দেশের বাইরে ঈদ by কামরুজ্জামান

দেশে যেমন আত্মীয়স্বজন-প্রিয়জনদের নিয়ে নির্ভার হয়ে ঈদ উৎসব উদ্যাপন করা যায়, বিদেশের মাটিতে সেটা সম্ভব নয়। তাই বিদেশ-বিভুঁইয়ে ঈদ নিয়ে একেকজনের একেক ধরনের অভিজ্ঞতা, অনুভূতি। তিন জনপ্রিয় তারকার বিদেশে ঈদযাপনের অভিজ্ঞতা জেনে নেওয়া যাক।
মৌসুমী
ছবির নাম গোলাপী এখন বিলেতে। শুটিং হবে লন্ডনে। ভারতের নামি অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর শিডিউল পাওয়া গেল এমন একটা সময়ে, যখন ঈদ। কিন্তু কোনো উপায় নেই। তাঁর শিডিউল পাওয়া যাচ্ছে, এটাই বিশাল ব্যাপার। মৌসুমী, শাবনূর ও ফেরদৌস তিনজনকেই হাজির হতে হলো লন্ডনে। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত টানা কাজ করার পর তাঁদের খেয়াল হলো যে ঈদের কোনো প্রস্তুতিই নেই, কোনো কেনাকাটা করা হয়নি। একটা ভাড়াবাড়িতে সবাই মিলে থাকছেন। কাজেই কোনো ভালোমন্দ রান্না করতে চাইলে সবাই মিলেই উদ্যোগ নিতে হবে। ঠিক হলো, কাজ শেষ করে মৌসুমী, শাবনূর ও ফেরদৌস কেনাকাটায় বেরিয়ে পড়বেন। রাতে হবে ঈদের হইহুল্লোড়, আনন্দ।
তবে ঈদের দিন মৌসুমী ও শাবনূরকে চমকে দিলেন মিঠুন চক্রবর্তী। তিনি নিজ হাতে রান্না করে খাবার নিয়ে হাজির। সবাইকে নিজ হাতেই পরিবেশন করলেন মিঠুন। এ রকম একটা সুখস্মৃতির কথা মৌসুমী এখনো ভুলতে পারেননি।

শাকিব খান
কয়েক বছর হলো, বিষয়টা একরকম নিয়মে দাঁড়িয়ে গেছে। কোনো গানের শুটিং মানেই হলো শাকিবকে থাইল্যান্ডে যেতে হবে। থাইল্যান্ডের বিভিন্ন মনোরম লোকেশনে শাকিব শুটিং করেন মনের আনন্দে।
নাম্বার ওয়ান ছবির শুটিং করতে শাকিব খান এসেছেন থাইল্যান্ডের ফুকেটে। রমজান মাস সেটা। সারা দিন রোজা রেখে শুটিং করা সহজ ছিল না। তবে শুটিংটা ঈদ পর্যন্ত আর টানতে হবে না। ঈদের তিন দিন আগেই দেশে ফিরে আসবেন তাঁরা, এমনই কথা। ফিরতি ফ্লাইটের টিকিটও কাটা আছে। তাই কষ্ট হলেও রোজা রেখেই শুটিং করে যাচ্ছেন শাকিব খান। কিন্তু বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো একদিন শুটিংয়ের মাঝখানে পরিচালক মোহাম্মদ হোসেন ঘোষণা করলেন, ঈদের আগে তাঁদের ফেরা হচ্ছে না। ঈদের পরে আরও দুই দিন কাজ করতে হবে। শুটিংয়ের অগ্রগতি ভালো, কিন্তু গানের চিত্রায়ণ বাকি এবং সেটা ঈদের আগেই শেষ করা সম্ভব হবে না। মন খারাপ হয়ে গেল শাকিবের। পরিবার ছেড়ে ঈদ বাইরে কাটাতে কোনোভাবেই সায় দিচ্ছে না মন, কিন্তু ছবির স্বার্থে শেষ পর্যন্ত রাজি হলেন। বাড়তি দুই দিন কাজ করবেন যত খারাপই লাগুক। ফিরতি টিকিটের তারিখ পরিবর্তন করা হলো।
ঈদের পর শুটিংও শেষ হলো। দেশে ফেরার জন্য সবকিছু গোছাতে শুরু করলেন শাকিব। কিন্তু রাতে ঘুমাতে গিয়ে টের পেলেন, শরীর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসছে তাঁর। সকালের দিকে জ্বরের মাত্রা এতটাই বেড়ে গেল যে, বিছানা ছেড়ে ওঠাই দুষ্কর হয়ে পড়ল। অগত্যা পুরো ইউনিট শাকিবকে থাইল্যান্ডে রেখেই দেশে ফিরে এল। আর সহকারীকে নিয়ে শাকিব পড়ে রইলেন থাইল্যান্ডের হোটেলে। তবে সবাই চলে গেলেও পরিচালক রয়ে গেলেন। শাকিবকে এ অবস্থায় একলা ফেলে রেখে তিনি যেতে চাইলেন না।
দুপুরের দিকে ঘাম দিয়ে জ্বরটা ছাড়ল শাকিবের। হঠাৎ কেঁদে ফেললেন শাকিব। সেবারই প্রথমবারের মতো তিনি তাঁর মাকে ছেড়ে ঈদ করছেন। সেটা মনে পড়তেই শিশুর মতো কেঁদে ফেললেন তিনি। বিকেলের দিকে একটু ভালো বোধ করায় হোটেলের লবিতে ঘুরতে বের হলেন, সামান্য হাঁটাচলা করতেই মাথা ঘুরতে শুরু করল। অবস্থা দেখে হোটেলের লোকজন ধরে এনে তাঁকে শুইয়ে দিল বিছানায়। শাকিব বুঝতে পারছিলেন, জ্বর কমলেও তিনি সাংঘাতিক রকম দুর্বল। ডাক্তার দেখালেন। ওষুধ খাওয়ার পর পুরোপুরি জ্বরমুক্ত হতে তিন দিন লেগে গেল।
এই সময়ে ঈদের কথা মনে হতেই ভীষণ মন খারাপ করতে শুরু করল শাকিবের। কিন্তু রাতে হঠাৎ বাংলাদেশের কয়েকজন এসে হাজির। তাঁরা প্রায় জোর করেই স্থানীয় এক বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলেন তাঁকে। ওখানে সবাই মিলে বেশ হইচই করে খাওয়া হলো। দেশে ঈদ করতে না পারার মনঃকষ্ট খানিকটা হলেও দূর হলো হঠাৎ এসে হাজির হওয়া ওই কজন বাংলদেশির কারণে। একই সঙ্গে মুঠোফোনে ঈদে তাঁর মুক্তি পাওয়া সিনেমাগুলোর খবরও আসতে শুরু করে দিয়েছিল।
আরও দুই দিন পর দেশের উদ্দেশে বিমানে চাপলেন শাকিব। এরপর অবশ্য আরও দুবার দেশের বাইরে ঈদ করেছেন তিনি। কিন্তু সেসব আগে থেকেই জানা ছিল বলে মানসিক প্রস্তুতি ছিল। ব্যাংককের ঘটনাটা প্রথমবার দেশের বাইরে ঈদ করার অভিজ্ঞতা হওয়ায় এখনো মনে আছে।

