হায় আসকারদীঘি! by প্রণব বল

আসকারদীঘির এখন মরণদশা। ব্যক্তি মালিকানাধীন ঐতিহ্যবাহী এই জলাশয়টি কৌশলে ভরাটের চেষ্টা চলছে অন্তত ১০ বছর ধরে। এর অংশ হিসেবে দিঘিটিতে ফেলা হচ্ছে গৃহস্থালীর আবর্জনা, পাথর ও বালু। এমনকি শৌচাগারের লাইন পর্যন্ত রয়েছে। আর কচুরিপানা ও আগাছার অভাব নেই।


এখন দিঘিটি দেখলে মনে হবে একটি সবুজ খেলার মাঠ। জানা গেছে, আড়াই বছর আগে এলাকাবাসী ও জলাশয় ব্যবহারকারীদের দাবির মুখে আসকারদীঘি পরিষ্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তখন কচুরিপানা ও আগাছা অপসারণ করে দিঘিটি আবার ব্যবহার উপযোগী করা হয়। কিন্তু বছর না ঘুরতেই তাতে আবার কচুরিপানার চাষবাস শুরু হয় কৌশলে।
এদিকে পুকুর উন্নয়ন আইন অনুযায়ী, পতিত হিসেবে চিহ্নিত যেকোনো পুকুর বা দিঘি প্রশাসন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অধিগ্রহণ করে তা মাছ চাষের আওতায় আনতে পারে। কিন্তু আইন থাকলেও তার কোনো প্রয়োগ নেই। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে পতিত হিসেবে পড়ে থাকা দিঘিটি কেন সরকার অধিগ্রহণ করে মাছ চাষের আওতায় নিচ্ছে না সে প্রশ্নের জবাবও নেই কারও কাছে।
অথচ ১৯৩৯ পুকুর উন্নয়ন আইনে বলা হয়েছে, বেসরকারি মালিকানাধীন পতিত হিসেবে চিহ্নিত কোনো দিঘি বা পুকুর প্রয়োজনীয় সংস্কারমূলক কাজ করে তা মাছ চাষের আওতায় আনার জন্য জেলা প্রশাসক বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুকুর মালিককে নোটিশ দেবেন। এতে আরও বলা হয়েছে, নোটিশ দেওয়ার পর যদি পুকুর মালিক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মাছ চাষ না করেন, তাহলে জেলা প্রশাসক বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট পুকুরটিকে একটি পতিত পুকুর হিসেবে ঘোষণা করে ওটা অধিগ্রহণ করবেন। কিন্তু আসকারদীঘির ক্ষেত্রে এসব কিছুই হচ্ছে না। মৎস্য অধিদপ্তর দীঘিটি সংরক্ষণের জন্য কোনো প্রস্তাব এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসনকে দেয়নি।
এ প্রসঙ্গে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রভাতী দেব বলেন, ‘প্রথমে পুকুর মালিককে নোটিশ করা হয়। তার পরও যদি তিনি তা সংস্কার না করেন সে ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন পুকুরটি কিছু সময়ের জন্য অধিগ্রহণ করে তা মাছ চাষের জন্য নিলামে দিতে পারে। আমরা আসকারদীঘি নিয়ে সে ধরনের একটি উদ্যোগ নেওয়ার প্রস্তাব জেলা প্রশাসনকে দেব।’
শুধু জেলা প্রশাসক কিংবা মৎস্য অধিদপ্তর নয়, ২০ হাজার মানুষের নিত্য ব্যবহার্য এই দিঘির দায়িত্ব নিতে চাচ্ছে না সিটি করপোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তর কিংবা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও। যার কারণে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে দিঘিটি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দিঘির চারপাশের পাড় দখল হয়ে গেছে অনেক আগেই। এখন চলছে পানির অংশ ভরাট করে তা দখলের চেষ্টা। পাড়ের ভেতরের অংশে বস্তি গড়ে উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দা বাচ্চু দেব জানান, আস্তে আস্তে দিঘিটি ভরাট করে ফেলা হচ্ছে। অথচ প্রতিদিন এই দিঘি ব্যবহার করে অন্তত ১০ হাজার মানুষ। দিঘিটি সংস্কারের বিষয়ে সিটি করপোরেশন কিছুই করছে না। এতে করে এলাকায় মশার উপদ্রব বেড়েছে।
সিটি করপোরেশনের হেলদি ওয়ার্ড খ্যাত জামালখানের ২০০ বছরের পুরোনো এ দিঘি প্রসঙ্গে জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিজয় কুমার চৌধুরী বলেন, দিঘিটি এখন ব্যবহার অনুপযোগী। এটি সংস্কার করা গেলে আশপাশের মানুষের নিত্য ব্যবহার্য পানি সমস্যার সমাধান হতো। কিন্তু ব্যক্তিমালিকানাধীন দিঘি বিধায় করপোরেশন এটি এখন আর সংস্কার করবে না।’ এ তো গেল সিটি করপোরেশনের বিষয়। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) মহাপরিকল্পনায় আসকারদীঘিটিকে পর্যটন সুবিধা-সংবলিত একটি বিনোদন পার্ক ও উন্মুক্ত স্থান হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ওই মহাপরিকল্পনা কবে নাগাদ বাস্তবায়ন হবে সেটা সিডিএই জানে না।
পরিবেশ অধিদপ্তর মাঝেমধ্যে এই জলাশয়ের পানি পরীক্ষা করেই তাদের দায়িত্ব শেষ করে। পরীক্ষা থেকে জানা যায়, পুকুরের পানি অতিমাত্রায় দূষিত। এই পানি ব্যবহার উপযোগী নয়। এ প্রসঙ্গে অধিপ্তরের রসায়নবিদ জমির উদ্দিন বলেন, দিঘির পানি খুবই দূষিত। এই পানি ব্যবহারে নানা ধরনের রোগ হতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.