বলিউড- আবারও শ্রীদেবী-জাদু

এ সপ্তাহেই মুক্তি পেয়েছে গৌরী শিন্দে পরিচালিত আলোচিত চলচ্চিত্র ইংলিশ ভিংলিশ। আর এ চলচ্চিত্রেই শশী চরিত্রে অভিনয় করে শ্রীদেবী প্রমাণ করেছেন, তিনি ফুরিয়ে যাননি। এ নিয়েই এবারের আয়োজন বয়স তাঁর ৪৯।


অথচ এ বছর তাঁর অভিনয়জীবনের বয়স ৪৫ পূর্ণ হয়েছে! মাত্র চার বছর বয়স থেকে অভিনয় করছেন তিনি। ১৪ বছর বয়সে পরিপূর্ণ নায়িকা। ২৬৫টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করা সেই নায়িকা শ্রীদেবী বলিউডের পর্দায় ফিরেছেন; তাও ১৫ বছর বিরতির পর! উত্তেজনার পারদ তো উত্তপ্ত হবেই। এ সপ্তাহেই মুক্তি পেয়েছে গৌরী শিন্দে পরিচালিত আলোচিত চলচ্চিত্র ইংলিশ ভিংলিশ। আর এ চলচ্চিত্রেই শশী চরিত্রে অভিনয় করে শ্রীদেবী প্রমাণ করেছেন, তিনি ফুরিয়ে যাননি। ইংলিশ ভিংলিশ মন ছুঁয়ে গেছে চলচ্চিত্রপ্রেমীদের; যদিও ‘মার মার কাট কাট’ ব্যবসা বলতে যা বোঝায়, তা হচ্ছে না। একে তো চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্র নন-গ্ল্যামারাস, তার ওপর এতে নেই কোনো জমজমাট গান, আইটেম নৃত্য কিংবা ঢিসুম ঢিসুম অ্যাকশন-ধামাকা! সাধারণ ফর্মুলায় আমজনতার এ চলচ্চিত্র দেখতে আসার কথাও নয়।
তবে মাল্টিপ্লেক্সে শ্রীদেবীর ভক্তরা ছুটে এসেছেন প্রিয় অভিনেত্রীর অভিনয় আরেকবার দেখতে। অভিনেত্রী টাবু বলেন, ‘ইংলিশ ভিংলিশ দেখতে দেখতে ভুলেই গিয়েছিলাম শ্রীদেবীকে দেখছি। সাদমা, হিম্মতওয়ালা, তোফা, নাগিনা, আখরি রাস্তা, কর্ম, আউলাদ, মিস্টার ইন্ডিয়া, চাঁদনি, চালবাজ, লামহে, খুদা গাওয়া, লাডলা, আর্মি, জুদাই-এর সেই পর্দা-কাঁপানো শ্রীদেবীকে ভুলে গিয়ে শশী চরিত্রে ডুবে গিয়েছিলাম। আর এটাই কিন্তু শ্রীদেবীর সার্থকতা।’ অভিনেত্রী বিদ্যা বালানও টাবুর কণ্ঠে সুর মিলিয়ে বলেন, ইংলিশ ভিংলিশ-এর হিরো শ্রীদেবী। ৪৯ বছর বয়সেও তিনি সৌন্দর্য ধরে রেখেছেন আগের মতো। অথচ প্রত্যাবর্তন চলচ্চিত্র হিসেবে বেছে নিয়েছেন ভারতীয় একজন আটপৌরে নারীর চরিত্র। নিজের ইমেজকে ভুলিয়ে চরিত্র হতে পারার ক্ষমতা সবার থাকে না। শ্রীদেবী এককথায় অসাধারণ!
শ্রীদেবীকে দেখতে এ চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ার শোতে আরও এসেছিলেন অমিতাভ বচ্চন, জয়া বচ্চন, মাধুরী দীক্ষিত, রাভিনা ট্যান্ডন, শিল্পা শেঠি, বিপাশা বসু, কঙ্কণা সেন শর্মা, কঙ্গনা রনৌত, সোনাক্ষী সিনহাসহ আরও অনেকে। এসেছিল শ্রীদেবীর মেয়ে জাহ্নবী (১৫) ও খুশি (১২)। মাকে এবারই প্রথম বড় পর্দায় দেখার সৌভাগ্য হলো দু্ই মেয়ের। তাদের ভাষ্য, শ্রীদেবী শুধু বিশ্বের সেরা অভিনেত্রীই নন, বিশ্বের সেরা মা।
টরন্টো চলচ্চিত্র উৎসবে গত মাসেই প্রদর্শিত হয়েছিল ইংলিশ ভিংলিশ। আর এ চলচ্চিত্র শেষ হওয়ার পর মিলনায়তনের সব দর্শক দাঁড়িয়ে শ্রীদেবীকে সম্মান জানান। ভ্যারাইটি ডট কম-এর বিখ্যাত সমালোচক জন লেডন শ্রীদেবীকে তুলনা করেন অড্রে হেপবার্ন ও মেরিল স্ট্রিপের মতো কিংবদন্তি অভিনেত্রীদের সঙ্গে। চলচ্চিত্রে অতিথি চরিত্রে অভিনয় করা অমিতাভ বচ্চন নিজের ব্লগে লেখেন, ‘শ্রীদেবীর অভিনয় দেখে চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি। অবিশ্বাস্য! অদ্ভুত! এখনো জাদুকরি শ্রীদেবী!’ পরিচালক রামগোপাল ভার্মা বরাবরই বলেন, তিনি শ্রীদেবীর অভিনয়ের অন্ধ ভক্ত ছিলেন বলেই ভিডিও ক্যাসেট পার্লারের দোকানদারের কাজ করতেন। পরবর্তী সময় তখনকার বোম্বে এসেছিলেন শ্রীদেবীকে একনজর দেখতে। বছরের পর বছর তাঁকে দেখার অপেক্ষা করে সফল না হওয়ায় রামু নিজেই চলচ্চিত্রের বাসিন্দা হয়ে যান। সম্প্রতি রামগোপাল টুইটারে লিখেছেন, ‘বলিউডে অনেক ইংলিশ ভিংলিশ, ইন্ডিয়া ভিন্ডিয়া, আমেরিকা ভ্যামেরিকা নির্মিত হবে। তবে কেউই শ্রীদেবী-ভ্রিদেবী হতে পারবে না। শ্রীদেবী স্রেফ একজন!’
এই শ্রীদেবীই একটা সময় ভারতীয় চলচ্চিত্র ইতিহাসের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিলেন; প্রথমবারের মতো কোনো নায়কের চেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নিয়ে। তাঁর নামে চলচ্চিত্র চলত বলে খুদা গাওয়া-য় অমিতাভ বচ্চন হাসিমুখে শ্রীদেবীর চেয়ে কম পারিশ্রমিকে কাজ করতে রাজি হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে নব্বইয়ের দশকে অনিল কাপুর, সঞ্জয় দত্ত, সানি দেউল, শাহরুখ খান, সালমান খান, অক্ষয় কুমার সবাই শ্রীদেবীর পারিশ্রমিকের চেয়ে ৫০ শতাংশ কমে কাজ করেছিলেন। হলিউডের তারকা-পরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গ জুরাসিক পার্ক চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন শ্রীদেবীকে। তবে অপ্রধান চরিত্র এবং টানা দুই বছরের জন্য হলিউডে বন্দী হয়ে পড়া—সব মিলিয়ে শ্রীদেবী কখনো হলিউডমুখী হননি। আজ এত বছর পর অভিনয়ে ফিরে এসে শ্রীদেবী বলেন, ‘মনে হচ্ছে, প্রথমবারের মতো ক্যামেরার মুখোমুখি হচ্ছি। সবকিছুই কেমন যেন নতুনের মতো লাগছে। সচেতনভাবে প্রত্যাবর্তন করার কোনো ইচ্ছা ছিল না। আমার স্বামী বনি কাপুরই আমাকে অভিনয়ে ফিরে আসার জন্য বছরের পর বছর ধরে অনুরোধ করেছিলেন। তাঁর উৎসাহ এবং ইংলিশ ভিংলিশ চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট আমাকে দর্শকের মধ্যে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করেছে।’
বর্ণাঢ্য অভিনয়জীবনে এবারই প্রথম কোনো নারী নির্মাতার পরিচালনায় কাজ করলেন শ্রীদেবী। পরিচালক গৌরী শিন্দের সঙ্গে মজার অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করতে গিয়ে শ্রীদেবী বলেন, ‘এ চলচ্চিত্রে আমি লাড্ডু বানাই। শুধু পরিবারের জন্যই নয়, বিয়েবাড়ি ও অন্যান্য উৎসবে লাড্ডু বানানোর জন্য আমার ডাক পড়ে। সুতরাং, বুঝতেই পারছেন, লাড্ডুও এ চলচ্চিত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। এমন কোনো দিন নেই, আমরা লাড্ডু খাইনি। শুটিং শেষ হওয়ার পর গৌরীকে বলেছিলাম, চলো! এবার আমাদের লাড্ডু রিহ্যাব সেন্টারে যাওয়ার সময় হয়েছে! হা হা হা!’ লাড্ডুপ্রীতির কারণেই ইংলিশ ভিংলিশ চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ার শোতে যাঁরা এসেছিলেন, টিনের টিফিনবক্সে করে তাঁদের লাড্ডু উপহার দিয়েছেন শ্রীদেবী।
 রুম্মান রশীদ খান
ডিএনএ, আইএমডিবি, রেডিফ, সিনেব্লিৎস, মিড ডে, রিয়েল বলিউড, বিজনেস অব সিনেমা, বলিস্পাইস ও বলিউড হাঙ্গামা ডট কম অবলম্বনে

No comments

Powered by Blogger.