আতাউস সামাদ ও ফাজলে রশীদ স্মরণে নাগরিক শোকসভায় বক্তারাঃ বর্তমান অনিশ্চিত সময়ে তাদের মতো সাংবাদিক খুবই দরকার

সাংবাদিকতার দিকপাল আতাউস সামাদ এবং যশস্বী সাংবাদিক ফাজলে রশীদ স্মরণে আয়োজিত নাগরিক শোকসভায় বক্তারা বলেন, গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে অক্লান্ত যোদ্ধা ছিলেন আতাউস সামাদ। তিনি ছিলেন নির্ভীক, নীতিবান সাংবাদিকতার রোল মডেল। ফাজলে রশীদ ছিলেন একজন আদর্শ সাংবাদিক।
জুলুম, দুঃশাসন, ফ্যাসিবাদ, আধিপত্যবাদ, মানবাধিকারের যথেচ্ছ লঙ্ঘন, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, দুর্নীতির মচ্ছব, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডসহ সাংবাদিক পীড়ন ও সংবাদপত্র দলনের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর বিশ্লেষণে আতাউস সামাদের কলামগুলো ছিল সরব বর্ণমালার জ্বলন্ত প্রতিবাদ। স্বৈরশাসক এরশাদের নির্যাতনের মুখেও জনগণ ও গণতন্ত্রের জন্য তিনি সত্য বলা থেকে পিছপা হননি। বাংলাদেশের বর্তমান অনিশ্চিত গন্তব্যের এই সময় তাদের মতো সাংবাদিকের খুব দরকার ছিল। তাদের মতো নিবেদিতপ্রাণ সাংবাদিকের স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে তাদের প্রজ্ঞা এবং সাহসিকতা আমাদের প্রয়োজনেই স্মরণ করা প্রয়োজন।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের আজীবন সদস্য সর্বজনশ্রদ্ধেয় সাংবাদিক আতাউস সামাদ ও ক্লাবের সাবেক সভাপতি ফাজলে রশীদ স্মরণে গতকাল এ নাগরিক শোকসভার আয়োজন হয়। প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে গতকাল বিকালে ক্লাব চত্বরে আয়োজিত এ শোকসভায় অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন, গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিঞা ও অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, সাবেক মন্ত্রী এম কে আনোয়ার, সাবেক মন্ত্রী ব্যরিস্টার মওদুদ আহমদ এমপি, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি হাসানুজ্জামান খান, আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, যায়যায়দিন পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক শফিক রেহমান, অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আমানুল্লাহ কবীর, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুস শহীদ, নিউ নেশন সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মে. জে. (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, ড্যাব মহাসচিব ডা. এ জেড এম জাহিদ হেসেন ও আতাউস সামাদের সহোদর আতিকুস সামাদসহ বিভিন্ন অঙ্গনের বিশিষ্ট নাগরিক। এছাড়া মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু।
সভায় শ্রদ্ধাবনত হয়ে আবেগঘন কণ্ঠে আতাউস সামাদের ওপর শোকপত্র পাঠ করেন প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ এবং ফাজলে রশীদের ওপর শোকপত্র পাঠ করেন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ। শোকপত্রে তারা দুই সাংবাদিকের বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের বিভিন্ন দিক ও অবদানসহ তাদের সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন ক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ।
আবদুল মতিন বলেন, ‘আতাউস সামাদ মৃত্যুর আগে বলে গেছেন, তিনি খুব সুখী ছিলেন। মৃত্যুর সময় এটা জানিয়ে যাওয়া বিরাট ব্যাপার। তিনি ছিলেন শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মানুষ।
