ফটিকছড়ির নতুন মেয়রের কাছে প্রত্যাশা- ধুরুং খালের ভাঙন রোধ ও সড়ক সংস্কার by মিঠুন চৌধুরী ও এস এম আক্কাছ উদ্দিন

‘ফটিকছড়ি পৌরসভার দুঃখ ধুরুং খাল। প্রতিবছরই এই খালের ভাঙনে উত্তর ও দক্ষিণ ধুরুং এলাকার কৃষিজমি, ঘরবাড়ি নষ্ট হয়। এখন পৌরসভা হয়েছে। আমাদের ভোটে নতুন মেয়রও নির্বাচিত হয়েছেন। এবার আশা করি খালের ভাঙন রোধে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’


এভাবেই নতুন পৌর মেয়রের কাছে প্রত্যাশার কথা জানালেন ফটিকছড়ি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ কে এম গোলাম কিবরিয়া। তিনি বলেন, ‘নতুন মেয়র পৌরবাসীর চাহিদা পূরণে কাজ করবেন এবং সেবা না দিয়ে কর বাড়াবেন না, এটাই চাওয়া।’
প্রায় এক বছর আগে পৌরসভা ঘোষণার পর ৬ অক্টোবর ফটিকছড়ি পৌরসভার প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সাত হাজার ৮৬৮ ভোট পেয়ে পৌরসভার প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. ইসমাইল হোসেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এম সিরাজুল ইসলাম পান পাঁচ হাজার ৭০১ ভোট।
গত শনিবার রাতে ভোটের ফল ঘোষণার পরপরই প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে পরাজিত প্রার্থী এম সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এলাকার উন্নয়নে প্রথম পৌর মেয়র আমার কাছ থেকে সব রকম সহযোগিতা পাবেন।’
পৌরবাসীরও চাওয়া নবনির্বাচিত মেয়র সবার সহযোগিতায় তাঁদের প্রত্যাশা পূরণ করবেন। গত শুক্র ও শনিবার ফটিকছড়ি পৌরসভার উত্তর ও দক্ষিণ ধুরুং, রাঙ্গামাটিয়া, লেলাং, আতরিয়া ও পালপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ সড়কের অবস্থা বেহাল। কিছু এলাকায় পাকা সড়ক থাকলেও ভাঙা। অন্যান্য এলাকায় ইট বিছানো ও কাঁচা রাস্তা। রাঙ্গামাটিয়া এলাকার বাসিন্দা মো. ফরিদ বলেন, ‘আমাদের এলাকায় রাস্তা আছে, তবে ভাঙাচোরা। আশা করি নতুন মেয়র রাস্তা মেরামতে নজর দেবেন।’
বিবিরহাট বাজারের ব্যবসায়ী ইফতেখার উদ্দিন বলেন, ‘ফটিকছড়িবাসীর অনেক অপেক্ষার পর পৌরসভা পেয়েছে। নতুন মেয়রের কাছে প্রত্যাশা তিনি দুর্নীতিমুক্তভাবে সড়ক সংস্কার, অবকাঠামো নির্মাণ, ধুরুং খালের ভাঙন রোধ, চিকিৎসাসেবা ও পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা গড়ে তুলবেন।’
শান্তিপূর্ণ নির্বাচন: ফটিকছড়ির সাধারণ মানুষ থেকে রাজনীতিবিদ সবাই বলছেন, এবারের পৌর নির্বাচন দৃষ্টান্তমূলক। নির্বাচনের আগে-পরে কোনো ধরনের সহিংসতাই হয়নি। অতীতে ‘সন্ত্রাসের জনপদ’ খ্যাত এই এলাকায় সহিংসতা ছাড়াই নির্বাচন অনুষ্ঠানকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন পৌরবাসী।
গত শনিবার ১২টি কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, ভোটকেন্দ্রগুলো ঘিরে ছিল উৎসবের আমেজ। মোট ভোট পড়েছে ৭০ দশমিক ০৫ শতাংশ। নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল পুরুষদের তুলনায় বেশি। স্থানীয়রা জানান, প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় পুরুষ ভোটারের উপস্থিতি ছিল কম।
ভোট গ্রহণ হয়েছে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নজরদারিতে। কোথাও তেমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। অথচ ভোটের আগে পৌরসভার ১৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০টিকেই ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছিল স্থানীয় প্রশাসন। এ বিষয়ে বিষয়ে ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, ‘ভোট গ্রহণের জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। নির্বাচনী আইনের লঙ্ঘন সহ্য করা হবে না বলে প্রার্থীদের জানিয়ে দেওয়া হয়। প্রার্থী ও সাধারণ ভোটারদের সহযোগিতায় শান্তিপূর্ণ ও দৃষ্টান্তমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হয়েছে।’
পালপাড়ার বাসিন্দা প্রাণতোষ পাল বলেন, ‘সুষ্ঠুভাবে ভোট হয়েছে।
ফটিকছড়ির জন্য এ ধরনের নির্বাচন উদাহরণ হয়ে থাকবে। সন্ত্রাসের কারণে যে অতীত দুর্নাম ছিল আশা করি তাও ঘুচবে।’
ফটিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘ফটিকছড়িবাসীর প্রত্যাশার প্রতি সম্মান জানিয়ে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করায় প্রার্থীদের আন্তরিক ধন্যবাদ। গত উপজেলা নির্বাচনও একই রকম হয়েছিল। আমরা অতীত দুর্নাম ঘুচিয়ে শান্তির জনপদে পরিণত হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছি।’
বিজয়ী যাঁরা: পৌর নির্বাচনে তিনটি সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হন সেলিনা আক্তার (১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড), মোছাম্মৎ মমতাজ বেগম (৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড) এবং ফিরোজা বেগম (৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড)।
নয়টি সাধারণ কাউন্সিলর পদে এক নম্বর ওয়ার্ডে মো. ফারুক আহমদ, দুই নম্বর ওয়ার্ডে প্রদীপ কুমার রায়, তিন নম্বর ওয়ার্ডে মো. আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, চার নম্বর ওয়ার্ডে মুহাম্মদ হোসেন, পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে মো. মোজাম্মেল হক বাবুল, ছয় নম্বর ওয়ার্ডে জসিম উদ্দিন, সাত নম্বর ওয়ার্ডে নাজিম উদ্দিন, আট নম্বর ওয়ার্ডে মো. গোলাপ মওলা এবং নয় নম্বর ওয়ার্ডে মো. আবুল হাশেম নির্বাচিত হন।

No comments

Powered by Blogger.