ভাবনা-চিন্তা করেই প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয়েছে।


এ জন্য সংশ্লিষ্ট প্রকল্প কিংবা অন্য কোনো ধরনের কাজের নানা দিক খতিয়ে দেখা হয় এবং সম্ভাব্যতা ভালোভাবে যাচাই করা হয়। এর কিছু থাকে স্বল্পমেয়াদি, আবার কোনো কোনোটি বাস্তবায়নের জন্য যথেষ্ট সময় দরকার হয়। শনিবার সমকালে প্রকাশিত 'প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির ৭০ ভাগ বাস্তবায়িত হয়নি' শীর্ষক প্রতিবেদনে দেখা যায়, এতে ঢাকায় মনোরেল বা পাতাল রেল, সার্কুলার রেলপথ চালু, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন এক্সপ্রেস সড়ক নির্মাণ, খুলনায় রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের মতো বিপুল অর্থসংশ্লিষ্ট প্রকল্প যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে বন্ধ থাকা সরকারি জুট মিল চালু এবং ঢাকা-রংপুর রুটের জন্য বিশেষ ট্রেন সার্ভিস। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের সঙ্গে বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় সরাসরি জড়িত। বর্তমান সরকারের মেয়াদের প্রায় চার বছর পূর্ণ হতে চলেছে। এখন সর্বাত্মক উদ্যোগ নিয়েও প্রধানমন্ত্রীর অনেক বড় প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। কিন্তু পূর্ণ বাস্তবায়ন না হোক, কাজ শুরু করা সম্ভব হলেও জনসাধারণ মনে করবে যে, সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে যা বলা হয় তা করা হয়। এ ক্ষেত্রে আর্থিক বরাদ্দ এবং অন্য যে জটিলতা ও সমস্যাই থাকুক না কেন তা দূর করতে সর্বাত্মক উদ্যোগ প্রত্যাশিত। সমকালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সমন্বয়হীনতার কারণে অধিকাংশ প্রতিশ্রুতি পূরণের কাজ থমকে রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, প্রতিশ্রুতি আদৌ পূরণ হবে কি-না, সে বিষয়েও সংশ্লিষ্টরা কিছু বলতে পারছেন না। অথচ নির্বাচনী ইশতেহার এবং ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নে দেশের বড় বড় সভা-সমাবেশে তিনি অন্তত ১৮৫টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যার বেশির ভাগই জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রাধিকারসম্পন্ন প্রকল্প। জনগণ এ প্রশ্নও করতে পারে যে, প্রধানমন্ত্রী জনসমাবেশে অঙ্গীকার করার পরও তা যদি কার্যকর না হয়, তাহলে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য বা সরকারি কর্তাব্যক্তিদের ওয়াদার ক্ষেত্রে কী ঘটবে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব জানিয়েছেন, সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের বিষয়টি তদারকির জন্য একটি বিশেষ সেল কাজ করছে এবং সেখানে মনিটরিং চলছে। এটাও যেন কথার কথা না হয়, তা নিশ্চিত করা চাই। সরকার এখন চাইলেও সব অঙ্গীকার বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এ কারণে ১৮৫টি প্রতিশ্রুতির মধ্যে অগ্রাধিকার চিহ্নিত করা যেতে পারে। যেসব প্রকল্পের জন্য অঙ্গীকার করা হয়েছে, কেন তার বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি, সে বিষয়েও ব্যাখ্যা থাকা চাই। পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কেও থাকতে হবে নির্দেশনা। এটা কেবল জনসাধারণকে প্রবোধ দেওয়ার জন্য নয়, প্রধানমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে যে অঙ্গীকার করা হয় তার প্রতি আস্থা রাখার জন্যও অপরিহার্য। যে কোনো বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের অনেক দিক থাকে। এর মধ্যে অর্থসংস্থান বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। স্থান নির্বাচনসহ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায়ও সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন দেখা গেছে, সুন্দরবনের কাছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনে পরিবেশবাদীদের প্রবল আপত্তি। কিন্তু জনসাধারণের কাছে কোনো কিছুই গোপন করা উচিত নয়। তাদের কাছে সবকিছুতেই স্বচ্ছতা থাকবে এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
 

No comments

Powered by Blogger.