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আতাউস সামাদ আমার বহুদিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তিনি ছিলেন নীতিবান মানুষের রোল মডেল, ছিলেন নির্ভীক, নীতিবান সাংবাদিক। তিনি ঝুঁকি নিয়েও সবসময় সত্য কথা বলতেন। উচিত কথা বলতেন বিনাদ্বিধায়। জনগণের ঐক্যের সঙ্গেও তার সমর্থন ছিল। যুক্তি দিয়ে তিনি জনগণের মন জয় করেছিলেন। আজকে তার অভাবের কথা স্বীকার করে বলতে হবে, আমাদের ঐক্যের যে ঐতিহ্য আছে, সে ঐতিহ্য নিয়েই দেশ, জনগণ, স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার রক্ষার স্বার্থে আবারও ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। কেননা একাত্তরের বিজয়ের ওপর আজ আক্রমণ হচ্ছে।’
মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আতাউস সামাদ ছিলেন প্রথিতযশা সাংবাদিক। তবে তিনি আমার কাছে ছিলেন স্বজন। তার মৃত্যুতে আমি স্বজন হারানোর ব্যথা অনুভব করছি। ২০১০ সালের ২ জুন রাতে আমার দেশ-এর প্রকাশনা বাতিল করে আমাকে গ্রেফতার করে নেয়ার সময় তাকে বলেছিলাম, সামাদ ভাই, কখন ফিরতে পারব জানি না; আপনি আমার দেশ পত্রিকার হাল ধরে রাখবেন। তিনি হাল ধরেও রেখেছিলেন।’
বক্তব্যে মাহমুদুর রহমান আতাউস সামাদ ও ফাজলে রশীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।
শফিক রেহমান বলেন, ‘আতাউস সামাদ ছিলেন পারফেকশনিস্ট সাংবাদিক। তিনি ছিলেন পরিচ্ছন্ন, সুখী ও সত্ সাংবাদিক। একটি সংবাদ লেখার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি চেষ্টা করতেন সংবাদের তথ্য, মতামত যেন সঠিক থাকে। সত্য বলে তিনি যা বিবেচনা করতেন, তা-ই লিখতেন ও বলতেন। স্বৈরাচার এরশাদের শাসনামলে তিনি প্রতিবেদন পাঠালে সেটি প্রচার করা নিয়ে বিবিসি শঙ্কিত থাকত। তবে আতাউস সামাদের পাঠানো নিখুঁত, নির্ভীক, সাহসী প্রতিবেদন বলেই বিবিসি শেষ পর্যন্ত সেটি প্রচার করত। তার হঠাত্ কেন এভাবে মৃত্যু হলো, তা আমাদের কাছে এখনও পরিষ্কার হয়নি। পাঠকরা তার মৃত্যুর বিষয়টি জানতে চান উল্লেখ করে শফিক রেহমান বিষয়টি নিয়ে আমার দেশ পত্রিকায় অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের প্রতি অনুরোধ জানান।
ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করার সময় আতাউস সামাদ শিক্ষার্থীদের সত্যনিষ্ঠ, সাবলীল তথ্যের প্রতিবেদন করার শিক্ষা দিতেন। তিনি ছিলেন আদর্শ সাংবাদিক ও নাগরিক। স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের আমলে বিবিসিতে তার কণ্ঠ শোনার জন্য তখনকার প্রায় বারো কোটি মানুষ অপেক্ষায় থাকতেন। তিনি এমন সময় চলে গেলেন, যখন তার প্রয়োজন ছিল খুব বেশি। কেননা সাংবাদিকরা গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ, সর্মথক ও চর্চাকারী। বাংলাদেশ এখন অনিশ্চিত পথে চলেছে; সামনের দিনগুলোও কঠিন মনে হচ্ছে। দেশ কোন পথে যাবে, এসব প্রশ্নের উত্তর সাংবাদিকদের কাছেই পাব। এ দু’জন সাংবাদিককে হারিয়ে আমরা অনেকটা দরিদ্র হয়ে পড়েছি।’
এম কে আনোয়ার বলেন, ‘আতাউস সামাদ তার দীর্ঘ সাংবাদিক জীবনে রিপোর্টার থেকে সম্পাদক হিসেবে যে অবদান রেখে গেছেন, তাতে সাংবাদিকতা সমৃদ্ধ হয়েছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, একে রক্ষা, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ গণমুখী সব আন্দোলনে তার ভূমিকা অগ্রগণ্য।’
