সাগর-রুনি হত্যা-পরিকল্পনাকারীদের ধরা হোক

তরুণ সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের ৮ মাস পর গত ৯ অক্টোবর 'খুনিরা শনাক্ত' এ তথ্য নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করলেন। 'চার পেশাদার খুনি'সহ শনাক্ত সাতজনকে গ্রেফতারের কথাও জানা গেল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের বক্তব্যে।


এই হত্যাকাণ্ডের অনেক জট খুলত যাকে ধরা গেলে, বাড়ির সিকিউরিটি গার্ড সেই এনামুল পুলিশের আওতায় থেকেও পালিয়ে গেল উদাসীনতার সুযোগে। তাকে গ্রেফতারের জন্য এখন ১০ লাখ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করতে হয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। তারপরও কি তাকে ধরা যাবে? হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৪ জনকে 'পেশাদার খুনি' হিসেবে চিহ্নিত করে যে ৭ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে, তাদের কারা নিয়োগ করেছিল এই সাংবাদিক দম্পতিকে হত্যার জন্য, সে প্রশ্নের উত্তর সংবাদ সম্মেলন থেকে পাওয়া যায়নি। এখানেই নানা প্রশ্ন গুঞ্জরিত। এই হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে উচ্চারিত অনেক প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা। সাংবাদিকদের অনেক প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তারপরও বলা যায়_ এই হত্যায় জড়িত সন্দেহভাজনদের সম্পর্কে বিলম্বে হলেও একটা সরকারি ভাষ্য পাওয়া গেল, যা পাওয়া যায়নি দীর্ঘদিন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের পর সংবাদ মাধ্যমে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে আবার ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কেন অনেক প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন। তবে কি গ্রেফতারকৃতদের 'জজ মিয়া' বানানোর মতো কোনো নতুন নাটক রচনার চেষ্টা চলছে? আমরা মনে করি এভাবে সবকিছুতেই কথায় কথায় 'জজ মিয়া নাটকের' প্রসঙ্গ তোলা সমীচীন নয়। অন্তত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যে সে রকম কোনো সন্দেহ জাগেনি। আর এ সত্যও মনে রাখতে হবে, ৮ বছর আগে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলাকালের প্রেক্ষাপট আর আজকের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এখন সংবাদমাধ্যম অনেক সচেতন এবং সম্প্রসারিত। এখন আর কাউকে 'জজ মিয়া' সাজানো তত সহজ নয়। বরং বিষয়টিকে আমরা দেখি এভাবে, যে হত্যাকাণ্ড নিয়ে গণমাধ্যমসহ দেশব্যাপী এত তোলপাড়, যার কোনো ক্লু পাওয়া যাচ্ছিল না, সংবাদ মাধ্যমের কর্মী ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ যে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনের দাবিতে রাজপথে সোচ্চার, প্রায় সূত্রহীন সেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার অন্ধকারে সরকারি উদ্যোগে একটা আলো তো অন্তত পড়েছে। তবে আলোটা সঠিক জায়গায় পড়ল কি-না, সেটাই এখন দেখার বিষয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যেসব সংস্থা এই স্পর্শকাতর হত্যা মামলার তদন্তে নিয়োজিত, তাদের যোগ্যতা নিয়ে আমাদের সংশয় নেই, সংশয় তারা কাজটা ঠিকমতো করার সুযোগ পাবেন কি-না তা নিয়ে। আমরা জানি দেশে অনেক বড় বড় স্পর্শকাতর মামলা আছে, হাইভোল্টেজ মামলারও তদন্ত ঠিকমতো হয় না, যথাসময় হয় না। সাগর ও রুনি সাংবাদিক বলে সাংবাদিক সমাজ সোচ্চার। সংবাদমাধ্যম সোচ্চার। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সেই চাপে তাড়াহুড়ো করে যেন দায়সারা গোছের কোনো রিপোর্ট দেওয়া না হয়। আমরা চাই দ্রুততার সঙ্গে তদন্ত সম্পন্ন করার পাশাপাশি স্বচ্ছতাও নিশ্চিত করা হোক। তদন্ত রিপোর্টের বিশ্বাসযোগ্যতা চাই। খুনের মোটিভ কী? আসলে কারা খুন করিয়েছে সাগর ও রুনিকে? নিহতদের পরিবারের এই প্রশ্নের সঙ্গে আমরাও একমত। এসব প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই পাওয়া চাই। কোনো রকম প্রভাব যেন কোনো মহল থেকে না পড়ে এ মামলার তদন্তে। প্রকৃত ঘাতক এবং নেপথ্যের পরিকল্পনাকারীরা চিহ্নিত হোক। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক অপরাধীদের।
 

No comments

Powered by Blogger.