গ্রেপ্তার নাকি আত্মসমর্পণ

হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলা দায়েরের পর থেকে এজাহারভুক্ত সোনালী ব্যাংকের সাবেক ও চাকরিরত ২০ কর্মকর্তার অনেকে গা ঢাকা দিয়েছেন। ঘনিষ্ঠজনদের মোবাইল ফোনও তাঁরা ধরছেন না।


গত বৃহস্পতিবার রমনা থানায় দায়ের করা ১১ মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে পাঁচজন রয়েছেন, যাঁরা চাকরি থেকে বরখাস্ত হননি। ফলে তাঁরা নিয়মিত অফিসে যাচ্ছেন। সাময়িকভাবে বরখাস্ত থাকা কর্মকর্তাদের কয়েকজনকে গতকাল বুধবারও সোনালী ব্যাংকের মতিঝিলস্থ প্রধান কার্যালয়ে দেখা গেছে। সহকর্মীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে করণীয় ঠিক করার জন্যই তাঁরা এসেছেন বলে কর্মকর্তারা জানান।
যেকোনো সময় গ্রেপ্তারের আতঙ্ক তাড়া করছে তাঁদের। এর আগেই আত্মসমর্পণ করার কথাও ভাবছেন কেউ কেউ। এ বিষয়ে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের দিকনির্দেশনা আশা করছেন তাঁরা।
গতকাল মতিঝিলে সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়। তবে যেসব কর্মকর্তা নিজেদের নির্দোষ মনে করেন, সহকর্মীরাও যাঁদের একবাক্যে সৎ হিসেবে স্বীকৃতি দেন, তাঁরা দৃঢ়তা নিয়েই আছেন। পরিণতি যা-ই হোক, তা মেনে নেওয়ার মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন তাঁরা। তবে কর্মজীবনে সুনামের সঙ্গে কাজ করেও এখন কোমরে দড়ি পড়বে- এমন ঘটনা তাঁদের জন্য অত্যন্ত অমানবিক হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ অবস্থায় মামলার অগ্রগতির জন্য গ্রেপ্তার এড়িয়ে আত্মসমর্পণকেই শ্রেয় মনে করছেন অনেকেই। এ বিষয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার অপেক্ষা থাকলেও গতকাল পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানতে পারেননি এজাহারভুক্ত কর্মকর্তারা।
গত মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দুদকের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান মামলার অগ্রগতির স্বার্থে সোনালী ব্যাংকের বিবাদী কর্মকর্তাদের আত্মসমর্পণ করার পরামর্শ দিয়েছেন। এর পরপরই গতকাল সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্তর সঙ্গে দেখা করতে আসেন। কিন্তু ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে রাজি হননি। পরে ব্যাংকটিতে কিছু সময় কাটিয়ে তাঁরা আবার যাঁর যাঁর মতো চলে যান। ব্যাংকটির কর্মকর্তাদের একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গতকাল দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে ঘুরে এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিবাদী চার-পাঁচজন কর্মকর্তা গতকালও অফিসে এসেছেন। কেউই তাঁদের দপ্তরে বেশিক্ষণ ছিলেন না। সহকর্মীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন। এদিক-সেদিক ঘোরাফেরা করে চলে গেছেন।
মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে বিবাদী ওই কর্মকর্তাদের সবারই মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। একজন বিবাদী কর্মকর্তার পারিবারিক একটি সূত্র জানিয়েছে, আত্মসমর্পণের বিষয়ে তাঁরা কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত দেবে, তাঁরা সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবেন। দীর্ঘ কর্মজীবনে সৎভাবে দায়িত্ব পালন করে শেষ বয়সে গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টিকে অত্যন্ত মানবিক হবে উল্লেখ করে ওই সূত্রটি বলেছে, দোষী বা নির্দোষ প্রমাণিত হবে আদালতে। তবে এর আগে যে ঘটনাগুলো ঘটবে, তা তাঁদের জন্য অত্যন্ত অপমানজনক হবে।
আত্মসমর্পণের বিষয়ে সোনালী ব্যাংক কোনো সিদ্ধান্ত দেবে না বলে জানিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বরাত দিয়ে জনসংযোগ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক হাফিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেছেন, 'মামলার বিষয়টি আমরা দুদকের ওপর ছেড়ে দিয়েছি। তারা যেভাবে মামলা পরিচালনা করবে, সেভাবেই চলবে। বিবাদী কর্মকর্তারা চাইলে আত্মসমর্পণ করতে পারেন। এটা সম্পূর্ণই তাঁদের ব্যাপার। এ ছাড়া অধিকাংশ বিবাদী কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের এখন আর কোনো যোগাযোগ নেই।'
এদিকে ব্যাংকটির একটি দায়িত্বশীল সূত্র গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ব্যাংকের ২০ জন বিবাদী কর্মকর্তার মধ্যে অন্তত পাঁচজন কর্মকর্তা রূপসী বাংলা হোটেল শাখায় সংঘটিত জালিয়াতির ঘটনায় কোনোভাবেই জড়িত ছিলেন না। এ ছাড়া সহকর্মীদের মধ্যেও তাঁরা সৎ হিসেবে পরিচিত। তাঁদের গ্রেপ্তার করাটা সোনালী ব্যাংকই নয়, সব ব্যাংক কর্মকর্তার জন্যও নিরুৎসাহের কারণ হবে।

No comments

Powered by Blogger.