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আতাউস সামাদ ছিলেন আমার বাল্যবন্ধু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা একসঙ্গে পড়াশোনা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে একসঙ্গে নাটক দেখেছি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেছি। তিনি সত্যিকার অর্থে খাটি ও আপাদমস্তক সাংবাদিক ছিলেন। ফাজলে রশীদ আমার অতি প্রিয় মানুষ ছিলেন। তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল গভীর।’
ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, ‘সাংবাদিকতায় একটা হচ্ছে সংবাদ, আরেকটা প্রপাগান্ডা। আতাউস সামাদ ও ফাজলে রশীদ ছিলেন বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিক এবং সত্য সংবাদের পক্ষে।’
আমানুল্লাহ কবীর বলেন, ‘আতাউস সামাদ ছিলেন সময়ের সাহসী সাংবাদিক। তিনি ছিলেন আমার দেশ-এর উপদেষ্টা সম্পাদক, আমি ছিলাম সম্পাদক। ১/১১ পর পত্রিকাটি বিভিন্ন কারণে দুর্যোগসহ অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়ে। ওই সময়েও তিনি আমাদের সাহস ও প্রেরণার উত্স ছিলেন। আমি তার নির্দেশ পালনের চেষ্টা করেছি। ফাজলে রশীদও ছিলেন জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ সাংবাদিক।’
মোস্তফা কামাল মজুমদার বলেন, ‘আতাউস সামাদ ছিলেন সংবেদনশীল সাংবাদিক। কোনো সংবাদ সঠিকভাবে পাঠকের কাছে উপস্থাপন করতে না পারা পর্যন্ত তিনি উদ্বিগ্ন থাকতেন।’
কামাল উদ্দিন সবুজ বলেন, ‘আতাউস সামাদ ও ফাজলে রশীদ ছিলেন সাংবাদিকতার দুটি স্তম্ভ, দুটি বাতিঘর। তাদের হারিয়ে আমরা বেদনাবিধুর। তারা গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য লিখে গেছেন। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন একে একে দুর্বল হয়ে পড়ছে। স্বাধীনতার চেতনাও দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। আমরা এখন লেখার মাধ্যমে এগুলোকে সবল করতে পারলে এবং তাদের ভূমিকার চর্চা করে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারলে তাদের স্মৃতির প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো হবে।’
শোকপত্রে শওকত মাহমুদ বলেন, ‘সফল রিপোর্টার, সম্পাদক, কলামিস্ট এবং গণমাধ্যম ব্যবস্থাপক হিসেবে শুধু নয়, গণতন্ত্র, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে অক্লান্ত যোদ্ধা আতাউস সামাদের উন্নত শির তাকে বাংলাদেশের অগ্রগণ্য নাগরিকে পরিণত করে। আজকের এই নাগরিক শোক দেশের কোল শূন্য হওয়ারই বেদনা। শুভচিন্তা, জনকল্যাণ বোধ বহমান ছিল আতাউস সামাদের শিরায় শিরায়। তিনি মনীষার শানিত ব্যাপ্তিতে দেশ ও দশ সম্পর্কে নখাগ্র পর্যন্ত সচেতন ছিলেন। কবি জীবনানন্দের ওই পঙিত—নিখিল আমার ভাই/কীটের বুকেতে যেই ব্যথা জাগে/আমি সে বেদনা পাই—আতাউস সামাদ সম্পর্কে নির্দিব্দধায় প্রযোজ্য। তার সাংবাদিকতার শুরু ১৯৫৭ সাল থেকে। সর্বশেষ দায়িত্ব আমার দেশ পত্রিকার উপদেষ্টা সম্পাদকের। আমার দেশ-এর আবির্ভাব তার অভিভাবকত্বে। দুশাসন, মানবাধিকারের যথেচ্ছ লঙ্ঘন, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, দুর্নীতির মচ্ছব, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডসহ সাংবাদিক পীড়ন ও সংবাদপত্র দলনের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর বিশ্লেষণে আতাউস সামাদের কলামগুলো ছিল সরব বর্ণমালার জ্বলন্ত প্রতিবাদ।’
