তদন্ত কমিটিতে গোয়েন্দা চান পিএসসি চেয়ারম্যান

বিসিএসসহ বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে সরকারের সহায়তা চেয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। গতকাল বুধবার পিএসসি থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে এক চিঠি পাঠিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সহায়তা চাওয়া হয়।


পিএসসির চেয়ারম্যান এ টি আহমেদুল হক চৌধুরী গতকাল নিজ দপ্তরে কালের কণ্ঠকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।
পিএসসি চেয়ারম্যান বলেন, 'আমরা এসব ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। এ কারণেই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করতে বলেছি। তদন্ত কমিটিতে পাঁচটি গোয়েন্দা সংস্থা ও বিজি প্রেসের প্রতিনিধিদের রাখার জন্য বলেছি।'
চেয়ারম্যান বলেন, 'গত রবিবার থেকে ৩৩তম বিসিএসের আবশ্যিক বিষয়ের লিখিত পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরীক্ষা শুরুর দুই-তিন দিন আগে থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এর ভিত্তিতে সত্যিই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে কি না তা সরকারের সব সংস্থার অধীনে তদন্ত করতে বলি। কিন্তু তারা আমাকে এমন রিপোর্ট দিয়েছে যে, এ বিষয়ে আমি সন্দেহের ঊধর্ে্ব উঠতে পারিনি। এ কারণে জাতির যাতে ক্ষতি না হয়, সেজন্য কোনো ঝুঁকি না নিয়ে পরীক্ষা স্থগিত করি।'
চেয়ারম্যান বলেন, 'এখন প্রশ্ন হচ্ছে- কারা এমনটি করল। এ প্রশ্নের উত্তর তো পিএসসি একা দিতে পারবে না। এজন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে সরকারের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।'
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠির বক্তব্য সম্পর্কে এ টি আহমেদুল হক চৌধুরী বলেন, 'ভবিষ্যতে যাতে প্রশ্ন ফাঁসের মতো ঘটনা না ঘটে, এজন্যই তদন্ত করতে বলা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে এনএসআই, ডিজিএফআই, এসবি, ডিবি, র‌্যাব ও বিজি প্রেসের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। এই কমিটি ঠিকঠিকভাবে তদন্ত করলে আসল খলনায়কদের চেহারা বেরিয়ে আসবে।'
বারবার প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেন, 'এখানে বেশ কয়েকটি বিষয় কাজ করে। একশ্রেণীর লোক রয়েছে, যারা পরীক্ষার আগে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে দেয়। এতে শিক্ষার্থীরা ওই প্রশ্ন সংগ্রহে আগ্রহী হয়ে ওঠে। এভাবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। আরেক শ্রেণী হচ্ছে, যারা রাজনৈতিকভাবে প্রশ্ন ফাঁসের ফায়দা নেয়। রাজনৈতিক দলের মধ্যে কেউ কেউ চায় না সরকার একটি নিয়োগ দিক। কারণ সরকার নিয়োগ দিতে পারলে জনগণের কাছে ভালো হয়ে যাবে। এজন্য একশ্রেণীর রাজনৈতিক দল এবং নেতা প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে।'
রাজনৈতিক দল এবং নেতাদের মধ্যে কারা জড়িত থাকতে পারে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমি যা বলার বললাম, এবার আপনি বুঝে নিন।'
পিএসসি এবং বিজি প্রেসের একটি চক্রেরও প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি তোলা হলে পিএসসি চেয়ারম্যান বলেন, 'থাকতে পারে। প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে পিএসসি কাউকে দোষ দিচ্ছে না। তবে বিজি প্রেস ও পিএসসিতে প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্র থাকতে পারে বলে সন্দেহ রয়েছে। এর আগে ২০১০ সালে প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে বিজি প্রেস এবং পিএসসি থেকে বেশ কয়েকজন ধরা খেয়েছিল। এজন্য পিএসসি ও বিজি প্রেসের রেকর্ড ভালো না। তদন্ত কমিটি হলে এখনো বিজি প্রেস এবং পিএসসির চক্রটি ধরা খাইতে পারে। যারাই এ ঘটনা করেছে তারা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।'
বারবার প্রশ্নপত্র ফাঁসের যে গুজব উঠছে তা নিরসনে পিএসসির কর্মপরিকল্পনা কী জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, 'এমনটি যাতে আর না হয়, সেজন্যই সরকারের কাছে সহায়তা চেয়েছি। আর এসব ঘটনায় পিএসসি কলঙ্কিতও নয়। বরং পরীক্ষা স্থগিত করে পিএসসি সঠিক কাজ করেছে এবং এতে সম্মানও বেড়েছে।'
৩৩তম বিসিএসের স্থগিত হওয়া লিখিত পরীক্ষা আগামী জানুয়ারির মধ্যেই নেওয়া হবে জানিয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান বলেন, পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। গত কয়েক বছরে পরীক্ষা গ্রহণে একটা ধারাবাহিকতা চলে এসেছিল। কিন্তু স্থগিত হওয়ায় তা থাকল না।

No comments

Powered by Blogger.