কেনিয়ায় এমপিদের 'বিদায় বোনাসের' প্রস্তাবে প্রেসিডেন্টের না

কেনিয়ার পার্লামেন্ট সদস্যদের (এমপি) 'বিদায় বোনাস' দেওয়ার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মোয়াই কিবাকি। গত মঙ্গলবার প্রস্তাবটি পার্লামেন্টে তোলা হয়। প্রস্তাব অনুযায়ী স্পিকারসহ যেসব পার্লামেন্ট সদস্য পরবর্তী মেয়াদে পুনর্নির্বাচিত হবেন না, তাঁরা প্রত্যেকে এক লাখ ১০ হাজার ৮০০ ডলার করে পাবেন।


এ পরিমাণ অর্থ আয় করতে কেনিয়ায় একজন সাধারণ নাগরিকের ৬৬ বছর লাগবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রস্তাবটি পাস হলে অনেক এমপিই নির্বাচনে হেরে এই বিপুল অর্থ পকেটে পোরার সুযোগ নেবেন এবং পরে নতুন দলে ভিড়ে আবারও রাজনীতিতে নামার চেষ্টা করবেন।
বিদায় বোনাস-সংক্রান্ত প্রস্তাবটি পাসের জন্য গত মঙ্গলবার গোপনে পার্লামেন্টে উত্থাপন করেন এমপিরা। এমপিরা পক্ষে থাকলেও প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাবের বিপক্ষে ছিলেন। প্রস্তাবটি পাস হলে পার্লামেন্ট সদস্যদের বিদায় বোনাস পরিশোধ করতে কর বাড়ানোর প্রয়োজন হতো কেনিয়া সরকারের। উল্লেখ্য, কেনিয়ার এমপিরা আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেতন-ভাতা পান। ২২২ সদস্যবিশিষ্ট পার্লামেন্ট সদস্যপ্রতি মাসে ১৩ হাজার ডলার করে বেতন পান এবং এ অর্থ করমুক্ত।
কেনিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে মঙ্গলবার দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এমপিদের প্রস্তাবিত 'বিদায় বোনাস' বিলে সই করবেন না প্রেসিডেন্ট কিবাকি। তিনি এ বিলকে 'অসাংবিধানিক' বলে অভিহিত করেছেন। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে এ পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। প্রেসিডেন্ট ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী রাইলা ওদিঙ্গাও পার্লামেন্ট সদস্যদের এ পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছেন। সামাজিক নেটওয়ার্কিং সাইট টুইটারে লেখা এক বার্তায় তিনি বলেন, 'এমপিদের বোনাস বাড়ানোর বিপক্ষে আমার অবস্থান_এটা আমি স্পষ্ট করতে চাই।'
পার্লামেন্টের ভেতরে যখন প্রস্তাবটির ওপর ভোটাভুটি চলছিল, তখন বাইরে বিক্ষোভ চলছিল। কয়েক শ মানুষ বিদায় বোনাসের বিপক্ষে বিক্ষোভ করে। তাদের হাতে 'এমপিরা চোর' এবং 'লোভী হায়না' লেখা প্ল্যাকার্ড ছিল।
বিক্ষোভ আয়োজনে সহায়তাকারী মরিস ওদিয়াম্বো বলেন, 'এমপিদের এই বিপুল অর্থ বোনাস নেওয়ার ইচ্ছা খুবই হাস্যকর।' বিক্ষোভের অন্যতম আয়োজক রবার্ত আলাই টুইটারে লেখা বার্তায় বলেন, 'এমপিদের এ ধরনের পদক্ষেপের বিপক্ষে সাধারণ জনগণ_এটা আমরা তাদের জানাতে চাই। প্রেসিডেন্ট আমাদের কথা শুনেছেন এবং বোনাস বাড়নোর বিলে সই করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।'
এর আগে শিক্ষক ও চিকিৎসকরা তাঁদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার তাঁদের বেতন-ভাতা বাড়িয়ে দেয়।
মানবাধিকার গোষ্ঠী ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ও কেনিয়া হিউম্যান রাইটস কমিশন যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, এমপিদের এ ধরনের পদক্ষেপ চরম বিরক্তিকর এবং সংবিধান পরিপন্থী। সূত্র : বিবিসি, এএফপি ও টেলিগ্রাফ।

No comments

Powered by Blogger.