সৈয়দ আবদাল আহমদ শোকপত্রে বলেন, ‘ফাজলে রশীদ—এই নামটি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একাধিক কারণে। বাংলাদেশের ইংরেজি সাংবাদিকতার অগ্রগণ্যদের অন্যতম তিনি, পেশাগত জীবনে ইংরেজি সাংবাদিকতায় তিনি নিয়োজিত ছিলেন। তার ইংরেজি লেখা ছিল সাবলীল ও সুখপাঠ্য। তিনি ছিলেন ম্যান অব ইনটিগ্রিটি। ইংরেজি সাংবাদিকতায় তিনি ছিলেন তার জুনিয়র সহকর্মীদের আদর্শ। কারণ তিনি তরুণদের শিখিয়ে গেছেন কী করে সহজ, সুন্দর এবং ছোট ছোট বাক্যের মধ্যে বক্তব্য প্রকাশ ও ঘটনার বিবরণ দেয়া যায়। বাংলাদেশের সাংবাদিকতা তথা জাতীয় প্রেস ক্লাবের জন্য একটি বড় গৌরবের বিষয় হচ্ছে, তিনি একাধিক মেয়াদে ক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক (তিনবার) ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি নিউইয়র্কে বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন। ফাজলে রশীদের মতো এমন নিবেদিত প্রাণের সাংবাদিকদের জন্য তারসহ বরেণ্য সাংবাদিকদের স্মৃতি আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সাংবাদিক হিসেবে তাদের প্রজ্ঞা এবং সাহসিকতা আমাদের প্রয়োজনেই স্মরণ করা প্রয়োজন।’
আতাউস সামাদের ছোট ভাই সাংবাদিক আতিকুস সামাদ বলেন, ‘আতাউস সামাদ সাংবাদিকতা ও সাংবাদিকদের নিয়ে খুব ভাবতেন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তিন দিন আগে তার সঙ্গে আমার টেলিফোনে প্রায় ২৫ মিনিট কথা হয়। এর মধ্যে ১৫ মিনিট ছিল সাংবাদিকতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের মধ্যকার বর্তমান বিভাজন নিয়ে। তিনি মনে করতেন, সাংবাদিকদের স্বার্থেই বিভাজন দূর করে এক হয়ে লড়াই করা দরকার।’ বক্তব্যে তিনি ভাইয়ের বিভিন্ন স্মৃতিচারণ করেন।
রুহুল আমিন গাজী বলেন, ‘আতাউস সামাদের তুলনা তিনি নিজেই। গণতন্ত্রের ভিতকে শক্তিশালী করতে আর ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে তিনি অবিরাম সংগ্রাম করেছেন। ফাজলে রশীদও ছিলেন বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিক।’
আবদুস শহীদ বলেন, ‘যে ক’জন প্রথিতযশা সাংবাদিকের জন্য সাংবাদিকরা মাথা উচুঁ করে দাঁড়াতে পারেন, সাংবাদিকরা অহংকার করতে পারেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আতাউস সামাদ। তিনি সাংবাদিকতা করার পাশাপাশি সাংবাদিকতাকে সমৃদ্ধ করে গেছেন।’
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, আতাউস সামাদ ও ফাজলে রশীদ তারা দু’জনই দেশের প্রথিতযশা সাংবাদিক ছিলেন। দু’জনের কলমেই দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা উঠে এসেছে। আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় বিবিসিতে সংবাদ পাঠিয়ে আতাউস সামাদ এ দেশের সাধারণ মানুষের দ্বোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিলেন। একজন সাংবাদিক হিসেবে আতাউস সামাদের এখানেই সাফল্য।
অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, সাংবাদিক আতাউস সামাদ ছিলেন আমার পরম শ্রদ্ধেয়। তিনি আমার ঘনিষ্ঠজনও ছিলেন। তার মৃত্যু জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জাসদ সভাপতি আ স ম আবদুর রব, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বাকের হোসাইন, কলামিস্ট আবদুল আউয়াল ঠাকুর, ডিআরইউ সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা প্রমুখ। অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য কবি হাসান হাফিজ। সভার দর্শক সারিতেও দেশের বিভিন্ন অঙ্গনের খ্যাতিমান ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। প্রায় তিন ঘণ্টা পর্যন্ত টানা চলে এ সভা। উল্লেখ্য, দৈনিক আমার দেশ-এর উপদেষ্টা সম্পাদক আতাউস সামাদ গত ২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার এ্যাপোলো হাসপাতালে এবং ফাজলে রশীদ গত ২৮ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে ইন্তেকাল করেন।

No comments

Powered by Blogger.