মোশাররফ করিম
কয়েক বছর ধরে মোশাররফ করিম কাজ নিয়ে এতটাই ব্যস্ত সময় পার করছেন যে, তিনি ঈদের আগের দিন পর্যন্তও কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এ রকম ব্যস্ত সময়ে একবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন, যথেষ্ট হয়েছে, আর না। এবার তাঁর বিশ্রাম চাই। যেমন কথা তেমন কাজ। ১০ দিনের জন্য সব কাজ তুলে রেখে দেশ ছাড়লেন মোশাররফ। চলে এলেন লন্ডনে।
লন্ডনে এসে বেশ কিছু বন্ধুবান্ধবও পেয়ে গেলেন মোশাররফ। ১০ দিনের জায়গায় থাকলেন ২৮ দিন। তখন সামনেই ঈদ। সিদ্ধান্ত নিলেন, দেশে না ফিরে লন্ডনেই ঈদ করবেন।
‘দেশের বাইরে সম্ভবত ওটাই ছিল আমার প্রথম ঈদ। সকালবেলাটা আমার কাছে মনে হয়েছে আর দশটা সাধারণ দিনের মতোই। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আনাগোনা বেড়ে গেল। কিন্তু হলে কী হবে! সবকিছু থেকেও আমার কাছে মনে হলো কী যেন নেই। মনটা হঠাৎ খারাপ লাগতে শুরু করল। ঈদের দিনে বাংলাদেশের বাতাসে যে একটা উৎসবের গন্ধ থাকে, সেটা এখানে একদম নেই। দুপুরের দিকে এসে আফসোস হতে লাগল, কোন আক্কেলে আমি লন্ডনে থাকতে গেলাম! বিকেলের দিকে মন খারাপ করে যখন বাইরে বের হলাম, তখন দেখি বাংলাদেশিরা আনন্দে মেতে উঠেছে। ক্যাসেটপ্লেয়ারে বাংলা গান বাজাচ্ছে। মনটা ভরে গেল। সেদিনের ক্ষণিকের সেই আনন্দ আমি আজও খুঁজে ফিরি।’ বিদেশের মাটিতে ঈদের অভিজ্ঞতা স্মরণ করতে গিয়ে বলছিলেন মোশাররফ করিম।

No comments

Powered by Blogger.